রাজনীতি

অসুস্থ ছিলাম, দলের কেউ খোঁজ নেয়নি: রওশন

থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা নিয়ে ছয় মাস পর দেশে ফেরা বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার দল জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, অসুস্থতার এই সময়ে দলীয় নেতাদের কেউ তার খবর নেননি। আর প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিও এলোমেলো হয়ে পড়েছে।

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এখন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদে আছেন। দলটির চেয়ারম্যানের পদে আছেন জি এম কাদের, তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা।

তিন বছর আগে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুর পর দলে কর্তৃত্ব নিয়ে দেবর-ভাবি কাদের ও রওশনের বিরোধ দেখা দিয়েছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয়।

ফুসফুসের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) টানা ৮৪ দিন থাকার পর গত বছর থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী রওশন।

দেশে ফিরেছেন রওশন

ছয় মাস পর দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর শনিবার ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আসেন তিনি।

এই সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতাদের কেউ ছিল না।

রওশন বলেন, “দীর্ঘ ছয় মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি আমার। আমি সবার খোঁজ নিয়েছি।”

তবে হালে দল থেকে যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তারা খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

“যাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছে।”

দল পরিচালনায় স্বামী এরশাদের অনুপস্থিতির অভাবে অনুভব করছেন বলে জানান রওশন।

“আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। উনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো। উনি নেই, তাই জাতীয় পার্টি আজ এলোমেলো হয়ে গেছে।”

দেশে ফেরার পর ছেলের সঙ্গে রওশন এরশাদ।দেশে ফেরার পর ছেলের সঙ্গে রওশন এরশাদ।

দলছাড়া যারা হয়েছেন, তাদের ফেরত আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে, তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুবা আমরা অনেক পিছিয়ে যাব।”

“নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে। নতুবা রাজনীতির টিকে থাকতে পারব না।”

এই বয়সেও দলকে সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রওশন বলেন, “পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করার দরকার তাই করব। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে।

“বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা দেখে আমার দু’চোখে জল এসে এসে গেছে।”

মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, “আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি (রওশন) যখন অসুস্থ, তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তারপরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ ফুর্তি করেছে।”

রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় তার ছেলে সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবি জানান মামুন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মিলন,দেলোয়ার হোসেন খান, জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু।

রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ), রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, হাবিবুল্লাহ বেলালী, সভাপতমিণ্ডলীর সাবেক সদস্য এমএ সাত্তার সভায় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *