তীব্র বায়ুদূষণের কারণে ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়াল পুরু কালো আস্তরণে ঢাকা পড়ছে- বলছেন গবেষকরা।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে সেখানকার ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়ালে ‘কালো আস্তরণ’ তৈরি হয়েছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, লাল বেলেপাথরের এই দূর্গের দেয়ালের সঙ্গে দূষিত পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমে যাওয়া আস্তরণ ০ দশমিক ০৫ মিলিমিটার থেকে ০ দশমিক ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু।
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক কেল্লাটির সূক্ষ্ম নকশা ও খোদাই করা কাজ নষ্ট হতে পারে। বিবিসি জানায়, সপ্তদশ শতকে নির্মিত লালকেল্লার ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে এটিই এ ধরনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির বায়ুর মানের অবনতি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়, বিশেষ করে শীতকালে।
সংরক্ষণবিদরা বরাবরই সতর্ক করে এসেছেন যে, রাজধানীসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত সপ্তদশ শতাদ্বীর বিখ্যাত সমাধি তাজমহল বায়ু ও পানিদূষণের কারণে হলদে এবং সবুজাভ-বাদামি হয়ে গেছে।
উত্তর প্রদেশ সরকারকে তাজমহল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নিতে বলেছিল আদালত। এবার লালকেল্লা নিয়ে গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ করে বিজ্ঞান সম্পর্কিত জার্নাল ‘হেরিটেজ’-এ প্রকাশ করা হয়েছে জুনে।
২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারত ও ইতালির গবেষকরা এ গবেষণা পরিচালনা করেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত লালকেল্লা দিল্লির অন্যতম আইকনিক স্থাপনা ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।
ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের একদিন পর ১৯৪৭ সালের ১৬ অগাস্টে তৎকালীন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই দূর্গ থেকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
তখন থেকেই স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে ভাষণ দিয়ে আসছেন। বিবিসি জানায়, গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।
এরপর তারা কেল্লার বিভিন্ন দেয়াল থেকে কালো আস্তরণ সরিয়ে নিয়ে এর রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেছেন।
তারা দেখতে পান, বাতাসে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষক লাল কেল্লার দেয়ালে কালো আস্তরণ তৈরি করেছে এবং এর গম্বুজ, খিলান ও পাথরে সূক্ষ্ম খোদাই করা কাজগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
গবেষকরা দেয়ালে ফোস্কা ওঠা ও দেয়ালের রঙের স্তর আলগা হয়ে যাওয়ারও প্রমাণ পেয়েছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ (বায়ু দূষণকারী সূক্ষ্ম কণার ধরন) সাধারণত কোনও পৃষ্ঠতলে ধূলিকণা জমার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি তখনই হয় যখন এই সূক্ষ্ম কণাগুলো স্থির হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক জায়গায় জমতে থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এই কণাগুলো পরে সেই পৃষ্ঠতলে দৃশ্যমান হয় কালচে রঙে। গবেষকরা লাল কেল্লা রক্ষায় সময়মতো সংরক্ষণ কৌশল বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
তারা বলছেন, “কালো আস্তরণ জমা একটি ধীরে অগ্রসরমান প্রক্রিয়া, যা সাধারনত প্রথমদিকে পাতলা কালো স্তর হিসেবে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব।”
তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, পাথরের সুরক্ষামূলক আবরণ বা সিল্যান্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোতে প্রয়োগ করে এই কালো আস্তরণ জমা ঠেকানো বা এর গতি ধীর করে দেওয়া যেতে পারে।