জাতীয়

শিশু আয়াতকে ছয় টুকরো করে সাগরে নিক্ষেপ

নগরীতে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত ৫ বছরের শিশুকে ছয় টুকরো করে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নির্মমতার শিকার শিশুটির নাম আলিনা ইসলাম আয়াত। সে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। আয়াত স্থানীয় একটি নুরানি মাদ্রাসার হেফজ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাদের বাসার পুরোনো ভাড়াটে আবীর আলী (১৯) মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করেছিল। অপহরণের পর শিশুটি কান্না করতে থাকায় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে হত্যা করে আবীর। পরে লাশ ছয় টুকরো করে ব্যাগে ভরে সাগরে ফেলে দেয়।

১৫ নভেম্বর শিশুটি নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে ইপিজেড থানায় জিডি করা হয়। এরপরও তার সন্ধান মিলছিল না। ছায়াতদন্তে নেমে নিখোঁজের প্রায় ১০ দিন পর শুক্রবার সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আবীর আলীকে গ্রেফতার করলে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবীর মুক্তিপণের জন্য শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ইনস্পেকটর ইলিয়াস খান। পিবিআই-এর তদন্ত দল হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ছোরাসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করলেও সাগরে ফেলে দেওয়া লাশের টুকরোগুলোর সন্ধান পায়নি।

পিবিআই সূত্র জানায়, আয়াতের বাবা সোহেলের নয়াহাট এলাকায় তিনতলা একটি ভবন রয়েছে। পেশায় মুদির দোকানদার। আয়াত নিখোঁজ হওয়ার দিন সর্বশেষ আয়াতকে কোলে নিয়েছিল আবীর। এ কারণে আয়াতের পরিবার আবীরকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু সে জড়িত-এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তদন্ত দল একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায় আবীর তাদের পুরোনো ভাড়া বাসা অর্থাৎ আয়াতদের বাসা থেকে একটি ব্যাগ হাতে হেঁটে যাচ্ছে। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একপর্যায়ে সে আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।

পিবিআই ইনস্পেকটর ইলিয়াস খান বলেন, আয়াতদের ভবনে আবীরের পরিবার ২১ বছর ধরে বসবাস করে আসছিল। আবীরের জন্মও সেখানে। সম্প্রতি আবীরের মা-বাবার মধ্যে সেপারেশন হয়ে গেলে সে মায়ের সঙ্গে আকমল আলী রোডের একটি ভবনে চলে যায়। অন্যদিকে আবীরের বাবা আয়াতদের ভবনেই থেকে যায়। আবীরের মা গার্মেন্ট শ্রমিক আর বাবা একটি কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ। আবীর ছিল ভবঘুরে প্রকৃতির। মায়ের সঙ্গে নতুন বাসায় চলে গেলেও পুরোনো বাসায় (আয়াতদের) তার যাতায়াত ছিল।

আবীরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের সূত্রে ইনস্পেকটর ইলিয়াস জানান, মুক্তিপণের জন্য আবীর শিশু আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। অপহরণের পর সে আগের বাসায় নিয়ে রাখে। কিন্তু শিশুটি চিৎকার দিতে থাকলে একপর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর লাশ একটি ব্যাগে ভরে আকমল আলী রোডের নতুন বাসায় নিয়ে যায়। একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে এনে নতুন বাসায় শিশুর লাশ ছয় টুকরো করে পরদিন সকালে তিন টুকরো ও রাতে বাকি তিন টুকরো বেড়িবাঁধসংলগ্ন সাগরে স্রোতের মধ্যে ফেলে দেয়। যেখানে ফেলেছে, সেই জায়গাগুলো আমরা তার দেওয়া তথ্যে চিহ্নিত করেছি। কিন্তু পানিতে ফেলে দেওয়ার কারণে টুকরোগুলো উদ্ধার করা যায়নি। হয়তো স্রোতের টানে ভেসে গেছে।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তা আরও জানান, টুকরো লাশ উদ্ধার না হলেও হত্যাকাণ্ডের কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। যে ছুরি দিয়ে লাশ টুকরো করা হয়েছে, সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। যে দোকান থেকে ছুরি কিনেছে, সেই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। দোকানদার তাকে শনাক্ত করেছে। পলিথিন ও স্কচটেপও যেখান থেকে নিয়েছে, তা শনাক্ত করা গেছে। খুনের পারিপার্শ্বিক প্রায় সব আলামতই পাওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *