আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এই ঘোষণা চার বছরে আগের।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, পত্রিকায় লেখা হয়েছে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের মুখোমুখি। তবে হেডলাইন লেখা উচিত ছিল, ফিলিস্তিন বাংলাদেশের মুখোমুখি। কেননা চার বছর আগে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ছিলো সাইপ্রাসের। তবে ফিলিস্তিন অনেক পরে এতে যোগ দেয়। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। যোগাযোগ করাটা স্বাভাবিক ছিল।

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি যৌথ আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কাতারে খুবই অপ্রত্যাশিভাবে ইসরায়েল একটি হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। তবে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকদের মেরে ফেলা খুবই অদ্ভুত বিষয়।

তিনি আরও বলেন, সমঝোতার লক্ষ্যে যে আলোচনা, সেখানে আলোচকদের মেরে ফেললে আলোচনা হবে কী করে। আর সেখানে সেই ঘটনাই ঘটেছে। কাতারে আমাদের মূল আলোচনা ছিল, এ ঘটনায় কাতারের প্রতি সমর্থন ও সমবেদনা জানানো। আর ইসরায়েল যে গর্হিত কাজ করেছে তার নিন্দা জানানো। সেটাই আমরা করেছি।

আন্তর্জাতিক

তীব্র বায়ুদূষণের কারণে ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়াল পুরু কালো আস্তরণে ঢাকা পড়ছে- বলছেন গবেষকরা।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে সেখানকার ঐতিহাসিক মুঘল আমলের দূর্গ লালকেল্লার দেয়ালে ‘কালো আস্তরণ’ তৈরি হয়েছে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, লাল বেলেপাথরের এই দূর্গের দেয়ালের সঙ্গে দূষিত পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমে যাওয়া আস্তরণ ০ দশমিক ০৫ মিলিমিটার থেকে ০ দশমিক ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত পুরু।

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক কেল্লাটির সূক্ষ্ম নকশা ও খোদাই করা কাজ নষ্ট হতে পারে। বিবিসি জানায়, সপ্তদশ শতকে নির্মিত লালকেল্লার ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে এটিই এ ধরনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম দিল্লির বায়ুর মানের অবনতি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়, বিশেষ করে শীতকালে।

সংরক্ষণবিদরা বরাবরই সতর্ক করে এসেছেন যে, রাজধানীসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত সপ্তদশ শতাদ্বীর বিখ্যাত সমাধি তাজমহল বায়ু ও পানিদূষণের কারণে হলদে এবং সবুজাভ-বাদামি হয়ে গেছে।

উত্তর প্রদেশ সরকারকে তাজমহল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নিতে বলেছিল আদালত। এবার লালকেল্লা নিয়ে গবেষণাটি পিয়ার-রিভিউ করে বিজ্ঞান সম্পর্কিত জার্নাল ‘হেরিটেজ’-এ প্রকাশ করা হয়েছে জুনে।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারত ও ইতালির গবেষকরা এ গবেষণা পরিচালনা করেন। মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত লালকেল্লা দিল্লির অন্যতম আইকনিক স্থাপনা ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের একদিন পর ১৯৪৭ সালের ১৬ অগাস্টে তৎকালীন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই দূর্গ থেকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

তখন থেকেই স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা লাল কেল্লার প্রাচীর থেকে ভাষণ দিয়ে আসছেন। বিবিসি জানায়, গবেষকরা ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।

এরপর তারা কেল্লার বিভিন্ন দেয়াল থেকে কালো আস্তরণ সরিয়ে নিয়ে এর রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেছেন।

তারা দেখতে পান, বাতাসে থাকা সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষক লাল কেল্লার দেয়ালে কালো আস্তরণ তৈরি করেছে এবং এর গম্বুজ, খিলান ও পাথরে সূক্ষ্ম খোদাই করা কাজগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

গবেষকরা দেয়ালে ফোস্কা ওঠা ও দেয়ালের রঙের স্তর আলগা হয়ে যাওয়ারও প্রমাণ পেয়েছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ (বায়ু দূষণকারী সূক্ষ্ম কণার ধরন) সাধারণত কোনও পৃষ্ঠতলে ধূলিকণা জমার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি তখনই হয় যখন এই সূক্ষ্ম কণাগুলো স্থির হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক জায়গায় জমতে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা এই কণাগুলো পরে সেই পৃষ্ঠতলে দৃশ্যমান হয় কালচে রঙে। গবেষকরা লাল কেল্লা রক্ষায় সময়মতো সংরক্ষণ কৌশল বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।

তারা বলছেন, “কালো আস্তরণ জমা একটি ধীরে অগ্রসরমান প্রক্রিয়া, যা সাধারনত প্রথমদিকে পাতলা কালো স্তর হিসেবে শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব।”

তারা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, পাথরের সুরক্ষামূলক আবরণ বা সিল্যান্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোতে প্রয়োগ করে এই কালো আস্তরণ জমা ঠেকানো বা এর গতি ধীর করে দেওয়া যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক

বিদেশে ব্যালট পাঠানো এবং বিদেশ থেকে আনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করেছে নির্বাচন কমিশন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটে আনতে নির্বাচন কমিশন বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা সাজালেও তাতে সাড়া কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় আছে বিশেষজ্ঞদের।

ইতোমধ্যে নতুন অ্যাপ তৈরিসহ পদ্ধতি উন্নয়নে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিদেশে ব্যালট পাঠানো এবং বিদেশ থেকে আনাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করেছে নির্বাচন কমিশন।

এর বাইরে প্রবাসে এনআইডি সেবা দিতে বাংলাদেশ মিশনে যন্ত্রপাতি স্থাপন, প্রশিক্ষণ, ইসি কর্মকর্তাদের আসা যাওয়ার ব্যয় তো আছেই।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলছেন, ডাকযোগে ভোট নিতে যে খরচ, সেই তুলনায় ভোটদানের হার বেশিরভাগ দেশেই খুব কম হয়। তারপরও দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা বিবেচনা করে তাদের ভোটের সুযোগ দেওয়া ‘জরুরি’।

প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি ডাকযোগে তাদের ভোট নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে জোরেশোরে প্রচারে নেমেছে নির্বাচন কমিশন।

ছয় মাস ধরে বেশ কয়েকটি দেশে ভোটার নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও কারিগরি টিম সঙ্গে নিয়ে নানা দেশ সফর সূচি রয়েছে।

এনআইডি সেবার সার্বিক কাজে এনআইডি সংক্রান্ত আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্প থেকেই ব্যয় হচ্ছে সিংহভাগ অর্থ। ভোটের জন্য নিবন্ধনে ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ আসছে। আর ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে প্রবাসে আনা নেওয়ায় ব্যয় প্রাক্কলনের কাজ চলছে।

প্রবাসে এনআইডি সেবা শুরুর পর প্রশাসনিক ও কারিগরি টিমের সঙ্গে ইসি কর্মকর্তাদের যেতে হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, জাপান, কানাডা, ইতালি, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে। কিছু কর্মকর্তা একাধিক দেশেও গেছেন।

অক্টোবরে চার সদস্যের কারিগরি টিম ও দুই সদস্যের প্রশাসনিক টিম করে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মালদ্বীপ ও জর্ডানে যাওয়ার কথা রয়েছে।

সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বর্তমানে কানাডায় এবং নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় রয়েছেন উদ্বোধনের কাজে। আইডিইএ প্রকল্প থেকে পর্যায়ক্রমে সব কমিশনারকে প্রবাসে এনআইডি সেবা চালু ও ভোট ব্যবস্থার কাজে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “ইতোমধ্যে আরপিওতে প্রবাসী ভোটিং পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে; এটা নিয়ে গাইড লাইন দেওয়া হবে। মার্কাসহ ব্যালট পাঠানো হবে তাদের কাছে।

“প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিংয়ের বিষয়ে আমরা সবাই উদ্যোগী, সচেতন। এজন্য ব্যাপক সচেতনতা ও প্রচার দরকার।”

ইসি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা’ বজায় রেখেই ব্যয় নির্বাহ করার কথা বলেছেন এ নির্বাচন কমিশনার।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক লাখ প্রবাসীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের কথা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছে ইসি। ইতোমধ্যে ১০টি দেশের ১৭টি মিশনে অর্ধ লাখ আবেদন জমা পড়েছে; যার মধ্যে নিবন্ধন সেরেছেন ৩০ হাজারের মত, আর ভোটার হয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার।

খরচ কত?

পোস্টাল ভোটিংয়ে কত খরচ হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো হিসাব এখনো নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।

তবে পোস্টাল ভোটিং সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও পরামর্শক সালিম আহমাদ খান এর আগে বিডনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, প্রায় ১০ লাখ প্রবাসীকে পোস্টাল ভোটিংয়ে আনার লক্ষ্য ধরে তারা কাজ করছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যয়ের বিষয়টি নির্ভর করবে ব্যালট আনা-নেওয়ায় ডাক বিভাগ শেষ পর্যন্ত কত খরচের প্রস্তাব রাখবে এবং কতজন ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করবেন, তার ওপর।

৮ থেকে ১০ লাখ প্রবাসীর যদি ভোট দিতে চান, তাহলে সব মিলিয়ে ৪০০ কোটি টাকার মত ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

গেল জুন মাসে ডাক বিভাগ বলেছিল, ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে।

পরে ৭ অগাস্ট নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, “শুধু একটা পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়া করতে গড়ে লাগবে আনুমানিক ৫০০ টাকা। এর বাইরেও ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হবে। সে হিসাবে প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য ছয় থেকে সাত কোটি টাকা লাগবে।

সম্ভাবনা কতটা?

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, “ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী ভোটার রয়েছে, যাদের ব্যাপক অবদান রয়েছে দেশ গঠনে, অর্থনীতিতে এবং জুলাই আন্দোলনেও ভূমিকা ছিল। তাদের ভোটের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

“শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় প্রবাসী ভোটিংয়ের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এটার রিটার্ন বা ভোটার টার্নআউট খুব কম। হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে (প্রবাসী ভোটিংয়ের) এভারেজ টার্নআউট ৩ শতাংশের বেশি হয় না।”

তিনি বলেন, ভারতেরও বিপুল সংখ্যক ভোটার দেশের বাইরে থাকে। তাদের টার্নআউটও ৩ শতাংশের বেশি হয় না।

“এত অর্থ ব্যয় করে ৩-৫% ভোট দিলেও প্রবাসীদের অবদানের কথা বিবেচনা করে ভোটিং নিশ্চিত করা জরুরি।”

আব্দুল আলীম বলেন, “আমি জানি না, অনুমান করছি- নির্বাচন কমিশন বিধির বাইরে গিয়ে কোনো ব্যয় করতে পারবে না; তারা যেভাবে বিদেশে গেলে পারডিয়াম (পারিতোষিক) পায়, এর বাইরে পাওয়ার সুযোগ নেই। সেটা অনুসরণ করেই কাজটা করছেন।

“সচেতনতা ছাড়া প্রবাসী ভোটিংয়ের কাজটা সম্ভবও না। কীভাবে ব্যালট যাবে, ভোট দেবে-পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ভোটার অ্যান্ড সিভিক এডুকেশন দরকার। এর বিকল্প নেই।”

সচেতনতার কাজে প্রবাসে কিছু সংগঠনকেও কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন এ বিশ্লেষক। তিনি মনে করেন, ইসির বিভিন্ন টিমের বিদেশ ভ্রমণকে ‘ভ্রমণ বিলাস’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।

“আমার মনে হয় না এটা (ভ্রমণ বিলাস)। অর্থব্যয় হলেও প্রবাসী ভোটিং নিশ্চিত করা জরুরি। নিশ্চয় বর্তমান ইসি গত তিনটি নির্বাচন (থেকে শিক্ষা নেবে)।”

বর্তমানে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়নি।

আব্দুল আলীমের ভাষ্য, একাদশ-দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের কিছু সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন ইসি কর্মকর্তারা। যদিও প্রবাসী ভোটিংয়ে তেমন সফলতা আনতে পারেননি তারা।

“নিশ্চয় ইসির কাছে সে লার্নিংটাও আছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এ কাজটা করবে। এখন মানুষের চোখ ইসির প্রতি, নির্বাচনের প্রতি। কমিশন কী করছে–মানুষ দেখছে। প্রবাসী ভোটিং নিশ্চিত করার জন্যই এখন সব উদ্যোগ হচ্ছে।”

ছয় বছর আগে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এনআইডি সেবা দিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তার চার বছরের মাথায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এনআইডি সেবা চালু হয় আরেক ইসির আমলে।

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন সেই দুই ইসির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারাবন্দি; তাদের আমলের ভোটে অনিয়ম ও ইভিএম কেনাকাটা নিয়ে চলছে তদন্ত। এর মধ্যে ইভিএম বাদ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান ইসির তৎপরতা

প্রবাসে এনআইডি সেবা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট নিয়ে মতবিনিময় সভা করতে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন সেপ্টেম্বরের শুরুতে কানাডা সফর করেছেন। টরন্টো ও অটোয়ায় বাংলাদেশ মিশনে প্রবাসীদের স্মার্টকার্ড সেবা চালু করেছেন তিনি। লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন তার সফরসঙ্গী।

ইসির এনআইডি সংক্রান্ত আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসে টু সার্ভিস (আইডিইএ) প্রকল্প-২ এ সফরের ব্যয়ভার বহন করে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার মালয়েশিয়া সফরে থাকছেন ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর। তিনি সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও এআইডি বিতরণ কাজের উদ্বোধন করেছেন।

আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটিং বিষয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্মকর্তা ও কমিউনিটির সঙ্গে জনসচেনতামূলক সভা করেছেন আনোয়ারুল। তার সফরসঙ্গী হয়েছেন রাজবাড়ী জেলা নির্বাচন অফিসার।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ফ্রান্স সফর করবেন ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর।

ব্ল্যাঙ্ক স্মার্ট কার্ডের প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) বিষয়ে এ সফর হচ্ছে। তার সঙ্গে থাকবেন আইডিইএ প্রকল্প (পর্ব ২) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

এ সফরে পিএসআইয়ের পাশাপাশি ফ্রান্সের বাংলাদেশ মিশন অফিসে প্রবাসী ভোটিং (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং-ওসিভি) নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সভা করার কথা রয়েছে।

এরপর ১৫-১৬ অক্টোবর সুইডেন যাবেন এ নির্বাচন কমিশনার। সেখানে ‘এক্সপার্ট মিটিং অন দ্য প্রটেকটিং ইলেকশন প্রজেক্ট’ এ অংশ নেবেন এবং স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে ওসিভি নিয়ে সভা করবেন।

এনআইডি সেবায় সম্পৃক্ত দূতাবাস সংশ্লিষ্ট জনবলকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের বিষয়ে ইসির নিজস্ব দল (কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম) সহযোগিতা করে থাকে।

কোন দেশে প্রবাসীদের জন্য কী উদ্যোগ চলছে

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২০২৩ সালের মে মাসে দুবাই ও আবুধাবিতে প্রশাসনিক ও কারিগরি টিম যায়। নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে জুলাইয়ে যায় উদ্বোধনী টিম।

সৌদি আরব: ২০২৩ সালের অক্টোবরে রিয়াদ ও জেদ্দায় যায় প্রশাসনিক ও টেকনিক্যাল টিম। নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যায় উদ্বোধনী টিম।

ইতালি: ২০২৩ সালের অক্টোবরে রোম ও মিলানে যায় প্রশানিক ও কারিগরি টিম। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনআইডি সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

যুক্তরাজ্য: বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে কারিগরি টিম যায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। আর ২০২৪ সালে জুনে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

কুয়েত: ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে কুয়েত সিটিতে যায় কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম। একই বছরের মে মাসে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

কাতার: ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে দোহায় যায় কারিগরি ও প্রশাসনিক টিম। মে মাসে সেবা উদ্বোধন করেন তৎকালীন ইসি সচিব।

মালয়েশিয়া: কুয়ালালামপুরে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে প্রশাসনিক ও কারগির টিম যায়। এ বছরের সেপ্টেম্বরে সেবা উদ্বোধন করেন নির্বাচন কমিশনার।

অস্ট্রেলিয়া: এ বছরের এপ্রিলে ক্যানবেরা ও সিডনিতে ইন্সপেকশন টিম কাজ করেছেন। প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় শেষে টিমের একজন সিঙ্গাপুরেও এ সংক্রান্ত উদ্যোগ পরিদর্শন করে আসেন।

জাপান: টোকিও তে কারিগরি টিম কাজ করার পর অগাস্টে সেবা উদ্বোধন করেন ইসি সচিব।

কানাডা: এবছর এপ্রিলের শুরুতে অটোয়া ও টরেন্টোয় ৫ সদস্যের উচ্চ পযায়ের ইন্সপেকশন টিম যায়। এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে যায় ৫ সদস্যের কারিগরি ও ৬ সদস্যের প্রশাসনিক টিম। কাজ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রেও যান প্রশাসনিক টিমের একজন। অবশেষ সেপ্টেম্বরে কানাডায় এনআইডি সেবা চালু উদ্বোধন করেন সিইসি।

সামনে যেসব দেশে টিম যাবে

যুক্তরাষ্ট্র: নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসিতে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে দুই সদস্যের প্রশাসনিক টিম এবং মিয়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলসে দুজনের পৃথক টিম যাবে। এর আগে মধ্য সেপ্টেম্বরে চার শহরে মিশন সংশ্লিষ্টদের প্রযুক্তি সরঞ্জাম স্থাপন ও প্রশিক্ষণ দেবেন পৃথক কারিগরি টিম। এসব টিম চারজন করে সদস্য রয়েছেন।

>> ফ্রান্স, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মালদ্বীপ ও জর্ডানে যাওয়ার কথা রয়েছে অক্টোবরে।

কানাডায় বৃহস্পতিবার এনআইডি সেবা চালু করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এজন্য ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে।

আগ্রহী প্রবাসীরা এই অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটদানের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেন। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসনভিত্তিক ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার কাজ করবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

পুরো কাজের তত্ত্বাবধানে ডাক বিভাগ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির অ্যাডহক কমিটির হাতে, যেখানে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধি থাকবেন।

প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে (আইসিপিভি) সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং জেলে বা আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান রয়েছে।

আন্তর্জাতিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহাসিক বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন জামায়াত-ই-ইসলাম পাকিস্তানের আমির হাফিজ নাঈমুর রহমান। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।

হাফিজ নাঈমুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বড় বিজয় অর্জন করেছে। পুরো প্যানেলই বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি ঘটনা। উল্লেখযোগ্য যে, প্রতিযোগী অন্যান্য প্যানেলগুলোকে সমর্থন করেছিলো ভারতপন্থি শক্তিগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এই সাফল্যের জন্য ইসলামী ছাত্রশিবিরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ইনশাআল্লাহ, এই বিজয় কেবল শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, বরং বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তবে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘বিপর্যয়ের মধ্যেও দেশের নার্সারি অব ডেমোক্রেসি হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন তারা স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সফলভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে।’

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পোস্টটি আর ফেসবুক পেজে দেখা যায়নি। পরে হাফিজ নাঈমুর রহমানের এক্স একাউন্ট থেকেও এই পোস্ট মুছে ফেলা হয়। তবে এখনো দলটির অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে পোস্টটি দেখা যাচ্ছে।

দীর্ঘ ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা। ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।

জিএস পদে ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন এসএম ফরহাদ। তিনিও ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে লড়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এছাড়া এই পদে প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।

এজিএস পদেও বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মহিউদ্দীন খান। তিনি ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।

এছাড়া আরও ২০ পদে বিজয় লাভ করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।

ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিলেন।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ আশ্বস্ত করেছেন যে, জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যসহ নেপালে আটকে পড়া সকল বাংলাদেশি নিরাপদে আছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা ফিরে আসতে পারবেন।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যতক্ষণ না পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, ততক্ষণ আমরা কিছুই করতে পারি না। ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলেই তাদের ফিরে আসা সম্ভব হবে।”

ভারত দিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তৌহিদ বলেন, তাদের কারও কাছেই ভারতীয় ভিসা নেই। “তাই, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

উপদেষ্টা বলেন, অস্থিরতার সময় একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের জন্য হোটেল তল্লাশি করার সময় বাংলাদেশি ফুটবলারদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা তাদের বিরক্ত না করেই চলে গিয়েছিল।

অস্থিরতার মধ্যেও নেপালে বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়ে তৌহিদ বলেন, “আমাদের প্রতি তাদের কোনও নেতিবাচক মনোভাব নেই এবং আমি কোনও সংকটের আশঙ্কা করছি না।”

তিনি উলে¬খ করেন যে, কাঠমান্ডুর দূতাবাস আটকে পড়াদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। “আমরা আশা করি সবাই নিরাপদে ফিরে আসবে, তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে।”

তৌহিদ বলেন, জাতিসংঘ যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি বাফার জোনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের চেষ্টা করে, তবে বাংলাদেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাবে।

তৌহিদ বলেন, এটি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। আমরা আশা করি উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হবে এবং কেবল তখনই জাতিসংঘ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অবদানের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে, যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে চাই।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তিনি এখনও কোনও আপডেট পাননি।

তিনি আরও বলেন, “তথ্য পেলে, আমি আপনাদের জানাবো।”

আন্তর্জাতিক

সরকারের অবাধ দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নেপালে। সোমবার সকালে শুরু হওয়া দেশটির হাজারও তরুণের এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণ এক বিক্ষোভকারী অন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেতর থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জনতার আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা ইতোমধ্যে জয়ী হয়েছি।

বৃহস্পতিবার নেপালের ক্ষমতাসীন সরকার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে, দেশটির সরকারি এক নোটিশে বলা হয়েছিল, আগস্ট ২৮ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সচল সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউই আবেদন জমা দেয়নি।

গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় দেশটির সরকার। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে নিজেদের অফিস এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল।

বর্তমানে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বাস এবং পোপো লাইভ দেশটিতে নিবন্ধন করেছে। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেপালে সচল রয়েছে। এছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরির নিবন্ধনের আবেদন পর্যালোচনা করছে সরকার।

দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলেছে, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা-বিরোধী আন্দোলন থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

কাঠমান্ডুর ২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি।

ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা সরকারের এমন আচরণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।

রোববার দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এ ধরনের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে দেশটির সরকার অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহারের অভিযোগে টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করে। গত বছর নেপাল সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল। তবে আগস্টে টিকটক নেপালের আইন মানতে সম্মত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক

ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন আনল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হচ্ছে। আর এতে বড় প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের ওপর।

এ নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভারতীয়সহ সব অ-অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের তাদের নিজেদের দেশ বা বৈধ বসবাসের দেশ থেকেই ভিসার ইন্টারভিউয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো- অতীতে আবেদনকারীরা ভিসা পাওয়ার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, অর্থাৎ যেখানে অপেক্ষার সময় কম, এমন অন্য কোনো দেশ থেকে আবেদন করা- সেই পদ্ধতি বন্ধ করা।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের জারি করা এক বিবৃতি অনুযায়ী, এই নতুন ভিসার নিয়ম বিশ্বজুড়ে কার্যকর করা হবে।

কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে

এ নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সেই সব ভারতীয় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা দীর্ঘ অপেক্ষা এড়ানোর জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং জার্মানির মতো দেশ থেকে ভিসার জন্য আবেদন করেছে। এর অর্থ হলো- যেসব ভারতীয়দের দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের প্রয়োজন, তারা এখন আর বি১ (ব্যবসা) বা বি২ (পর্যটন) ভিসার জন্য বিদেশে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবে না।

এ নতুন নীতিতে এখন আর সেই বিকল্পটি অবশিষ্ট নেই, শুধুমাত্র কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে দেশগুলিতে মার্কিন সরকার নিয়মিত অ-অভিবাসী ভিসার কার্যক্রম পরিচালনা করে না, সেই সব দেশের নাগরিকরা তাদের বসবাসের দেশ ভিন্ন হলে অন্য কোনও নির্দিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে পারে। এ ক্যাটাগরিতে আফগানিস্তান, কিউবা, শাদ, রাশিয়া এবং ইরানের মতো কয়েকটি দেশের নাগরিক বা বাসিন্দারা অন্তর্ভুক্ত।

ভারতীয়দের ওপর কী প্রভাব পড়বে

পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বিধিনিষেধটি এমনিতেই বেড়ে চলা ব্যাকলগ বা কাজের জট আরও বাড়িয়ে দেবে। এই বছরের শুরুতে ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় হায়দরাবাদ এবং মুম্বাইয়ে সাড়ে তিন মাস থেকে পাঁচ মাস ছিল, কলকাতায় এটি ছিল পাঁচ মাস, আর চেন্নাইতে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় নয় মাসে।

পুরনো নিয়ম

অতীতে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, যখন আবেদনের জটের কারণে দেশের ভেতরে অপেক্ষার সময় তিন বছর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল, তখন অনেকেই অন্য দেশে গিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিত।

২০২১ সালে মহামারির পর ভ্রমণ আবার শুরু হলে, ট্রাভেল এজেন্টরা মনে করে বলেছে- কীভাবে ভারতীয়রা বি১/বি২ ভিসার ইন্টারভিউয়ের জন্য জার্মানির মতো অন্য দেশে যেত। সে সময় ভারতে বি১/বি২ ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় ছিল ১৫-২০ মাস, তাই দুই বছর আগে ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস বিশেষ করে ভারতীয় আবেদনকারীদের জন্য অঅভিবাসী ভিসার ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করেছিল।

এছাড়াও, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে একটি নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ‘ইন্টারভিউ ওয়েভার প্রোগ্রাম’ বাতিল করার পর, এখন সমস্ত অ-অভিবাসী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য সশরীরে ইন্টারভিউতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর অর্থ হল, বেশিরভাগ আবেদনকারীকে এখন মার্কিন দূতাবাস বা কনস্যুলেটে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে, যাদের আগে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন ছিল না।

এ নতুন নিয়মের ফলে এইচ, এল, এফ, এম, জে, ই, এবং ও ক্যাটাগরির ভিসাগুলি প্রভাবিত হবে। এমনকী ৭৯ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি এবং ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বিশ্ব রাজনীতিতে আর একক আধিপত্য চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চীনের বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।

পুতিন বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সবার সমান অধিকার থাকতে হবে এবং সবাইকে সমান অবস্থানে থাকতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।

তার মতে, ভারত ও চীনের মতো বড় দেশগুলোর নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও আইন রয়েছে। এসব দেশের নেতৃত্বকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা রাজনৈতিক সংকটে পড়বে।

ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে পুতিন পশ্চিমা বিশ্বকে উপনিবেশিক অতীত স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, একসময় দেশগুলোকে উপনিবেশবাদ ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করার মতো কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। এখন উপনিবেশ যুগ শেষ, তাই পশ্চিমা দেশগুলোকে বুঝতে হবে, অংশীদারদের সঙ্গে সেই সুরে আর কথা বলা যাবে না।

পুতিনের এ মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে। ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এ শুল্কের অর্ধেক ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য শাস্তি হিসেবে এবং বাকি অর্ধেক ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে।

এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের বৈঠককে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন।

নাভারোর অভিযোগ, ভারত রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে যে অর্থ দিচ্ছে, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনকে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, মোদিকে শি জিনপিং ও পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখা দুঃখজনক। আমরা আশা করি তিনি বুঝবেন, তার জায়গা আমাদের সঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হওয়া যুক্তরাষ্ট্র–ভারত সম্পর্কের ওপর হঠাৎ কঠোর শুল্ক চাপানো বড় ধাক্কা। ভারত অবশ্য রাশিয়া থেকে তেল কেনাকে বৈধ প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য’ বলেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্পের আরোপিত এই ‘দ্বিতীয় শুল’ কেবল ভারতের ওপরই পড়েছে। অথচ চীনও রাশিয়ার অন্যতম বড় তেল ক্রেতা।

আন্তর্জাতিক

ভারত ভাগ করার ডাক দিলেন অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ কথা কূটনীতিবিদ গুনথার ফেলিঙ্গার। যা নিয়ে বিতর্ক চরে। ৭৮ বছর আগে দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙা ভারত এখনও যেন এই বর্ণবাদীর চোখে একটা ‘খেলনা’। যেন, যখন ইচ্ছে হয়, তখন সেটিকে ভেঙে দেওয়া যায়! আজ, ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এটি একটি পরাশক্তি হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। এহেন ভারতকে ভাঙার বার্তা দিলেন ন্যাটোর এই কর্মকর্তা।

এর আগে রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর শুল্কের চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি ভারত। এদিকে ইউরোপ ভারতের থেকে রাশিয়ার তেল কিনছে শোধনের পর। এরই মধ্যে ফুটে উঠল ইউরোপের একাংশের সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা। গুনথার ভারতকে ধর্ম এবং জাতি ও ভাষার নিরিখে একাধিক ছোট ছোট দেশে ভেঙে দেওয়ার কথা বলেন। এ সংক্রান্ত একটি ম্যাপ তিনি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

গুনথার হলেন ন্যাটো সম্প্রসারণ কমিটিতে অস্ট্রিয়ার চেয়ারম্যান। যদিও এই তথাকথিত কমিটি ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় কোনো ভাবেই। এহেন গুনথার একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘ভারততে ভেঙে দেওয়ার ডাক দিচ্ছি আমি। নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার লোক। আমাদের মুক্ত খালিস্তানের বন্ধু চাই।’

তিনি এরপর একটি ম্যাপ পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে উত্তর ভারত গোটাটাই নাকি খালিস্তান। এছাড়া মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, বিহার, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারতের কেরল, তামিলনাড়ু সব আলদা আলাদা পতাকার রঙে সজ্জিত।

এরপর এই অস্ট্রিয়ান রাজনীতিবিদ লেখেন, ‘আজ আমি শিখ ন্যারেটিভ (এক্স হ্যান্ডেল) সঙ্গে ২ ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছি। কীভাবে খালিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, তা নিয়ে কথা হবে। ভারতকে ‘সাবেক ভারত’ করতে হবে। রাশিয়ারপন্থি স্বৈরশাসক নরেন্দ্র মোদির কবল থেকে ভারতের জনগণকে কীভাবে মুক্ত করা যায় তা নিয়ে কথা হয়েছে আমার।’

আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ন্যায়ভিত্তিক বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া ও চীন ঐক্যবদ্ধ। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চীন সফরের আগে এ মন্তব্য করেন তিনি।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, মস্কো ও বেইজিংয়ের কৌশলগত অংশীদারত্ব বৈশ্বিক অঙ্গনে এক স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং বিশ্ব রাজনীতি নতুনভাবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, বারবার আমরা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি—রাশিয়া ও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান নেয়। আমরা ন্যায়ভিত্তিক, বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা গড়তে ঐক্যবদ্ধ, যেখানে ‘গ্লোবাল মেজরিটি’র দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে।

পুতিন আরও বলেন, ইউরেশিয়ার দুই প্রধান শক্তি হিসেবে আমরা আমাদের মহাদেশ ও বৈশ্বিক পর্যায়ের হুমকি ও চ্যালেঞ্জ থেকে নিরপেক্ষ থাকতে পারি না। বিষয়টি সবসময় আমাদের দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এবারের সফর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক মস্কো সফরের ধারাবাহিকতা। ওই সফর ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে।

শি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, তিনি নিজ দেশের ইতিহাসকে সর্বোচ্চ সম্মান করেন। তিনি দৃঢ়সংকল্প নেতা, যিনি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বিক দৃষ্টি নিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষায় অবিচল। বৈশ্বিক পর্যায়ে শ্রদ্ধাশীল ও সমঅধিকারভিত্তিক সংলাপ কেমন হওয়া উচিত—শি জিনপিং তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

চীন সফর চলবে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সফরের প্রথম পর্বে তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে যোগ দেবেন পুতিন। পরে বেইজিংয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন তিনি। এসময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন পুতিন। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, ইউক্রেন যুদ্ধ ও আসন্ন বহুপাক্ষিক সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হবে।

এছাড়া সফরের ফাঁকে ইরান, ভারত, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের।