আন্তর্জাতিক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার কাছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকাস্থ থাই দূতাবাসের আরো বেশি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সক্ষমতা নেই, ফলে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশিদের দীর্ঘ বিলম্ব এবং লম্বা লাইন ধরতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে থাই প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশিরা যারা থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা অনেকে ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হন।’

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

ড. ইউনূস এসময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র সম্পর্ক এবং বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের সময় কমাতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা এক দশকেরও বেশি সময় আগে চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর চিয়াং মাইয়ের মধ্যে ফ্লাইট চালু করার সময় এয়ার এশিয়ার প্রভাবের কথা স্মরণ করেন।

বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব এই আঞ্চলিক জোটে নতুন গতিশীলতা সঞ্চার করবে।

বৈঠকের শুরুতে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এবং চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।

তিনি প্রয়াত রাজা ভূমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ডের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বীকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আলোচনার বিষয়বস্তুতে বিনিয়োগ প্রধান্য ছিল, এসময় ড. ইউনূস আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে থাই কোম্পানিগুলোকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধার্থে দুই দেশের মধ্যে রেল, সড়ক, সামুদ্রিক এবং বিমান যোগাযোগ উন্নত করার গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি পরামর্শ দেন, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশ নিতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তাব করেন উভয় দেশই যত দ্রুত সম্ভব একটি দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) তৈরির জন্য একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করবে, যাতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা যায়।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিওটিও) মামলা করেছে চীন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।

খবর বিবিসির।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। পাশাপাশি এই শুল্ক সংস্থার সদস্যদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে।

তিনি আরও বলেন, এটি একপাক্ষিক প্রভাবশালী আচরণ, যা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপদে ফেলছে। চীন এর তীব্র বিরোধিতা করছে।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের আরোপ করা ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। দেশটির এমন পদক্ষেপ বাণিজ্য সংকটকে আরও গভীর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি ২০ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ফলে মোট শুল্কের মোট হার হবে ৫৪ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানো হয়, যার মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কিছু নথিভুক্ত ঘটনায় ধর্ষণের হুমকি এবং শারীরিক যৌন নিপীড়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব হামলা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।

কিছু নারীকে বেআইনিভাবে আটক, নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়। মূলত, নারীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা এবং আন্দোলনে তাদের ভূমিকা দুর্বল করাই এসব সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনূদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্ব।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমানতালে বিভিন্ন বয়সী নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এসব নারী শিক্ষার্থীর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হামলা করেছিল ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা। নারীদের ওপর এমন অনেক সহিংসতার বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বিক্ষোভের প্রথম দিকে অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন, এর মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকিও ছিল। কিছু নথিভুক্ত ঘটনা অনুসারে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যৌন নির্যাতনও চালিয়েছেন। ওএইচসিএইচআর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা হিসেবে যৌনসহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি সম্পর্কিত অভিযোগও পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য কম জানানোর যে চর্চা তার পরিপ্রেক্ষিতে ওএইচসিএইচআর মনে করে যে, তাদের পক্ষে যৌন সহিংসতার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের ঘটনার পুরো বিস্তৃতি নির্ধারণ করতে এবং এর প্রভাব অনুসন্ধানে আগামীদিনে এর গভীর তদন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভিকটিমদের যেন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সময়কালে সংঘটিত এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের একটি পরিকল্পিত ও বিস্তৃত দমননীতির প্রমাণ দেয়। এর মধ্যে বেআইনিভাবে শক্তি প্রয়োগ, চিকিৎসাসেবায় বাধা দেওয়া, বেআইনি গ্রেপ্তার, বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না; বরং আন্দোলন দমন, জনগণকে ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক বিরোধীদের সংগঠিত হয়ে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ঠেকানোর সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ ছিল।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী বিক্ষোভকারীরা সরকারি নিরাপত্তাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় এবং কুমিল্লা, সাভার, সিলেট ও রংপুরের মতো শহরেও নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। উপরন্তু নারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়।

সহিংসতা চালানোর সময় নারীদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হতো সে বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, নারী বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার সময় হামলাকারীরা মুখ, বুক, তলপেট ও নিতম্বের মতো নির্দিষ্ট অঙ্গগুলোর ওপর আঘাত করে, যা শুধু শারীরিক যন্ত্রণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। এসব হামলার সময় নারীদের উদ্দেশ করে (অপ্রকাশযোগ্য গালি) ইত্যাদি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগ/ছাত্রলীগের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা নারীদের ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্ন করা এবং অন্যান্য যৌন সহিংসতার হুমকি দেন।

ওএইচসিএইচআর বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আওয়ামী লীগের লোকদের চালানো যৌন সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলেছে, আগস্টের শুরুতে ঢাকায় এক ঘটনায়, বাঁশের লাঠি হাতে একদল ব্যক্তি এক নারীকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি বিক্ষোভকারী কি না। তার ব্যাগ ও মোবাইল ফোন তল্লাশি করে তারা বাংলাদেশি পতাকা খুঁজে পেলে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। তারা তার চুল টেনে ছিঁড়ে, শার্ট ছিঁড়ে ফেলে, এবং বুকে ও নিতম্বে হাত দেয়, পাশাপাশি তার বুকে আঁচড় দেয় ও যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্য ছোড়ে। জুলাই মাসে ঢাকায় অন্য এক ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী এক নারী বিক্ষোভকারীকে, তার মা-সহ পরিবারের সব নারী সদস্যকে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করে, যার মধ্যে ছিল বুকে ও যৌনাঙ্গে হাত দেওয়া এবং অশ্লীল মন্তব্য করা। ঘটনার পর ওই নারী ফোনে ধর্ষণের হুমকি পেতে থাকেন, যা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন যে, ছাত্রলীগ সমর্থকরা কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছিত করে, যার মধ্যে দুজন ছাত্রীও আছে, যাদের তারা আটক করে শরীরে অযাচিত হাত দেয় এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

তবে সামাজিক কারণে সহিংসতার শিকার নারীরা তা প্রকাশ করতে আগ্রহী হন না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীরা প্রায়শই অভিযোগ জানাতে অনাগ্রহী থাকেন। কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিকার ব্যবস্থা না থাকা, প্রতিশোধের ভয় (বিশেষ করে অপরাধীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে) এবং সামাজিক কলঙ্ক নিয়ে আশঙ্কার কারণে তারা অভিযোগ করতে চান না। ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, মনোসামাজিক সহায়তা ও আইনি সেবা পান না। যারা অভিযোগ করতে ইচ্ছুক তাদেরও যথাযথ সুরক্ষা, সম্মান ও স্বনির্ভরতা দেওয়া হয় না।

ওএইচসিএইচআরের মতে, নথিভুক্ত ঘটনাগুলোর চেয়ে বাস্তবে আরও অনেক বেশি সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আরও গভীর ও লিঙ্গ-সংবেদনশীল তদন্ত পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।

আন্তর্জাতিক

অবশেষে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী এবং প্রায় চৌদিক বেষ্টন করে থাকা ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা, দেনাপাওনা ও লেনদেন সবচে’ বেশি। বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান গায়ের জোরে নয়, আলোচনায় চায়। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা রেজিমের সঙ্গে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ ছিল ভারত। সে সম্পর্ক অধীনতামূলক মিত্রতা বলে সমালোচিত ছিল। ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা এখনো ভারতেই আশ্রিত এবং এই পটপরিবর্তনকে মন থেকে মানতে পারেনি ভারতের মোদি সরকার।

বাংলাদেশ তার নোবেল লরিয়েট সরকার প্রধানের সঙ্গে মোদিকে একটা বৈঠকে বসাতে গোড়া থেকেই জোর দেনদরবার ও কূটনীতি চালিয়ে এসেছে। আট মাসের মাথায় সে চেষ্টা ফলবতী হলো। মুখ না দেখতে গোঁ ধরা সিদ্ধান্ত পালটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে ব্যাংককে বিমসটেক সামিটের সাইডলাইনে প্রায় পৌনে এক ঘন্টার বৈঠক করলেন তার বাংলাদেশি কাউন্টারপার্ট এর সঙ্গে। এই শীর্ষ সম্মেলনেই বাংলাদেশের ইউনূস বিমসটেক এর চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কোষ্ঠকাঠিন্য চেহারা নিয়ে থাকা ভারত-পক্ষকে বৈঠকে বেশ সৌজন্যময় মনে হয়েছে। মিটিংয়ের ভেন্যুতে ড. ইউনূস গিয়ে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকেই মোতায়েন থাকা পুরো ভারতীয় টিম দাঁড়িয়ে সসম্মানে তাঁকে বরণ করে নেন।

এই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে চটজলদি কোনো মতামত না দিয়ে আমি শুধু প্রাপ্ত বিবরণটুকুই পেশ করতে চাই এ লেখায়। ড. ইউনূস বিমসটেকের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং সদ্য বিগত ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নয়াদিল্লি সব সময় প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাবে। নয়াদিল্লি সব সময় ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকেই দু’দেশের ইতিহাস জটিল গ্রন্থিতে আবদ্ধ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দলকে ভারত সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে জনগণের সঙ্গে জনগণের।

দুই নেতার মধ্যকার প্রথম এ বৈঠকে ড. ইউনূসও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অতি মূল্যবান মনে করে বলে উল্লেখ করেন। অভিন্ন ইতিহাসের শরিকানা, ভৌগলিক নৈকট্য ও সাংস্কৃতিক কুটুম্বিতার মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে দু’দেশের গভীর বন্ধুত্ব। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার জন্যও তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাবলীর কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এ সম্পর্ককে সঠিক খাতে ফিরিয়ে আনতে আমরা একত্রে কাজ করতে চাই।

বিমসটেকের সাত সদস্য দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে ভারতের সমর্থন কামনা করেন ড. ইউনূস। তিনি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি সম্পাদনেরও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের অনুরোধের ব্যাপারে কদ্দুর কী হলো তাও ড. ইউনূস জানতে চান নরেন্দ্র মোদির কাছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে উত্তেজনাকর কথা বলছেন এবং বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এসব কার্যকলাপের মাধ্যমে তিনি ভারত তাকে যে আশ্রয় দিয়েছে সেই সুযোগের অপব্যবহার করছেন। হাসিনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ একটানা করেই চলেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, ভারতে বসে বাংলাদেশে হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী প্রচারণা চালানো থেকে হাসিনাকে বিরত করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান দমনে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের লোকদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, তাদের হিসেবেই ১৪শ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যার ১৩ শতাংশ শিশু। সে সময় খুন, নির্যাতনসহ মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘ রিপোর্টেই বলা হয়েছে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতাদের আটক করে তাদেরকে খুনের পর লাশ গুম করে ফেলতে।

হাসিনার মন্তব্যের ভিত্তিতে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়।

ড. ইউনূস সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে এ হত্যা বন্ধে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। মোদি বলেন, ভারতের সীমান্তরক্ষীরা আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়ে গুলি চালায় এবং হতাহতের ঘটনাগুলো ভারতীয় সীমানার ভেতরেই ঘটে থাকে। তবে তিনি সীমান্তে হত্যার ঘটনা হ্রাসে একত্রে কাজ করতে সম্মতি জানান।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে প্রচারিত সংবাদ অনেকটাই অতিরঞ্জিত। এ ছাড়া একেবারে ভুয়া সংবাদও ছড়ানো হচ্ছে। তিনি সাংবাদিক পাঠিয়ে সরেজমিনে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান ভারতীয় নেতাদের প্রতি। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নারী নিবর্তনের প্রতিটি অভিযোগ তদারকের জন্য তার সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

পারস্পরিক সাফল্য ও কল্যাণ কামনা করে সমাপ্ত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।

আমার মন বলছে বৈঠকের যেটুকু বিবরণ ও বয়ান আমি দিলাম তা পড়েই বিজ্ঞ পাঠকেরা বুঝতে পারবেন বরফ কতোটা গললো, লাভক্ষতির পাল্লা কোন্ দিকে ভারি হলো এবং অনমনীয়তার ওপর কূটনীতি কতটুকু বিজয় অর্জন করলো।

মারুফ কামাল খান: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক

ই-মেইল: [email protected]

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মঙ্গলবার মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গা মুসলমান ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের ব্যাপ্তি, পদ্ধতি, কাঠামো এবং সংগঠন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

এতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি অ্যাম্বাসাডর মো. সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী উন্মুক্ত বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন এবং রাশিয়ার প্রস্তাবিত কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ না করার প্রেক্ষাপটে একটি ভোটের অনুরোধ জানান।

ভোটের ফলাফল:

১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়;
কোনো দেশ বিরোধিতা করেনি; এবং
১০টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক সাফল্য

এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়া ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

ঢাকা ইতোমধ্যেই আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সফলতার প্রতিফলন এবং রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক

চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন পৌঁছেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তিনি হাইনান পৌঁছান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, চীনে নিয়োজিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম ও হাইনান প্রদেশের ভাইস-গভর্নর বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস।

২৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) অ্যানুয়াল কনফারেন্সের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগদান করবেন ও ভাষণ দেবেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ড. ইউনূস ২৯ মার্চ সকালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং রাতে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ১৬ মার্চ জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হবে। এছাড়া তিনি চীনের হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করবেন।

তিনি আরও জানান, এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।

শফিকুল আলম বলেন, এ সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং হাব (উৎপাদন কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাগুলোকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।

প্রেস সচিব বলেন, বিএফএকে বলা হয় প্রাচ্যের দাভোস। এ সম্মেলনে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা যোগ দেবেন। আমরা আশা করছি, বিএফএ সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনসহ অন্যান্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধান উপদেষ্টার।

তিনি জানান, এ সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মূল ফোকাস থাকবে চীনের কোম্পানিগুলো যেন তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করে। গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের দুটি কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন এবং সোলার এনার্জিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, চীনের সোলার কোম্পানি ট্রেড প্রোটেকশনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না।

প্রেস সচিব বলেন, আশা করছি এই সফরের পর আরও চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে। চীনের হাসপাতাল চেইন যেন বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগ করে—সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

২০ মার্চ প্রেস সচিব বলেন, এটা একটা ঐতিহাসিক সফর হবে। একটা বিষয় হচ্ছে যে চীন আমাদের এখান থেকে তিনটা পণ্য বড় আকারে আমদানি করতে চায় বলে চীনা রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন। এগুলো হলো আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা।

তিনি বলেন, সেজন্য আমরা আশা করছি যে চীনের সঙ্গে আমাদের একটা নতুন এক্সপোর্টের দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশি আম চীনারা পছন্দ করে এবং তারা কাঁঠালও খুব পছন্দ করেন। কাঁঠালটা খুব বৃহৎ আকারে আমরা এক্সপোর্ট করতে পারব।

২৩ মার্চ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে কোনো চুক্তি সই হবে না। তবে, বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে এ বৈঠক হতে পারে। দুই নেতা ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ড সফর করবেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে দুই নেতার বৈঠক করার জন্য অ্যাপ্রোচ করেছি’। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

মোদির সঙ্গে বৈঠক হলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীন ও ভারত উভয় দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

নিউইয়র্কে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনেও মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক করার জন্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়েছিল। তখন দুই নেতার সফরের সময় ও কর্মসূচি আলাদা হওয়ার কারণে বৈঠক হয়নি। তবে ওমানে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভালো ওয়ার্কিং রিলেশন বজায় রাখার ব্যাপারে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে সই করতে যাচ্ছেন, যার লক্ষ্য শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করা। বৃহস্পতিবার তিনি ওই আদেশে সই করবেন বলে জানায় হোয়াইট হাউস।

খবর বিবিসির।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এরইমধ্যে এটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিরোধীরা শিক্ষা বিভাগ বন্ধ ও সম্প্রতি ঘোষিত ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই ঠেকাতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিছু রক্ষণশীলের বহুদিনের লক্ষ্য এটি। তবে শিক্ষা বিভাগ পুরোপুরি বিলুপ্ত করতে হলে কেবল নির্বাহী আদেশই যথেষ্ট নয়, কংগ্রেসের অনুমোদনও লাগবে।

শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্তকরণের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে, কারণ সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাত্র ৫৩-৪৭। কোনো বিভাগ বন্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে অন্তত ৬০ ভোটের প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবারের শেষ দিকে হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের ওই আদেশে সই করার কথা। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেসান্টিসসহ রিপাবলিকান আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা এতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বুধবার বলেন, এই আদেশ শিক্ষার সুযোগ বাড়াবে এবং অভিভাবক, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে শিক্ষার উন্নয়নে আরও ক্ষমতা দেবে।

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ সরকারি স্কুলগুলোর জন্য অর্থায়ন তদারকি করে, শিক্ষার্থীদের ঋণ দেয় এবং নিম্নআয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, শিক্ষা বিভাগ তরুণদের অপ্রয়োজনীয় জাতিগত, যৌন ও রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত করছে। অনেকেরই ভুল ধারণা, শিক্ষা বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল পরিচালনা করে ও পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে। তবে এটি প্রকৃতপক্ষে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্ব।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট তহবিলের মাত্র ১৩ শতাংশ আসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। বাকি অর্থের বেশিরভাগই আসে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সংস্থাগুলো থেকে।

অন্যদিকে শিক্ষা বিভাগ লাখো আমেরিকানের উচ্চশিক্ষার খরচ বহনে ব্যবহৃত কেন্দ্রীয় শিক্ষাঋণ ব্যবস্থাপনা ও তদারকির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিশালী শাসক ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। মজার বিষয় হলো, আওরঙ্গজেবের সমাধি নাগপুরে নয় বরং নাগপুর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরের এক শহরে অবস্থিত। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই শহরের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। পরে হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর চাপে নাম পাল্টে রাখা হয় ছত্রপতি সম্ভোজনগর।

কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো আওরঙ্গজেবকে ভারতের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস খলনায়ক হিসেবে দেখে আসছে। তবে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, আওরঙ্গজেবের শাসনকে এত সরলীকরণের সুযোগ নেই।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের এক বিধায়ক ও বিজেপি নেতা মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি খননের আহ্বান জানান। তারই ধারাবাহিকতায় আওরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে ফেলার দাবিতে নাগপুরে রাস্তায় নামে কট্টরপন্থি হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

তাদের ভাষ্য, ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত নিজের শাসনামলে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেছেন আওরঙ্গজেব। তার আমলে নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছে হিন্দুরা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে অনেক মন্দির।

অমিত বাজপেয়ি নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক মুখপাত্র বলেন, আওরঙ্গজেবের সমাধি আমাদের মাতৃভূমির জন্য কলঙ্ক। আমরা আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছি। পুলিশ আমাদের সামনেই ছিল। যা ঠিক মনে করছি, তা সরকারের কাছে চাওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

স্থানীয় মুসলমানেরা চেয়েছিল, পবিত্র রমজানে এমন বিক্ষোভ বন্ধ হোক। পুলিশের কাছে তারা সেই আরজিও জানিয়েছিল; কিন্তু বিপত্তি বাধায় একটি গুজব। পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, তখন হঠাৎ চাউর হয়-আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা যে সবুজ কাপড়ে মোড়ানো ছিল, তাতে কোরআনের আয়াত লেখা ছিল। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় মুসলমানরা। ইফতারের পর কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে মাঠে নামে তারা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আসিফ কুরেশি নামের এক আইনজীবী ও মহারাষ্ট্র বার কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারপারসন আল-জাজিরাকে বলেন, খুব দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কারফিউ জারি করা হয়। ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ; কিন্তু সমস্যাটা হলো, যারা দাঙ্গায় জড়িয়েছে বা উসকে দিয়েছে এমন মুসলমানদের বদলে যারা নিরপরাধ, নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন, তাদের অনেককেই আটক করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বাজপেয়ি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এখন আমরা আরও কঠোর প্রতিবাদ জানাব। মুসলমানেরা ভাবল কিভাবে যে দাঙ্গা শুরু করে আমাদের ভয় দেখাতে পারবে? এ অঞ্চল থেকে আওরঙ্গজেবকে চিরতরে বিদায় করব আমরা।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলছেন, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউড চলচ্চিত্র ‘ছাভা’ এই দাঙ্গাকে প্রভাবিত করেছে। এটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে মারাঠাদের দ্বন্দ্বের ওপর নির্মিত, যেখানে আওরঙ্গজেবকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সিনেমা হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিকে নতুন করে জাগ্রত করে আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভকে সামনে নিয়ে এসেছে।

আওরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ-১৯৫৮ আইনের অধীনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত। এই আইন এই সমাধির অননুমোদিত পরিবর্তন বা ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।

‘আওরঙ্গজেব: দ্য ম্যান অ্যান্ড দ্য মিথ’ বইয়ের লেখিকা অড্রে টাস্কি বলেন, নিজের ভাই ও বাবাকে হত্যা করে সম্রাট হয়েছিলেন আওরঙ্গজেব। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু এই সম্রাট যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন অপরাজেয়। নিজের সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আওরঙ্গজেব। রাজপুত থেকে মারাঠা-সবার সঙ্গে তার সংযোগ ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদেও তাদের বসান এই সম্রাট।

টাস্কি বলেন, আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে ধর্ম নয় বরং, ক্ষমতাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। যখনই ধর্মীয় অনুশাসন ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তিনি সব সময় ক্ষমতাকেই বেছে নিয়েছেন। আর তা করতেই এই সম্রাট পুনর্বহাল করেন জিজিয়া কর। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই কর দিতে হতো হিন্দুদের। আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিত্বে বহু স্তর আছে, যা ব্যাপক বিশ্লেষণের বিষয়।

টাস্কি বলেন, তৎকালীন কোনো শাসকই গণতান্ত্রিক ছিলেন না। আওরঙ্গজেবকে আলাদা করে ঘৃণা করা মূলত তৎকালীন ঔপনিবেশিক যুগের প্রচারেরই পুনরাবৃত্তি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকেরা নানা কারণে তাকে অপছন্দ করতেন এবং তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতেন। এত বছর পরও তা থেকে বের হতে পারেনি ভারতীয় কট্টর হিন্দুরা।

টাস্কি বলেন, বিজেপি ও আরএসএস যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অংশ, তারা মূলত ঔপনিবেশিক যুগের প্রচারকে পুনরাবৃত্তি করছে।

এই বিরোধিতা এখন ক্রমশ আগ্রাসী, এমনকি সহিংস রূপ নিচ্ছে। গত বছর আওরঙ্গজেবের পোস্টার বহন করায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগের বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের জুনে এই শাসককে নিয়ে ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করায় ১৪ বছরের এক মুসলিম কিশোরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২২ সালে মোদি সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস বইগুলো থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসসংক্রান্ত পাঠের অংশ বড় পরিসরে ছেঁটে ফেলে, যার মধ্যে আওরঙ্গজেব ও তার পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন অর্জনের তথ্যও ছিল। মোদির সমর্থকদের কাছে আওরঙ্গজেব কেবল অতীতের এক চরিত্র নন; তাদের কাছে এই সম্রাট হিন্দুবিদ্বেষী শাসক, যিনি বহু মন্দির ধ্বংস করেছেন বলে তাদের দাবি। তবে, তিনি বেশ কিছু হিন্দু মন্দিরের জন্য জমি ও আর্থিক অনুদানও দিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এখন, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা উত্তর প্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মালিকানা দাবি করছে। তারা বলছে, এই মসজিদ ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস হওয়া বিশাল বিষ্ণুনাথ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত। ২০২২ সালে বারাণসীর এক অনুষ্ঠানে মোদি বলেছিলেন, ‘আওরঙ্গজেব বর্বরতা, সন্ত্রাস ও তলোয়ারের জোরে সভ্যতা বদলাতে চেয়েছিল। ধর্মান্ধতার মাধ্যমে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সংস্কৃতিকে। এরপরও তিনি বহুবার আওরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান এলাকায় একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। জিম্মি ব্যক্তিদের মধ্যে সেনাসদস্যরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই অঞ্চল ছেড়ে না গেলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।

সন্ত্রাসী হামলার শিকার ট্রেনটির নাম ‘জাফফার এক্সপ্রেস’। মঙ্গলবার সেটি বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশওয়ার শহরে যাচ্ছিল। তখন ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। সেটি এখন একটি সুড়ঙ্গের ভেতরে আটকে আছে। ট্রেনের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন।

ট্রেনটিতে হামলা চালানো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নাম বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা চায় তারা। এ নিয়ে দশকের পর দশক ধরে গোষ্ঠীটি সরকারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে। বিএলএর দাবি, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অন্যায্যভাবে ভোগদখল করছে সরকার।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ট্রেন আটকে থাকা ওই সুড়ঙ্গের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি চলছে। ব্যাপক গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিনাও। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে।

বিএলএ জানিয়েছে, তাদের কাছে ট্রেনের ১৮২ জন যাত্রী জিম্মি রয়েছেন। এর মধ্যে সেনাসদস্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এ ছাড়া তারা ২০ সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে এবং ১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বিএলএর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সাংবাদিককের কাছে একটি বিবৃতি ই–মেইল করেছে বিএলএ। বিবৃতিটি বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামেও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে গোষ্ঠীটি বলেছে, বেসামরিক যাত্রী, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বেলুচ নাগরিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সামরিক হস্তক্ষেপ জারি থাকলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে।

ট্রেনে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, নিরপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব পশু হামলা চালিয়েছে, তাদের কোনো ছাড় দেবে না সরকার।