খালি চোখে দেখা না গেলেও ঘরে ‘ডাস্ট মাইটস’ বা ধুলার পোকা থাকার নানান লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে দেহে।
ঘন ঘন হাঁচি, চোখ থেকে নাক দিয়ে পানি পড়া— এসব উপসর্গ কি পরিচিত? বিশেষ করে যদি হাঁপানির সমস্যাও থাকে, তবে এর কারণ হতে পারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ‘ডাস্ট মাইটস’ বা ধুলার পোকা।
খালি চোখে দেখা যায় না গেলেও এই কীটগুলো মাকড়সা ও উকুনের জাতের। আর মানুষের শরীরে কামড়ায় না বা রক্ত খায় না।
তবে এগুলো ঘরের ভেতর এমন সব জায়গায় বাসা বাঁধে, যেখানে আর্দ্রতা ও অন্ধকার বেশি। বিশেষ করে কার্পেট, বিছানা, পর্দা বা সোফা।
‘আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন’-এর স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা মুখপাত্র ডা. হোসে আরিয়াস রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বলেন, “ডাস্ট মাইটস’য়ের মল, প্রস্রাব বা পোকাগুলোর মৃতদেহে থাকা বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন, কিছু মানুষের শরীরে তীব্র অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এগুলো আণুবীক্ষণিক, মানে খালি চোখে দেখা যায় না। তবে এসব থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকি ত্বকের জ্বালা-পোড়া দেখা দিতে পারে।”
আরেক বিশেষজ্ঞ ‘আমেরিকান ক্লিনিং ইন্সটিটিউট’য়ের যোগাযোগ ও প্রচার সমন্বয়কারী নাটালি ডি’আপোলিটো বলেন, “নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অগোছালো জিনিসপত্র কমিয়ে আনা ‘ডাস্ট মাইটস’ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।”
ধুলার পোকা থাকার লক্ষণ
‘ডাস্ট মাইটস’ আছে কিনা সরাসরি দেখা সম্ভব নয়, তবে শরীরের প্রতিক্রিয়া থেকেই ধারণা পাওয়া যায়।
ডা. আরিয়াসের মতে, যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে—
রাইনাইটিস: নাকের ভেতরের ঝিল্লি ফুলে যাওয়া। ফলে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকানো ও পানি পড়া। সকালে এসব উপসর্গ বেশি হলে বুঝতে হবে বিছানায় মাইটস জমেছে।
মুখমণ্ডলে চাপ: ফুলে যাওয়া শ্লেষ্মা ঝিল্লির কারণে মুখে চাপ অনুভব করাতে পারে।
কাশি ও শ্বাসকষ্ট: নিয়মিত কাশি, হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট ও শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।
হাঁপানি আক্রমণ: হাঁপানি রোগীদের জন্য ‘ডাস্ট মাইটস’ মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
ত্বকের জ্বালা: চুলকানি, লালচে দাগ বা রর্যাশ দেখা দিতে পারে।
ঘুমের অসুবিধা: এসব শারীরিক সমস্যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
‘ডাস্ট মাইটস’ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উপায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কীট পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এর সংখ্যা ও প্রভাব কমানো যায়।
বিছানার চাদর ও কাপড় গরম পানিতে ধোয়া: ডাস্ট মাইটস কাপড় ভালোবাসে। তাই বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, পর্দা, এমনকি নরম খেলনা সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানিতে (কমপক্ষে ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ধুতে হবে।
সম্ভব হলে কাপড়ের পর্দার বদলে রোলার শেড ব্যবহার করা উচিত।
বিশেষ কাভার ব্যবহার: নাটালি ডি’আপোলিটো পরামর্শ দেন, অ্যালার্জি-প্রতিরোধী ম্যাট্রেস ও বালিশের কাভার ব্যবহার করতে। এসব কাভারের ছিদ্র এত ক্ষুদ্র যে ‘ডাস্ট মাইটস’ ঢুকতে পারে না।
সপ্তাহে একবার খালি ভেজা কাপড়ে মুছে ফেলতে হবে এই ধরনের ম্যাট্রেস ও কভার।
আর্দ্রতা কমানো: ‘ডাস্ট মাইটস’ আর্দ্রতায় বেঁচে থাকে।
‘আমেরিকান অ্যাজমা অ্যান্ড অ্যালার্জি ফাউন্ডেশন’ পরামর্শ দেয়, ঘরের আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের নিচে রাখতে।
এজন্য এয়ার কন্ডিশনার বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। মরুভূমি অঞ্চলের মতো শুষ্ক পরিবেশে এই পোকা বাঁচতে পারে না।
ডা. আরিয়াস জানান, “এয়ার পিউরিফায়ার ‘ডাস্ট মাইটনস’ কমাতে কার্যকর নয়। বিশেষত বিছানার পাশে রাখলে উল্টো ধুলা বাতাসে উড়িয়ে দেয়।”
সঠিকভাবে ধুলা ঝাড়া: প্রতি সপ্তাহে ভেজা কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ধুলা মুছতে হবে। শুকনা কাপড় ব্যবহার করলে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে অ্যালার্জি বাড়ায়।
ঘর পরিষ্কারের সময় ওপরের দিক থেকে নিচের দিকে কাজ শুরু করতে হবে। সিলিং ফ্যান ও লাইট মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার করা জরুরি। জানালার ফ্রেম ও সিলও ধুলা, পরাগ ও মাইটস জমার জায়গা।
নিয়মিত ভ্যাকুয়াম করা: যদি কার্পেট এড়ানো না যায়, তবে অন্তত সপ্তাহে একবার ভ্যাকুয়াম করা জরুরি। এতে এইচইপিএ ফিল্টার যুক্ত ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করতে হবে, যা সূক্ষ্ম ধুলা ও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান আটকে রাখে।
‘আমেরিকান ক্লিনিং ইন্সটিটিউট’ শক্তিশালী নোজলযুক্ত আপরাইট বা ক্যানিস্টার ভ্যাকুয়াম ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
শক্ত মেঝে মুছে ফেলা: টাইলস বা কাঠের মেঝে থাকলেও ধুলা মুছতে হবে। প্রতিদিন ভেজা মপ দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।