আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি কার্যকর

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা দেন, উভয়পক্ষই এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে। এরপর বুধবার ভোর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর মধ্য দিয়ে লেবানন সীমান্তে ১৪ মাস ধরে চলা লড়াই অবসানের একটি পথ তৈরি হল, যে লড়াইয়ে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে, যার সূচনা হয়েছিল গত বছরের গাজা যুদ্ধের জের ধরে।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ১০-১ ভোটে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পরপরই হোয়াইট হাউসে বক্তৃতা দিতে আসেন বাইডেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গে তার কথা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪ টায় যুদ্ধবিরতি শুরু করতে তারা দুজনেই সম্মত হয়েছেন।

“বৈরিতার স্থায়ী অবসানের লক্ষ্য নিয়ে এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের যা অবশিষ্ট আছে, তাদের আর ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে দেওয়া হবে না।”

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। একই সময়ে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েল সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে আবার কোনো অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ না করতে পারে।

এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাসান ফাদলাল্লাহ লেবাননের আল জাদেদ টিভিকে বলেছেন, এ চুক্তি লেবাননের রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সম্প্রসারণকে সমর্থন করলেও হিজবুল্লাহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

“হাজারো মানুষ আমাদের প্রতিরোধে যোগ দেবে। আমাদের নিরস্ত্র করার যে প্রস্তাব ইসরায়েলি দিয়েছিল, সেটা ভেস্তে গেছে।”

হিজবুল্লাহকে সমর্থন দিয়ে আসা ইরান, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র দল হামাস কিংবা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসা হুতি বিদ্রোহীরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন এক এক্স পোস্টে লিখেছে, “এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরায়েলি ও লেবানিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু মাস ধরে চলা আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি।”

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব বলেছেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে লেবানিজ সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ৫ হাজার সদস্যকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা হবে।

ইসরায়েলের নেতা নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রস্তুত। কিন্তু হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করলে তার ‘কঠোর জবাব’ ইসরায়েল দেবে।

তার ভাষায়, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলকে এখন ইরানের হুমকির বিষয়ে আরো মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিশ্রাম, রসদের সরবরাহ বাড়ানো এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *