রাজনীতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রাণঘাতি সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক এ সহিংসতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আহত হন।

আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।

তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষ হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।

জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল তারাই এ সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে সারা দেশব্যাপী এ ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রশ্ন এতে অর্জনটা কী হলো। কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেল। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

সহিংসতা জড়িতদের খুঁজে বের করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আবারও দেশবাসীকে বলব, যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করা। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনও চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষ, মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪ তে সেই একই। ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একি বর্বরতা, একি জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করব এ যে বর্বরতা, এ যে সন্ত্রাস জঙ্গি এবং মানুষকে হত্যা, এটাতো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের ছয়তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা!

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলবো যে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে করে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দিবে, সবই পোড়াবে।

তিনি আরও বলেন, কতবার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সবকিছু ভুলে, সেই শোক, ব্যথা, বেদনা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সবকিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেই খানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন। সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কী জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে বলবো আপনারা দোয়া করেন। যেন এ জঙ্গিবাদ এবং জুলুমের হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে শান্তি আসে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হামলায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার সকালে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন কেন্দ্রটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন বিটিভির মহাপরিচালক।

এছাড়া রাজধানীর রামপুরায় একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিটিভি ভবন ও বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দুর্বৃত্তরা বিটিভির কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক যন্ত্রপাতি লুটপাটও করেছে। আমাদের ১৭টি গাড়ি পুড়িয়েছে, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে, দুটি সম্প্রচার ভ্যান পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও আগুনে বিল্ডিংয়ের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জাতীয়

কারফিউ শিথিল হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। জনমনে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকলেও সব জায়গাতেই ছিল মানুষের কর্মব্যস্ততা।

রাজধানী ঢাকায় যারা এতদিন ঘর থেকে বের হননি তারাও এদিন বেরিয়ে এসেছিলেন। ছুটির দিন হলেও মূূলত কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কেটেছে বেশির ভাগ মানুষের। এদিন সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার পাশাপাশি পেশাগত নানা কজেও যুক্ত ছিলেন।

শুক্রবার খোলা ছিল অনেক কারখানা। পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই যার যার কর্মস্থলে গেছেন। কাজ সেরেছেন। শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিলেন রোজগারের আশায়। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ ঘরে বসে থাকতে রাজি নন। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন রাস্তায় রিকশা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনও চলেছে অনেক বেশি।

রাজধানীর বাংলামটরে রিকশাচালক হাতেম আলি বলেন, চাকা না ঘুরলে আমাদের পেট চলবে না। তাই সব বন্ধ থাকলে আমাদের বিপদ। আমরা আর এসব গ্যানজাম চাই না। কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা খেয়ে বাঁচতে চাই। আজকে সকাল থেকেই রিকশা চালিয়েছি। আয়ও গত কয়েক দিনের চেয়ে ভালো। আগামী সপ্তাহে অবস্থা যেন আরও ভালো হয়।

সপ্তাহে শুক্রবারের সন্ধ্যাতেই বাকি ছয় দিনের বাজার সারেন সিঙ্গেল মাদার নূর-জাহান তন্বী। পেশায় ব্যাংকার তন্বী থাকেন সেগুনবাগিচায়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে- তা ন্যক্কারজনক। প্রাণভয়ে বাসা থেকেই বের হইনি। শুক্রবার কারফিউ অনেকটাই শিথিল ছিল। তাই অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন, আমিও তাই। দুই মেয়েকে নিয়ে বাজার সেরেছি। তিনি বলেন, আমরা এমন ঘটনা আর চাই না। স্বস্তি ফিরে আসুক সবখানে। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনী, পুুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। টহল থাকলেও নগরজুড়েই ফিরে এসেছে স্বস্তি। গত কয়েক দিন ধরে যারা বের হয়েছেন- তাদের কেটে যাচ্ছে শঙ্কাও। সাধারণ মানুষ বলছেন, সাম্প্রতিক সৃষ্ট পরিস্থিতি ছিল চরম ভয়ংকর ও আতঙ্কের। কারফিউ জারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শুক্রবার নগরের সড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন শপিংমলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারেন।

এদিন সড়কে দেখা মিলেছে রিকশা-সিএনজি, বাসসহ ব্যক্তিগত গাড়িও। ঢাকার ফার্মগেট, মিরপুর, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল করতে দেখা গেছে। মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে বাড্ডার সড়কসহ নগরের বিভিন্ন সড়কে বৃহস্পতিবার যানজট ছিল। শুক্রবার কোনো কোনো সড়কে যানজট ছিল। বৃহস্পতিবারের তুলনায় এদিন মানুষের চলাচল অনেক বেশি দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কাউফিউ শিথিল করা হয়। সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বের হতে থাকে। খোলা হয় অফিস-আদালত। খোলে ব্যাংক, কারখানাও। পাশাপাশি সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

রাজনীতি

ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে হামলা চালাতে ও চলমান কারফিউ ভাঙতে দলীয় নেতাদের দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

হাছান মাহমুদ বলেন, তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছেন- সে অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে। অডিওতে তারেক রহমান বলছেন, ‘কারফিউ ভাঙ্গ, আর না হয় পদত্যাগ করো’।

শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত ‘দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের শপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত। এই রাষ্ট্রের ওপরে হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল তারা (বিএনপি নেতারা) স্বীকারোক্তি দিয়েছে, ছাত্রলীগ মারলে পাঁচ হাজার ও পুলিশ মারলে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আমির খসরু (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের তরুণ নেতাকর্মীদেরকে ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ার জন্য। গত বছরে ২৮ অক্টোবর যারা ঢাকা শহরে অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য করেছিল তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিয়েছে। এবারও যারা মানুষ মারবে, পুলিশ মারবে তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিবে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল! এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।

বিনোদন

বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া। ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রেমিক রাঘব চাড্ডার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি।

এখনো বিয়ের এক বছর পূরণ হয়নি। হঠাৎ বিষাদের বার্তা দিলেন এই অভিনেত্রী।
নিজের ইনস্টাগ্রামে বিমর্ষ ছবি পোস্ট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে এ অভিনেত্রী লেখেন, এই মাসে, আমি কিছুটা সময় বিরতি নিয়েছিলাম এবং জীবন নিয়ে ভেবেছি; যা জীবনের প্রতি আমার চিন্তাভাবনাই বদলে দিয়েছে। এটা বুঝতে পারলাম, জীবনে গুরুত্বহীন জিনিসকে (বা মানুষ) গুরুত্ব দিও না। এক সেকেন্ডও নষ্ট করো না। জীবন একটা টিকটিক ঘড়ি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের পছন্দে মতো বাঁচুন। অন্যের জন্য বেঁচে থাকা বন্ধ করুন।

জীবন থেকে বিষাক্ত মানুষদের ছুড়ে ফেলার কথা উল্লেখ করে পরিণীতি চোপড়া লেখেন, নিজের মতো মানুষ খুঁজে বের করুন। জীবন থেকে বিষাক্ত মানুষদের ছুড়ে ফেলতে ভয় পাবেন না। পৃথিবী কী ভাবছে, মানুষ কী ভাবছেন এটা চিন্তা করা বাদ দিন। পরিস্থিতিতে অনুযায়ী চিন্তাভাবনা বদলে ফেলুন। জীবন ছোট। আপনি যেভাবে বাঁচতে চান সেভাবেই বাঁচুন।

পরিণীতি চোপড়া বিয়ের পর সংসারে মন দিয়েছেন। হঠাৎ তার এমন পোস্ট দেখে বিস্মিত ভক্ত-অনুরাগীরা। অনেকে নেপথ্যের কারণ জানতে চেয়েছেন। তবে এসবের কোনো উত্তর দেননি পরিণীতি চোপড়া।

পরিণীতি চোপড়া অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘চমকিলা’। গেল ৮ এপ্রিল মুক্তি পায় এটি।

অর্থনীতি

কারফিউ শিথিল থাকায় বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে খুচরা পর্যায়ে কমতে শুরু করেছে দাম। ৩ দিন আগে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় নেমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। সবজির দামও কমছে। কমতির দিকে মাছের দামও। এদিকে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এখনও সব ধরনের চাল, ডিম ও আলু বিক্রি হচ্ছে সেই বাড়তি দরেই।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা ৩ দিন আগেও ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৩ দিন আগেও ৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি শসা আগের মতো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কচুর মুখি প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগের মতোই প্রতি কেজি টমেটো ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। যা ৩ দিন আগেও ১২০-১৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা। শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০-২০০ টাকায়। যা বাজার ভেদে ৩ দিন আগে প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা আরও জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ১৫৫-১৬০ টাকা বিক্রি হয়। আর ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। মাঝারি আকারের চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। যা আগে ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হয়।

কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা আল আমিন বলেন, কয়েক দিনের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক বেশি। দামও কমেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বাজারে সরবরাহ থাকলেও চাল, ডিম, আলু বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলী মিয়া বলেন, কারফিউতে সবজির সরবরাহ কম ছিল। শিথিলের কারণে সরবরাহ বেড়েছে। তাছাড়া ট্রাকের ভাড়া বেড়েছিল। তা এখন কমছে। সব মিলে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।

কাওরান বাজারের আল­াহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির অজুহাতে মিলাররা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে। এর মধ্যে এখনও ট্রাক ভাড়া অনেক বেশি। যে কারণে চালের দাম কমছে না।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা আগে ২০০-২১০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা; যা আগে ৩০০-৩২০ টাকা ছিল। এ ছাড়া আগের মতোই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে ১ কেজি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই ৩৮০-৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কই ২০০-২৪০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ টাকা, দেশি টেংরা ৮০০ টাকা এবং পাবদা ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

খেলাধুলা

শুরুতে ব্যর্থ হলেন ব্যাটাররা। নিগার সুলতানা জ্যোতি, স্বর্ণা আক্তার ছাড়া কেউ পৌঁছাতে পারেননি দুই অঙ্কেও।

তাদের এনে দেওয়া অল্প রানের পুঁজি ভারতের কাছে তেমন কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
শুক্রবার ডাম্বুলায় নারী এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। শুরুতে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ৮০ রান করে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য ৯ ওভার হাতে রেখেই তাড়া করে ভারত।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে একদমই ভালো করতে পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। দুই ওপেনারের কেউই দুই অঙ্ক ছুতে পারেননি। ৪ বলে ৬ রান করে দিলারা আক্তার ও ৯ বলে ৪ রান করে মুর্শিদা খাতুন আউট হন রেনুকা সিংয়ের বলে। দুজনেই হয়েছেন ক্যাচ আউট।

মুর্শিদার আগেই আউট হন তিনে খেলতে নামা ইশমা তানজিম। ১০ বলে ৮ রান করেছিলেন তিনি। ২১ রানে তিন উইকেট হারানো দলকে আরও বিপদে ফেলে দেন রুমানা আহমেদ ও রাবেয়া খান। দুজনই ১ রানের বেশি করতে পারেননি।

এমন উইকেট হারানোর মিছিলে অনেকটা একাই দাঁড়িয়ে থাকেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। তার ব্যাটে ভর করেই দলীয় রান পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়।

এরপর তার সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন স্বর্ণা আক্তার। ইনিংসের শেষ ওভারে গিয়ে জ্যোতি আউট হলে ৩৬ রানের এই জুটি ভাঙে। ৫১ বলে দুটি চার হাঁকিয়ে ৩২ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

তার বিদায়ের পর শেষ ওভারটি মেডেন করেন রাধা যাদব। ১৮ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন স্বর্ণা। ভারতের পক্ষে চার ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন রেনুকা সিং।

রান তাড়ায় নামা ভারতকে কোনো রকম ধাক্কাই দিতে পারেনি বাংলাদেশ। স্মৃতি মান্ধানার হাফ সেঞ্চুরিতে সহজ জয় পায় তারা। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন স্মৃতি। ২৮ বলে ২৬ রান আসে শেফালি ভার্মার ব্যাট থেকে।

রাজনীতি

বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পর গুম করে রেখে নির্যাতন চালানোর পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।

সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেফতার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেফতার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিনদিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতার বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

ফখরুল বলেন, গ্রেফতার নেতাদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদের গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপির এ নেতা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো-রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া, গত কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনরত তখন সেই মুহূর্তে সরকারপ্রধানসহ সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাদের তাচ্ছিল্য করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দেয় তাদের নির্মূল করার। সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকার কেনা গুলি, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে, যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে। এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সব শ্রেণি- পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু অবৈধ সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সব বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদের সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেফতার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় তিন হাজার গ্রেফতার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।

ছাত্র জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। বরাবরই আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়। এছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে।

যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, তাই এই অবৈধ সরকারকে বলবো- অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।

বিএনপি মহাসচিব এই ‘গণহত্যা, নির্যাতন’, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সব দেশপ্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দুর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান।

ফখরুল তার বিবৃতিতে ‘বিনা অপরাধে’ গ্রেফতার বিএনপির নেতাসহ গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জোর আহ্বান জানান ৷

জাতীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এর আগে আজ বিকালে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সাদা পোশাকের কিছু ব্যক্তি তাদের তুলে নিয়ে যায় বলে নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

নাহিদের বাবা বলেন, বিকাল ৪টার পর সাদা পোশাকে কয়েকজন এসে নাহিদ, আসিফ ও বাকেরকে তুলে নিয়ে যায়। তবে তারা কোথায় নিয়ে গেছে সেটি জানতে পারেননি। গত কয়েকদিন ধরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের সামনে পুলিশের উপস্থিতি ছিল। এর আগে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ করেছিলেন এই দুই সমন্বয়ক।

এদিকে কোটা আন্দোলনকারীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পৌনে ৪টার দিকে একটি খুদে বার্তায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও তাদের চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডের সামনে ডিবি পুলিশের অবস্থান নেওয়ার কথা জানান।

আসিফ মাহমুদের দেওয়া ওই বর্তায় বলা হয়, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আমাকে (আসিফ), নাহিদ ভাই আর বাকেরকে গৃহবন্দি করেছে ডিবি পলিশ। ওয়ার্ডের সামনে ও হাসপাতালে ডিবি পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

এছাড়া হাসপাতালের সামনে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। আমাদের সব ধরনের কমিউনিকেশন বন্ধ করে রাকা হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

এদিকে, তাদের তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ডিবির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে কল করা হলেও তারা তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক

আবারও উত্তাল পাকিস্তান। বিভিন্ন ইসলামি দল এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচির জেরে ফের অস্থিরতা বেড়েছে দেশটিতে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঞ্জাব ও ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ১৪৪ ধারা শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত কার্যকর হবে।

পাকিস্তানি প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, ১৪৪ ধারা কোনো অবস্থায়ই লঙ্ঘন করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামি (জেআই) বিদ্যুতের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কারণ দেশজুড়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে পাকিস্তান সরকার। জামায়াতে ইসলামির (জেআই) পাশাপাশি জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ) এবং অন্যান্য ধর্মীয় দল শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্ট কোরআন অবমাননার দায়ে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিক মোবারক সানি মামলার রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এ দুই ইস্যুকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই পাকিস্তানে বিক্ষোভ করছিল দলগুলো। অন্যদিকে পিটিআই ঘোষণা করেছে, তারা শুক্রবার দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তির জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশ।

এরপর এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘শুক্রবার থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ জারি করা হলো। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। জনসাধারণকে কোনো অবস্থায়ই ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাজধানীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং নাগরিকদের কোনো অবৈধ কার্যকলাপে অংশগ্রহণ এড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি সংযোগ সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার রাজধানী ইসলামাবাদকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামি (জেইউআই-এফ) এবং পিটিআই-এর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দুইদিন ধরে এসব দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করতে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

এদিকে পাঞ্জাবে ২৬ থেকে ২৮ জুলাই ১৪৪ ধারা বলবৎ করার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র বিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে এ সময় জনসমাগম, সমাবেশ, অবস্থান এবং বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘প্রশাসন পাঞ্জাবজুড়ে এই আদেশের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।’

আদেশে আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের সমাবেশগুলো গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। জনসাধারণের শান্তি ও শৃঙ্খলা ব্যাহত করার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জনসাধারণের জন্য উল্লেখযোগ্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। তাই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, শান্তি বজায় রাখতে এবং স্থাপনা ও ভবন রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা বা অপ্রীতিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসাবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের জোর সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, মৌখিকভাবেও তেল আবিবকে সাহায্য করে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরাইল সমর্থনে বেশ শক্ত অবস্থানেই দেখা গেছে। কিন্তু গাজা ইস্যুতে ‘স্রোতের বিপরীতে’ দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে। গাজা যুদ্ধের এবার সমাপ্তি চাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। আলজাজিরা, এএফপি।

কমলা হ্যারিস বলেন, ‘গাজায় ৯ মাসে যা কিছু ঘটেছে, তা ভয়াবহ। মৃত শিশুদের ছবি এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া হয়ে পালাতে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষ, যাদের কাউকে কাউকে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থবারের মতো বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে, তাদের ছবি দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা থেকে আমরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারি না। এমন দুর্ভোগ দেখার পর আমরা চুপ থাকতে পারি না এবং আমি নীরব থাকব না।’

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্যও নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কমলা। তবে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে ‘নৃশংস সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসাবে উল্লেখ করেন সম্ভাব্য এ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। কমলা বলেন, এ যুদ্ধ অবসানের সময় এসেছে। আর তা এমনভাবে এর শেষ করতে হবে যেন ইসরাইল নিরাপদ থাকে, সব জিম্মি মুক্তি পায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চর্চা করতে পারে। অন্যদিকে গাজায় শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবেই গুলি করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন মার্কিন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বাইডেন ও কমলাকে চিঠি দিয়েছেন তারা। সেখানে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে- এমন ৪৫ জন মার্কিন চিকিৎসক এবং নার্সদের একটি গ্রুপ বিষয়টি তুলে ধরেন।

ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, সম্ভবত এ সংঘাতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৯২ হাজারের বেশি হয়েছে। এ সংখ্যা হতবাক করার মতোই। কারণ, এটা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক চিকিৎসাকর্মী জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিনের যেসব শিশুদের চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তারা লিখেছেন, আমাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন এমন সব শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি, যাদের মাথা এবং বুকে গুলি করা হয়েছে। অল্পসংখ্যক মানুষ বাদে গাজার প্রায় প্রত্যেকেই অসুস্থ, আহত বা দুই ধরনের সমস্যার সঙ্গেই লড়াই করে যাচ্ছে। তারা আরও লিখেছে, ‘আমরা নারী ও শিশুদের প্রতি অসহনীয় নিষ্ঠুরতার দৃশ্যগুলো ভুলতে পারি না, যা আমরা নিজেরাই দেখেছি।’

এদিকে ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরও রয়েছে। সে আলজাজিরাকে জানিয়েছে, হামাস এবং সেখানে জিম্মি করে রাখা লোকজনের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।