অর্থনীতি

ভারত থেকে আমদানীকৃত ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল বহনকারী এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।

উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা বন্দর থেকে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল নিয়ে এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি আজ রাত ৭টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দ্বিতীয় চালান।

জাহাজে আসা চালের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে।

রাজনীতি

সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন অন্তবর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানবিক এই উদ্যোগের জন্য ভিডিও বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সাফল্য কামনা করেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১০তলা ভবনের কিডনি ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করল তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর তেমুখী-বাদাঘাট-বাইপাস সংলগ্ন নাজিরেরগাঁওয়ে ১০তলা ভবনের এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘অনেকগুলো আলোকিত উদ্যোগী প্রাণ মানুষ সেবা করার মন-মানসিকতা নিয়ে কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেটে মিলিত হয়েছেন। সম্মিলিত ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি এই প্রতিষ্ঠান সেবায় রোলমডেল হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের মানুষকে এই ভালো উদাহরণগুলো রীতিতে পরিণত করতে হবে। তাহলে সহজেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।’

দায়িত্বের জায়গা থেকে এই অসাধারণ কাজের সঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হওয়া একটা বড় পাওয়া বলে উল্লেখ করেন শারমীন এস মুরশিদ।

তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে ভালো কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইলেও সহজে হওয়া যায় না। সরলরেখায় শুধু পিপিপি হলেই সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের মতো চমৎকার কিছু ঘটবে এমনটি কিন্তু নয়। কয়েককজন অসাধারণ মানুষের তীব্র ইচ্ছার কারণে এ হাসপাতালটি বাস্তব চিত্রটা পেয়েছে।’

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত ছিয়াত্তর হাজার প্রতিষ্ঠানকে সুব্যবস্থাপনায় আনা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানকে সুগঠিত করতে হলে কয়েকজন সুগঠিত মানুষ লাগে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটকে এত উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করার জন্য এধরনের নিবেদিত প্রাণ নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর রশিদ, মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান, বীর উত্তম, অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কর্নেল এম এ সালাম (অব.) প্রমুখ।

হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণে ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভবন নির্মাণ ছাড়াও হাসপাতালের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার অর্থ বিভিন্ন অনুদান থেকে ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সিলেটের ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ চৌধুরী প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১১০ শতক ভূমি বিনামূল্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল চালু হওয়ায় কিডনি রোগীরা সিলেটেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা পাবেন। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। গরীব ও দুঃস্থ রোগীরা স্বল্পমূল্যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয়

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১১ রোডম্যাপ বা প্রস্তাব বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে ‘অ্যা পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জুলাই ৩৬ ফোরাম’।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ নির্ধারণে ১১টি মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়, যা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্র এবং বিশ্বে ‘নেক্সট ১১ অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

বক্তারা বলেন, ৫৩ বছরে বাংলাদেশ নানা সংকট পেরিয়েছে। তবে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাই ৩৬ ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ নাজীর শাহীন বলেন, এখনই সঠিক রোডম্যাপ কার্যকর করার সময়, অন্যথায় সম্ভাবনাগুলো হাতছাড়া হবে।

বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিনিয়োগ প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্বখ্যাত গোল্ডম্যান সার্চের প্রজেকশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ১১তম অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

প্রস্তাবিত রোডম্যাপ/১১ দফা হলো-

এক. অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্লেষক এবং থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, দুই. ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে রেল, উচ্চগতির ট্রেন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব হিসাবে গড়ে তোলা, তিন. কৌশলগত প্রতিরক্ষায় ব্লু ইকোনমি ও রণতরী সংযোজনের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি, চার. বহুজাতিক সম্পর্কে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমন্বয়, পাঁচ. প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে সুন্দরবন ডকট্রিন ও অন্যান্য পরিবেশগত সম্পদ রক্ষা, ছয়. আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো ভ‚মিকা নিয়ে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন, সাত. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহার করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আট. ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নে ২০৩৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ, নয়. প্রশাসনিক সংস্কারে দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির মাধ্যমে প্রশাসনকে জনমুখী করা, দশ. প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রণীত থ্রি-জিরো : দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং এগারো. বিশ্বমঞ্চে অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ডেল্টা নেশন হিসাবে ব্র্যান্ডিং।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সুব্রত ঘোষ সুমন, নাওয়দি হোসাইন, মারুফী হাসান, কনক ইসলাম, এসএম লিমন এবং আরিয়ান নাজীর প্রমুখ।

জাতীয়

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় মহিলা দলের সমাবেশকে উপলক্ষ্য করে ভোজনের আয়োজনের জন্য গরু চুরি অভিযোগে বিএনপির এক নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের পর যুবদল নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের কয়ড়া বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিকেলে বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খানের স্বাক্ষরিত এক অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মাদারগঞ্জের কয়ড়া বাজার এলাকার মৃত আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরীর অনুসারী এবং আদারভিটা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী সুমন মণ্ডল (৪০)। অন্যজন একই এলাকার হাসান প্রামাণিকের ছেলে মাংস ব্যবসায়ী (কসাই) ফজলুল প্রামাণিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সমাবেশ উপলক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তার চৌধুরীর বাড়িতে এক ভোজের আয়োজন করা হয়। সেই ভোজের জন্য ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তা চৌধুরী নির্দেশে যুবদল কর্মী সুমন মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির কর্মী জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার মৃত ছৈয়দ আলী মণ্ডলের ছেলে এফাজ মণ্ডলের বাড়ি থেকে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে একটি গরু চুরি করেন। পরে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুল প্রামাণিককে দিয়ে গরু জবাই করে রান্নার জন্য তৈরি করা হয়।

আরও জানা গেছে, শনিবার সকালে এফাজ মণ্ডল তার গোয়াল ঘরে গরু দেখতে না পেয়ে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। গরু চুরির ঘটনায় এফাজ মণ্ডলের বাড়িতে লোকজন জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনসহ গরুর মালিকসহ কয়ড়া বাজারে যাওয়ার পথে মাংস ব্যবসায়ী ফজলুর কাছে গরু মাথা ও চামড়া দেখে চুরি যাওয়া গরুটি শনাক্ত করেন। পরে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা করতে গেলে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও মাংস ব্যবসায়ী ফজলুকে আটক করে। এ সময় গরু চামড়া, মাথা ও কিছু মাংস জব্দ করে পুলিশ।

এ বিষয়ে আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুক্তা বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, দলীয় ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মুক্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা সাতদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বলেন, গরু চুরি ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।

জাতীয়

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ বিশেষ অভিযান চলে।

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানায়, তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজানের নেতৃত্বে একাধিক টিম সাড়ে চার ঘন্টা বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে রায়ের বাজার, বোর্ডঘাট, নবীনগর হাউজিং, চাঁদ উদ্যান ও ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে মাদক কারবারি, পেশাদার ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িতরা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

“এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে মানুষ পিষ্ট। এখন এই ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।”

এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটেছে; কখনো খাদ্যে, কখনো খাদ্য বহির্ভূত খাতে, কখনো আবার সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে দুই অংকের ঘর।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও ওষুধ, এলপি গ্যাস, মোবাইলে ফোনের সিম কার্ডের মত প্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, ‍উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও কর বাড়ল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। আর এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিকদের কেউ কেউ।

রাজধানীর মহাখালী এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে তানভীর জিলুই হতাশার সুরে বলেন, “সরকার খালি কর বাড়ানোর তালে আছে, আয় বাড়ল কিনা তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। একে তো মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নিচে নামে না, এর মধ্যে আবার এই ভ্যাট বাড়ানোতে অবশ্যই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। আমরা যাবো কই? আমাদের চাপ তো আরও বাড়ল।”

রাজধানীর বনানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আফতাব আহমেদ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ বলছেন।

তার ভাষায়, “সরকার রাজস্ব বাড়াতে চায়, ভালো কথা। কিন্তু, সেটা বাজেটে করা যেত। এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে মানুষ পিষ্ট। এখন এই ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি। তাই অধ্যাদেশ জারি করে শুল্ক-কর বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার রাতে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে এ দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

তার আগে ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

অধ্যাদেশ জারির পরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে; এতে তা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়ে গেছে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও এনবিআর দাবি করেছে, এতে ভোক্তার বাড়তি মূল্য গুনতে হবে না।

শুল্ক-কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, এ পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না’।

কর আদায়কারী সংস্থা এনবিআরও একই সুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছিল, মূল্যস্ফীতিতে ‘প্রভাব পড়বে না’।

তবে, এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “যেসব পণ্যে ট্যাক্স বেড়েছে, সেগুলোর দাম তো বাড়বে। কোনো ধরনের বাস্তবতায় এটা (প্রভাব পড়বে না) তো হয় না। প্রভাব পড়বে না বলা হলে, বোধ হয় তা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হয়।

জাহিদ হোসেন বলেন, ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, এসব পণ্যের ওজন কম, দর কম, সেজন্য হয়ত মূল্যস্ফীতির হারের উপর খুবই কম প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, “যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হল, অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে যেগুলো ১৫ শতাংশের নিচে ছিল, সেগুলোকে ১৫ শতাংশে উঠানো হয়েছে। তার মানে ভ্যাট রেইট ইউনিফিকেশন (একীভূতকরণ), মানে সব পণ্যে একই ভ্যাট হবে, এটা তো একটা নীতি ছিল সরকারের।

“এর মধ্যে অনেক অব্যাহতি ছিল। ওই অব্যাহতিগুলোকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। কারণ, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্বে তো এখন পর্যন্ত কোনো প্রবৃদ্ধি নেই।”

শুল্ক ও কর বাড়ানোর জন্য এই সময়টাকে যথোপযুক্ত মনে করছেন না এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, “এখানে সময়টি প্রশ্নবিদ্ধ। যখন খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও প্রায় দুই অংকের ঘরে, সেরকম একটা সময়ে ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতার নিরিখে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন করা যেতে পারে। যদি, একীভূত করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, সেটা তো আগামী বাজেটে করা যেত।”

৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে বলেছে। ‘সে কারণে’ অর্থবছরের মাঝপথে এসে এভাবে হঠাৎ শুল্ক ও করের বোঝা বাড়ানোর পথে হাঁটে সরকার।

জনজীবন ‘অতিষ্ট করে তুলবে’

পণ্য ও সেবার তালিকায় চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলের মত পণ্য না থাকলেও যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, এগুলোর বেশির ভাগ বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় হওয়ায় তা খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, “সরকার সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেমন- সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য বিস্কুট, সাধারণ হোটেল, মোবাইল রিচার্জ, গ্যাসসহ অপরিহার্য পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং আইএমএফের চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক, স্থায়ী উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতিতেও সংকট তৈরি করবে।

“এসব সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে স্বৈরাচারী সরকারের মত জনগণের পকেট কাটার নীতি।”

বিবৃতিতে অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ, খেলাপি ঋণ আদায় ও ধনীদের প্রয়োজনীয় বিশেষ কর আরোপের আহ্বান জানান হয়।

আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জনজীবন এমনিতেই দুর্বিসহ, তদুপরি আইএমএফের পরামর্শে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ স্বল্প উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে গভীর সংকট তৈরি করবে।”

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানান তিনি।

কোন পণ্যে কত ভ্যাট

কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়াল, সানগ্লাস, নন-এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্র্যান্ড সম্বলিত তৈরি পোশাকের শো-রুম বা বিপণি বিতানে পণ্য ও সেবা বিক্রিতে থাকা বিদ্যমান ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন তা সাড়ে ৭ শতাংশ ছিল।

বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় পণ্য যোগানদাতা, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাবে সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

আমদানি করা সুপারিতে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, পাইন বাদাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, তাজা বা শুকনা সুপারি ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ, আম, কমলালেবু, লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, লেবু, পেঁপে, তরমুজ, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, সবজির রস, তামাক, বাদাম, পেইন্টস, পলিমার, ভার্নিশ ও লেকার, সাবান ও সাবান জাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট, ফ্রুট ড্রিংকস, আর্টিফিশিয়াল বা ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস (কার্বোনেটেড ও নন-কার্বোনেটেড), তামাকযুক্ত সিগারেট এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

যেসব হোটেলে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ করা হয় সেসব হোটেল বা বারের বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও একইভাবে মদ বা মদজাতীয় পণ্য সরবরাহ করা হলে-তার বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের উপর ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বা আইএসপির উপর প্রথমবারের মত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

পটেটো ফ্ল্যাকস, কর্ন, মেশিন প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট বা টমেটো কেচাপ বা সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প, তেঁতুলের পেস্ট, ব্যবহারের অযোগ্য ট্রান্সফরমার অয়েল, লুবব্লেয়িং অয়েল, এলপি গ্যাস, বাল্ক ইম্পোটেড পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, বিআরটিএ থেকে নেওয়া লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, কঠিন শিলা, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন অ্যালয়, এইচ আর কয়েল থেকে সি আর কয়েল, সি আর কয়েল থেকে জিপি শিট, জি আই ওয়্যার, ৫ কেভিএ থেকে ২ হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম, চশমার মেটাল ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, নারিকেলের ছোবড়া হতে তৈরি ম্যাট্রেস- এসব পণ্যের ভ্যাট ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ, ইনভেন্টিং সংস্থার ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ, ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

তবে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে।

সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক-দুটোই বাড়ানো হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একইভাবে বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে কখনও একই সঙ্গে চার স্তরের দাম ও শুল্ক-কর বাড়ানোর নজির ছিল না।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া মধ্যমস্তরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; উচ্চস্তরে ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ এবং অতি উচ্চস্তরের দাম ১৬০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

লাইম স্টোন ও ডলোমাইটে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

এতদিন সিগারেটের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক নিম্নস্তরে অন্য তিন স্তরের তুলনায় কম রাখা হত। এবারই প্রথম সম্পূরক শুল্ক একক হারে নেওয়া হল।

এ খাত থেকে এই দাম ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে চলতি অর্থবছরের বাকি দিনগুলোতে ৪ হাজার কোটি বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য এনবিআরের।

অপরদিকে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা হলেই টার্নওভার কর দিতে হবে। বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়।

নতুন বিধান অনুযায়ী, বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা পেরোলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

উড়োজাহাজের টিকেটের দামও বাড়তে পারে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুট ও সার্কভুক্ত দেশের বিমান টিকেটে ৫০০ টাকা হারে আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এটা ২০০ বাড়িয়ে ৭০০ টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন

ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি ‘আইনসিদ্ধ’ নয় দাবি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদিরের।

তিনি বলেন, “ভ্যাট বাড়ানোর একটা নিয়ম আছে। বর্তমানে আমরা উৎপাদন থেকে পাইকারি পর্যায়ে যখন সরবরাহ করছি তখন ১৫ শতাংশ অলরেডি ভ্যাট দিচ্ছি। এরপর তারা যখন খুচরায় বিক্রি করে তার জন্য তাদের প্রফিট মার্জিন দিতে হয় ১৬ শতাংশ। ভ্যাট নিলে তাদের থেকে ১৫ শতাংশ নেওয়ার কথা ছিল।

“কিন্তু সরকার ২ লাখ প্রতিষ্ঠান এমন আছে, তাদের থেকে নিতে পারে না। ফলে সরকার আমাদেরই বলেছে, এই মার্জিনের ওপর ২ দশমিক ৪০ টাকা ভ্যাট কেটে পরিশোধ করতে। আমরা তা অগ্রিম দেই। এখন আপনি যদি ধরেন ১৬ টাকার মধ্যে ৩ টাকা দিয়ে দেব তখন ভ্যাট দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা অবৈধ।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, “সরকার বলছে এর মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়াচ্ছে। তারা আয় বাড়াচ্ছে না; আমার খরচ বাড়াচ্ছে।”

ভ্যাট না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত ও সরকারের উন্নয়ন কমানোর পক্ষে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আপনি বিদ্যুৎ দেন, গ্যাস দেন, আমরা দরকারে ফেরি করে আমাদের পণ্য সরবরাহ করব।

“এডিপিতে খরচ কমিয়ে এটি দুই লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে ফেলেন। এই মুহূর্তে সরকারের ৩০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব।”

সরকারের দ্রুত রাজস্ব বাড়াতে সংস্কারের অংশ হিসেবে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, “কিন্তু টাইমিং একটা ফ্যাক্টর। সবকিছু সুচিন্তিত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে মহার্ঘ্য ভাতা না দেওয়া উচিৎ ছিল। ওয়েট করা যেত। অপারেটিং বাজেট কমানো যেত। অনেক জায়গায় হাত দেওয়ার ছিল।”

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “পৃথিবীতে যেসব দেশে এ ধরনের ক্রাইসিস হয়, তারা যেটা করে, তা হল- তার অপারেটিং কস্ট কমিয়ে দেয়। কোনো কোনো দেশে এটি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন এক ফোর্স আছে, যার ফলে অপারেটিং কস্ট কমানো যাচ্ছে না।”

রেস্তোরাঁ মালিক আর মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে ক্ষোভ

সরকারের ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক আর মোবাইল ফোন অপারেটররাও।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, “জনগণের সরকার ক্ষমতায়; কিন্তু এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা নেই। আইএমএফের কথা বলে বাজেটের মাঝপথে এভাবে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।”

এটা পাড়া-মহল্লা, ফুটপাথের ছোট ব্যবসায়ীর কাছে এনবিআরের ‘চাঁদাবাজির’ নতুন ফর্মুলা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“সরকারের রাজস্ব কমে গেছে। সেজন্য বড়-বড় বিলাসী ব্যয়গুলো কমালেই তো পারে। আমলারা তো ঠিকই বড়-বড় বাড়ি বানাচ্ছে, গাড়ি কিনছে। সরকারের অনেক বাড়তি ব্যয় আছে, প্রয়োজনে সেগুলো কমানো হোক,” যোগ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সারাদেশে ৪ লাখ ৮২ হাজার রেঁস্তোরা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব রেস্তোরাঁর ৬০ হাজার মালিক আমাদের সদস্য। আমরা আগামী দুই দিনের মধ্যে আন্দোলনের ঘোষণা দেব।”

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, “এমনিতে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের পেনিট্রেশন অনেক কম। আপনি গ্রহকদের সুবিধা না দিতে পারলে তা আর বাড়বে না। এখন এই সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে যে বাড়তি টাকাটা দিতে হবে এটা কিন্তু সরাসরি গ্রাহকের পকেট থেকে যাবে।

“আগে যে ব্যবহারকারীকে ৫০০ টাকা দিতে হত, সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে তাকে এখন থেকে দিতে হবে ৫৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। আগে যিনি ১০০০ টাকা দিতেন, তাকে দিতে হবে ১১৫৫ টাকা। এই হারেই সবাইকে বাড়তি পেমেন্ট দিতে হবে।”

কর্পোরেট খাতে ইন্টারনেটের ব্যয় নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন জানিয়ে ইমদাদুল বলেন, “কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১০ হাজার টাকা বিল পাঠালে তারা এক হাজার এএআইটি (অগ্রিম আয়কর) হিসেবে কেটে রাখছে। ভ্যাট আছে ১৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ এসডি। মানে ২৫ শতাংশ সরাসরি চলে যাচ্ছে সরকারের খাতে।

“আবার কোম্পানির বার্ষিক ট্যাক্স আছে। আমরা যত টাকা ক্লায়েন্টের কাছে থেকে পাই তার মোর দ্যান ফিফটি পার্সেন্ট নিয়ে যাচ্ছে সরকার। আমার মনে হয় এই এসডি (সম্পূরক শুল্ক) আরোপের বিষয়টি সরকারের পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ।”

মোবাইলের রিচার্জেও অতিরিক্ত তিন শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে এখন ১০০ টাকা রিচার্জে একজন গ্রাহক মোটে ৪৩ টাকা ৭০ পয়সার সেবা নিতে পারবেন মোবাইল অপারেটর কাছ থেকে।

বর্তমানে মোবাইল সেবায় ১০০ টাকার রিচার্জে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর ২০ দশমিক ৪ টাকা। সব মিলিয়ে ১০০ টাকা রিচার্জে কর দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৬ টাকা। এর সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ বাড়ানোর পর সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা।

সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর হঠাৎ আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় আমরা বিস্মিত।

“এমন পরিস্থিতিতে এটি বাড়ানো হলো যখন ধকল কাটিয়ে উঠছে অর্থনীতি। এই নিয়ে গত সাত মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হল।”

২০২৪ সালের জুনে ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছিল। এখন আবারও ৩ শতাংশ বাড়ল। তাতে সাত মাসের মাথায় গ্রাহকদের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা বাড়ল ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

এখন থেকে গ্রাহকরা প্রতি ১০০ টাকার সেবা গ্রহণ করলে প্রদান করতে হবে ১৪২ দশমিক ৪৫ টাকা (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ)। গত বাজেটের আগে যা ছিল ১৩৩ দশমিক ২৫ টাকা।

তানভীর মোহাম্মদ বলেন, “ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সংকল্পবদ্ধ টেলিযোগাযোগ শিল্প। কিন্তু এমন পদক্ষেপ এই অগ্রগতি ব্যাহত করবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য বাড়াবে।

“গ্রাহকদের স্বার্থে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনের বৃহত্তর লক্ষ্যে আমরা সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।”

রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “নতুন অর্থবছর শুরুর প্রায় ছয় মাস আগে একটা পরিপত্রের মাধ্যমে যেভাবে টেলিযোগাযোগ খাতের সব ধরনের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি আমাদের কাছে খুবই ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে।”

আগের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, এ ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনো পূরণ হয় না। কারণ সাধারণ গ্রাহকেরা ব্যয় কমিয়ে এ ধরনের সেবা মূল্য বাড়ার ধাক্কা সামাল দেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সরকারের কাছে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য তারা আবেদন করবেন বলেছেন সাহেদ আলম।

রাজনীতি

লন্ডনে চিকিৎসারত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে সেখানে পৌঁছেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় হিথ্রো বিমানববন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া চিকিৎসারত আছেন। তাই তাকে দেখতে এসেছি। এটি আমার দায়িত্ব।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ অকার্যকর। যে যতই চেষ্টা করুক এটি অকার্যকরই থাকবে।

লন্ডনে কতদিন থাকবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতদিন থাকব তা বলা মুশকিল। এটি ম্যাডামের চিকিৎসার ওপর নির্ভর করবে।

খেলাধুলা

রাত পোহালেই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল আইসিসির কাছে জমা দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ১৫ সদস্যের দল এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সে দলে কারা থাকছে, সে ব্যাপারেও কিছুটা ধারণা করাই যায়। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে বড় কোনো চমক থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

নিয়মিত মুখদের রেখেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দল সাজাতে পারেন নির্বাচকরা। চমক হতে পারত তামিম ইকবাল বা সাকিব আল হাসানের অন্তর্ভুক্তি। তবে তামিম এরই মধ্যে অবসর নিয়েছেন, আর সাকিব দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েও নিজের বোলিং অ্যাকশনকে ‘বৈধ’ প্রমাণ করতে পারেননি।

এর ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সাকিবের থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে যদি সাকিব বোলিং অ্যাকশন শোধরাতে পারেন, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে। এছাড়া যদি সাকিবকে শুধুই ব্যাটার হিসেবে খেলাতে চান নির্বাচকরা, সেক্ষেত্রেও ভাগ্য চমকাতে পারে সাকিবের।

এদিকে আগামীকাল আইসিসির কাছে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড জমা দিলেও এই দল আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর দায়িত্ব বর্তাবে তানজিদ হাসান এবং লিটন দাসের কাঁধে। সৌম্য সরকার চোট থেকে সেরে উঠলে দলে ফিরতে পারেন। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি টপ অর্ডারে ব্যাট করবেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

এছাড়া অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজদের দলে থাকা নিয়ে আপাতত কোন শঙ্কা নেই। একইভাবে তাওহীদ হৃদয়, রিশাদ হোসেনের দলে থাকাটাও প্রায় নিশ্চিত।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল ভেন্যু পাকিস্তানের কন্ডিশন বিবেচনায় চার পেসারকে রাখতে পারেন স্কোয়াডে নির্বাচকরা। সেক্ষেত্রে হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম বাদ পড়তে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিমানে চড়ার টিকিট পেতে পারেন তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ।

আর সাকিব আল হাসানের না থাকায় বাঁহাতি স্পিনারের অভাব পুষিয়ে দিতে দলে জায়গা হতে পারে নাসুম আহমেদের।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য স্কোয়াড

তানজিদ হাসান, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলি অনিক, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা, তাসকিন আহমেদ।

জাতীয়

ভারত নদীকে ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের চারপাশে ভারতের পঞ্চাশটির মত ড্যাম, ব্যারেজসহ হাইড্রোলিক অবকাঠামো রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। মূলত ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে নদীকে ব্যবহার করে ভারত।”

শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পূর্বপাড় কাশিনগর এলাকায় ‘নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা’ বিষয়ক সংগঠন তরীর আয়োজনে ‘নদী সম্মিলনে’ এসব কথা বলেন তিনি।

নদীর ব্যাপারে ভারতকে অবিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ বলেন, “ভারতকে নদীর ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। তাই বাংলাদেশকে পানির বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বনির্ভরশীল হতে হবে।”

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পঞ্চাশটিরও বেশি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে দুই দেশের চুক্তিতে ভারতের আগ্রহ খুবই কম। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই ভারতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে ডেল্টা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।”

নদী রক্ষার এই সম্মিলনে মনজুর আহমেদ বলেন, “ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত তার পশ্চিমাঞ্চলে ট্রান্সফার করতে চায়, যেটি বাংলাদেশের জন্য সমূহ বিপদ। ভারত থেকে যেসব নদীর শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে ব্যাপক পরিমাণ পানি বঙ্গোপসাগরে জমে। বর্ষাকালে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিট মিটার পানি এসব নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়।

“তবে সেসব নদী থেকে গ্রীষ্মকালে মাত্র ৫ ভাগ পানি বাংলাদেশে আসে। সেখানে ভারতে পানি তো দেয়ই না, উল্টো গঙ্গার পানি তারা ব্যাপকভাবে নিয়ে যাচ্ছে। পানি যখন বেশি দরকার তখন কম দেয়, যখন কম দরকার তখন বেশি দিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। সিলেট এবং ফেনীর বন্যা তার প্রমাণ।”

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশব্যাপী নদী দখল ও দূষণ বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দাবি জানান নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

নদী সম্মিলনে তরীর আহ্বায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সাংবাদিক ও লেখক আমিন আল রশীদ, রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কিউ এম সোহেল রানা বক্তব্য দেন।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত সহজ করেছে বাংলাদেশ। এখন থেকে পাকিস্তানি নাগরিকরা অনলাইনেও বাংলাদেশের ভিসা পাবেন।

লাহোর চেম্বার অব কমার্স পরিদর্শনকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইকবাল খান এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর জিও নিউজের।

লাহোর চেম্বার অব কমার্সে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত বলেন, লাহোরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলাদা পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো সময়ের দাবি।

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে লাহোর চেম্বার ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানকে সম্মানের চোখে দেখে, দুই দেশকেই অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত খুব সহজ করেছে এবং এখন পাকিস্তানের নাগরিকরাও অনলাইনে বাংলাদেশের ভিসা পেতে পারেন।

লাহোর চেম্বারের সভাপতি মিয়া আবু জার শাদ বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে যাবে।