রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশটা কেউ কেউ পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে, যার কারণে বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। সেই মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার করে ছাড়ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।

শুক্রবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটির আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জনসভায় তিনি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় বুধবার রাতে দলের দুজন আসামিকে ছিনিয়ে নিতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের থানা পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা, ভাঙচুর, পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে ‘পাটগ্রামের’ কথা স্মরণ করিয়ে দেন ডা. শফিকুর রহমান।

দেশবাসীকে সতর্ক বার্তা জানিয়ে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই। কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের মতো স্বপ্ন দেখে থাকেন। তাহলে বলতে চাই, মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দু:স্বপ্ন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এমন কিছু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। দেশে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না, কালো টাকার খেলা চলবে না। প্রশাসনের ক্যু চলবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কেউ যেন অপকর্ম করতে না পারে। এজন্য আমরা সজাগ রয়েছি। জনগণের ভোটে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুত। আমরা আরও বলতে চাই, হাসিনার হাতে সব বাহিনী ছিল। জনবিস্ফোরণের কারণে ক্ষমতা আটকাতে পারেনি তারা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের জয় নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ, কারণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা কোনো মস্তানতন্ত্র বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণের ইচ্ছা পূরণের জন্য রাজনীতি করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদের এই রাজনীতিতে আসা।

তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারা মায়া কান্না করেছে, তারাই সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুট করেছে। আমরা দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানি না। এ দেশের মাটিতে যারাই জন্ম গ্রহণ করবে, তারাই এদেশের সম্মানিত নাগরিক। আমরা কথা দিচ্ছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবো। ওরা মালিক হয়েছিলো জনগণের। আমরা জনগণের সেবক হব ইনশাআল্লাহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মদিনার ছায়ার আলো এই বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই। শরিয়ার কথা শুনলে অনেকে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কেননা তারা ঘুস দুর্নীতি করতে পারব না, যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না, পর নারীর ইজ্জত লুট করলে তাদের জীবন থাকবে না, চুরি করলে তার হাত থাকবে না। এমন মদিনার ছায়া আমরা এ দেশে দেখতে চাই।

‘মব কালচার’ প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, দেশে ‘মব কালচার’ নতুন না। ৭২ সাল থেকেই দেশে ‘মব কালচার’ চলছে। ৭২ সালে মায়ের স্তন কেটে উল্লাস করেছে, এমন কুলাঙ্গার বাংলাদেশে আছে। সে নারী যেই হোক, সে আমার মা, সেই নারী আমার বোন, আমার মেয়ে। তার স্তন কাটার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারা হয়েছে। সেগুলো কি ‘মব কালচার’ ছিল না। সেগুলো ‘মব কালচার’ ছিল। তবে মব কালচারকে সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোন নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচার তা করবে। সেই আইন দেশের সংবিধানে রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ বিশাল আন্দোলনের ‘আইকনিক পারসন’ ছিলেন। তিনি রংপুরের গর্ব। ২৪ জুলাইয়ে যারা নিহত হয়েছে, যারা আহত হয়েছে। আহতদের এখনো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, এ দেশের মানুষে তাদের বিচার দেখতে চায়। যদি বিচার না হয়, তাহলে ন্যায় বিচারের সংস্কৃতির অভাবে, বাংলাদেশ জঙ্গলে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলি, অতিতে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়টা রাষ্ট্র দেখবেন। এখন আপনারা যারা দায়িত্বে রয়েছেন, আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের শক্তি জোগাবে ইনশাআল্লাহ। আমরাও আপনাদের পাশে থাকব; কিন্তু অন্যায় দেখলে আমরা সবার আগে প্রতিবাদ করব। অতএব অন্যায়কারীর পক্ষ নিবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না। জনগণের বিপক্ষে গেলে কি পরিণতি হয় সেটা ২০২৪ সালে দেখেছেন।

দীর্ঘ ১৭ পর রংপুরে অনুষ্ঠিত এ জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।

জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহিদ আবু সাঈদের বাবা ও বড়ভাই রমজান আলীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

এর আগে সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে জনসভায় জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাঠেই দুটি জামায়াতের মাধ্যমে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। এছাড়াও রংপুর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে জনসভা মাঠে প্রবেশ করেন তারা।

জনসমাবেশস্থল ছাড়াও ডিসির মোড়, কাছারি বাজার, আরডিআরএস মোড়সহ বিভিন্ন সড়কে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কখনো রোদ, কখনো ছায়া, এই রোদছায়ার লুকোচুরি আবহাওয়ার মাঝেই মাঠে বক্তব্য শোনেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।

বক্তব্যের শেষে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। সেই সঙ্গে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ছেয়ে যায় পুরো মাঠ।

রাজনীতি

শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র- জনতার।

শুক্রবার (৪ জুলাই) উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

‘মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়?’ শিরোনামে দেওয়া তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

“মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়?

পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে মেটিকুলাস ডিজাইন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আর ’৭১ এর মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙ্গালি-বিহারি দাঙ্গা সঠিক হইতে পারলে ’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান মেটিকুলাস ডিজাইন হইলে সমস্যা কোথায়?

দুনিয়ার কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব পরিকল্পনা না করে হয়েছে? জনগণের চৈতন্যকে ঐক্যবদ্ধ ও লক্ষ্যাভিমুখী রাখতে মেটিকুলাস ডিজাইনের বিকল্প নেই। যখন জনগণ নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যাবে এবং বিপ্লবের অবজেক্টিভ কন্ডিশন প্রস্তুত, তখন আর প্ল্যানের দরকার পড়ে না। কিন্তু তার আগে রাজনৈতিকভাবে জনগণকে প্রস্তুত এবং বিপ্লবী করে তোলা মেটিকুলাস ডিজাইন হলে সমস্যা কোথায়?

সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন, সিরাজ শিকদার আর ভাসানী, এমনকি খোদ শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস ডিজাইনের অংশ হয়ে পাপবোধ না করেন এবং আমরা তাদের নিয়ে (তাদের ভুলসহই, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য) গর্বিত হতে পারি, তাহলে ’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে মেটিকুলাস ডিজাইন করে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কেন এ প্রজন্ম গর্বিত বোধ করবে না?

৩ তারিখের ১ দফা ঘোষণার আগে জাতিসংঘের বক্তব্য ছাড়া বিদেশি শক্তি বা সামরিক বাহিনী কারোরই বিন্দুমাত্র অংশগ্রহণ ছিল না এ গণ-অভ্যুত্থানে। ভারতের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে (যা ন্যায্য বলেই আমরা মনে করি) আগরতলা বৈঠক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য শেখ মুজিব ও অন্যান্য জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি যদি আমাদের শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে কোনো বিদেশি শক্তি বা তৃতীয় শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র কিংবা সলা-পরামর্শ ছাড়াই জনগণের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার জন্য অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ এবং অংশীজনকে কেন গালি শুনতে হবে?

পুনশ্চ: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দুটি অংশ। ৫ই জুন থেকে ১৮ ই জুলাই। এ অংশে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং নেতৃত্ব তৈরি করেছিল। আর ১৯শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সকল স্তরের ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে এবং আত্মদানে অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল।

প্রথম অংশ অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড। পরের অংশের কৃতিত্ব বিপ্লবী ছাত্র- জনতার। কিন্তু, অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না থাকলে এ বিপ্লবী জনতা পরের অংশে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পার‍ত না। শুক্রবার দিবাগত রাত, ২রা আগস্টে এ অভ্যুত্থান বেহাত হয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা ঠেকাতে পেরেছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব।

এ নির্দেশনা ও বক্তব্যের অবদানটুকু বাদে ১৯শে জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ আর বিপ্লবী তৎপরতার কৃতিত্ব সকল স্তরের ছাত্র-জনতার।

উপরের এ ব্যাখ্যা মওলানা ভাসানীর ’৬৮ সালের ঘেরাও আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখেন, অথবা ’৭১ এর মার্চ। আপনারা মেটিকুলাস ডিজাইন ও বুঝতে পারবেন এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ, প্রতিরোধ আর বিপ্লবী তৎপরতারও হদিস পাবেন। ”

জাতীয়

বাংলাদেশে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি নানা কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য। সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে এই বিপ্লব হয়েছে। যেটির নেতৃত্বে ছিলেন তরুণ-যুবকরা। তারুণ্যের শক্তি যে রোখা যায় না, সেটি আবারও প্রমাণ হলো ঢাকায়। তরুণদের ডাকে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে সব শ্রেণিপেশার মানুষ এতে যোগ দেয়। যেটি পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।দুই মাসব্যাপী রক্তাক্ত আন্দোলনের সফলতা ধরা দেয় ৫ আগস্ট, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পলায়নের মধ্য দিয়ে।

পৃথিবীর যেখানেই বিপ্লব হয়েছে সেখানেই কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিংবা সংগঠন অথবা ক্যারিশম্যাটিক লিডার সামনে ছিলেন। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবে নেপোলিয়ন বেনাপোর্ট, ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবে ভ্লাদিমির ইলিয়চ লেনিন, ১৯৪৯ সালে চীনা বিপ্লবে মাও সে তুং, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি নেতৃত্ব দিয়ে চূড়ান্ত বিপ্লব বয়ে আনেন। বিপ্লব ছাড়াও বড় যেকোনো আন্দোলনের সফলতার জন্যও বড় কোনো নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়; বাংলাদেশে জুলাইর বিপ্লবের সেই অর্থে ছিল ব্যতিক্রম। চব্বিশের আন্দোলনে একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না। বিপ্লবের নাটাই ছিল না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের হাতের মুঠোয়। তরুণ ছাত্র-শক্তি ছিল বিপ্লবের অগ্রভাগে। তৎকালীন অরাজনৈতিক সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই বিপ্লবের নিউক্লিয়াস। এই আন্দোলনের নেতারা ১৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যত নির্মাণে জীবন ঝুঁকি নিয়েছেন।পুলিশ-র্যাব মার দিয়েছে, ডিবি তুলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য সব স্থানে তাদের খোঁজাখুঁজি করেছে, রাষ্ট্রের অন্যান্য বাহিনী নির্মূলের হুমকি দিয়েছে। এতোসব বাধা ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গেছেন নাহিদ, হাসনাত, আসিফরা। টলে নি। তাদের দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৭ বছরের অন্ধকার ভেদ করে আলোর দেখা মিলেছে।

৫ আগস্ট এদেশে গণআকাঙক্ষার বিজয় হয়েছে। দর্প চূর্ণ হয়েছে ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার। যেটি ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত অনেকের কল্পনায়ও স্থান পায়নি। একনায়ক ও জবরদস্তিমূলত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। গুলি-গ্রেনেড-হামলা-মামলার মুখে বিরোধী দলের একের পর এক আন্দোলনের ব্যর্থতায় একটা সময় দেশের মানুষ মনে করতে শুরু করে যে এই জগদ্দল পাথরকে বাংলার জমিন থেকে সরানো যাবে না। আন্দোলন করে লাভ হবে না। সেই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেছে তারুণ্য। রাজপথে তাদের দৃঢ়তা ফ্যাসিবাদী শক্তির মূল উৎপাটন করে দিয়েছে। যার ফলে মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ১৮ কোটি মানুষ।

জুলাই বিপ্লবের বার্ষিকীতে আমাদের পিছু ফিরে তাকানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ৫ জুন সরকারি চাকুরির নিয়োগ ব্যবস্থায় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ঘোষণার পরপরই, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের জন্য ৫৬% চাকরি সংরক্ষণ করার সুবিধা দেওয়ার কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও শিক্ষার্থীরা ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে অস্বীকার করে এবং কোটা বাতিলের নতুন নির্বাহী আদেশের দাবি জানায়। মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিণতি পেয়েই জুলাই বিপ্লবে রূপ নেয়। যেই গণআন্দোলনে ১৫০০ তাজা জীবন ঝরে যায়। আমরা কী একবার ভেবে দেখেছি, যদি এই আন্দোলন ব্যর্থ হতো কী হতো নাহিদ-হাসনাতসহ লাখো তরুণদের?

জুলাই বিপ্লব আরও কিছু কারণে স্মরণকালের ইতিহাসে অনন্য। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। সাঈদ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বুলেটের সামনে নিজের বুক যেভাবে বিছিয়ে দিয়েছেন এটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শুধু গল্পেই মানায়। সেদিন গুলি লাগার মুহূর্তে রাজপথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন। এই আন্দোলনই রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে।

আন্দোলনরত তরুণদের তৃষ্ণা নিবারণে মুগ্ধর ‘পানি লাগবে পানি’ এই ডাক এখনও কানে বাজে। আন্দোলনকারীদের তৃষ্ণা নিবারণ করায় হাসিনার পেটুয়া বাহিনী সড়কের ফেলে মুগ্ধকে যেভাবে খুন করল তাকে কি বুঝতে অসুবিধা হয় যে, তাদের রক্তের নেশা পেয়ে বসেছিল। সাঈদ-মুগ্ধর মতো দেড় হাজার তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে হাসিনার পোষা লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী।

জোহরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় ১৭ জুলাই নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। জোহরের নামাজ পড়ে বের হয়ে বাসায় ফিরছিলেন ইয়ামিন। ঠিক তখনই গুলিবিদ্ধ হন ইয়ামিন। তাকে পুলিশ তাদের সাঁজোয়া যান এপিসিতে উঠায়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনের নিথর দেহ পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। আর এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যায়। আন্দোলন আরও গতি পায়।

যাত্রবাড়ি অনেকটা লেলিনগ্রাদের মতো রূপ নেয়। সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পুলিশের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তা দেখলে গা শিউরে উঠে।

চব্বিশের বিপ্লবে বাবা-মা তাদের সন্তানদের ঘরে বেধে রাখতে পারেননি। তারা ছুটে এসেছেন রাজপথে। সন্তানদের পথ ধরে বাবা-মাও এসেছেন রাজপথে। ঢাকার সড়কে এক বাবা তো ঘুরে ঘুরে বলেই বেড়াচ্ছিলেন যে-আমার সন্তান এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে; আপনার সন্তানদেরকেও পাঠান। তুমুল আন্দোলনের মুখে এক সন্তানকে হাতকড়া বেঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আইনশৃংখলা বাহিনী; তখন মা সন্তানকে সাহস দিয়ে বলছিলেন-যাও ভয় পেও না।

চব্বিশের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের রাজপথে থেকে শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যোগানো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীর নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার আবৃত্তি করে সাহস যোগানো, ড. সলিমুল্লাহ খানের ঘোষণা-অপরাধীর কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই, সরকারের পতন ঘটাতে হবে—এই স্মৃতিগুলো এখনও হৃদয়ে নাড়া দেয়।

জুলাই বিপ্লবের নেপথ্যে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের অবদানও কি জাতি ভুলতে পারবে? বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী, কওমী আলেমদের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, আন্দালিব রহমান পার্থের বিজেপি নেপথ্যে থেকে জোরালো ভূমিকা রাখে। এই দলগুলোর বহু নেতাকর্মী রাজপথে থেকে আন্দোলনকে পরিণতি এনে দেয়।লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার দলের নেতাকর্মীদের ছাত্রদের পাশে থাকার নির্দেশ দেন। বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকশ নেতাকর্মী এই গণআন্দোলনে নিহত হয়।

এই বিপ্লবে রাজনীতির রঙ না লাগানোর আরও একটা কারণ ছিল। যদি এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সামনে আসতেন তাহলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে পারত। তৎকালীন সরকার বিশ্ববাসীকে বোঝাতে সক্ষম হতো যে, এটি নিছক ছাত্রদের আন্দোলন নয়। রাজনৈতিক আন্দোলন। সেই অছিলায় সেভাবেই ক্র্যাকডাউন চালানো হতো।

জাতীয়

গণতন্ত্রের প্রশ্নে টানা ১৬ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে গণতন্ত্র কবরস্থ করেছিলেন, তা পুনর্জাগরণের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে।

নানা নির্যাতনের পরেও বিএনপি কখনো থেমে যায়নি।
শুক্রবার (৪ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্র যখনই ধ্বংস কিংবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে, তখনই খালেদা জিয়া বারবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। পরমত সহিষ্ণুতাও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেউ যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে, সে জন্যই এই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।

অপরাধ করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনৈতিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান-‘জিরো টলারেন্স’ বলেও উল্লেখ করেন এই নেতা।

এ সময় রিজভী জানান, ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সারাদেশে কয়েকজন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

টাঙ্গাইলের কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করার সময় কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মৃদুল হাসানকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজ কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক।

মৃদুল কালিহাতীর শাজাহান সিরাজ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি। কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব মো. মজিবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার এইচএসসি পর্যায়ের ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে কলেজ কেন্দ্রের ভেতরে নকল সরবরাহ করতে যান মৃদুল। এ সময় দায়িত্ব পালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে ধরা পড়েন তিনি। পরে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব মো. মজিবর রহমান বলেন, আটক মৃদুল হাসানের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত নির্দেশনা পেয়েছি। কলেজের সিনিয়র স্যারদের পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কালিহাতী থানার ওসি মো. জাকির হোসেন জানান, আটক মৃদুল হাসান পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

রাজনীতি

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া আসাদুল ইসলাম ছাত্রদল সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, আপনার মন চাইলো অমনি আমাকে ‘ছাত্রলীগ’ বলে দিলেন? এতটা নিম্নপর্যায়ে কীভাবে নামা যায়? তা আমার জানা নেই। আপনার এই ভিত্তিহীন, অবমাননাকর ও মানহানিকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

ওই পোস্টে জবি শিবির সভাপতি আরও লেখেন, একটা বৃহৎ, ত্যাগী ও আদর্শভিত্তিক ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্ব থেকে ছাত্রসমাজ দায়িত্বশীল বক্তব্য প্রত্যাশা করে। কিন্তু যখন অযোগ্য কাউকে ধরে এনে নেতৃত্বে বসানো হয়, তখন তার কাছ থেকে দায়িত্বশীলতা আশা করাটাই বোকামি- আজ আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তা প্রমাণ করেছেন।

আসাদুল ইসলাম লিখেছেন, আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য আপনি অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। নিজের দল ও আদর্শ নিয়ে কিছু বলার সামর্থ্য না থাকলে, করার সামর্থ্য না থাকলে, অন্তত চুপ থাকুন। জুলাই বিপ্লবোত্তর ছাত্রসমাজ আপনার এই ঘৃণ্য ও বেপরোয়া বক্তব্য কখনোই মেনে নেবে না। দয়া করে একটি ডানপন্থি, আদর্শবাদী সংগঠনকে এভাবে সমূলে বিনাশ করবেন না।

এর আগে এদিন বিকালে জবি ছাত্রশিবির সভাপতি ও সেক্রেটারির ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টটার অভিযোগ এনে বক্তব্য দেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আয়োজিত সদস্য ফরম বিতরণ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তিনি এই অভিযোগ তুলেন।

এসময় ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির ছাত্রলীগ করার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সরাসরি ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিল। বর্তমানে ছাত্রশিবির ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করতে চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এমন করা হলে আমরা মেনে নিবো না। ছাত্রশিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছে। সে সম্ভবত ২০০৮-০৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার কীভাবে ছাত্রত্ব থাকে?

অর্থনীতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শিল্পবান্ধব সহায়ক নীতি ও কর সহায়তাকে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তারা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পখাতকে এগিয়ে নিয়েছে উৎপাদনশীলতার দিকে। এতে বিকশিত হয়েছে ফ্রিজ, এসি, টিভির মতো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পুরোপুরি উৎপাদনমুখী দেশীয় শিল্পখাত।

শুধু তাই নয়, দেশীয় রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনখাতের শিল্পোদ্যাক্তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে কারখানায় ব্যাপক পরিসরে অত্যাধুনিক সব মেশিনারিজ স্থাপনের মাধ্যমে আনুষঙ্গিক প্রায় সব উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশেই তৈরি করছে। তারপরেও উৎপাদনমুখী স্থানীয় ফ্রিজ ও এসি শিল্পে তৈরি করা সমজাতীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে সমুদয় সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে এনবিআর।

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের বিদ্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগই শুধু নয়, লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বাধাগ্রস্ত হবে সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পখাতের টেকসই বিকাশ। ইলেকট্রনিক্সখাতে উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থমকে যাবে। তৈরি হয়েছে উৎপাদন শিল্পের আড়ালে আমদানি নির্ভর সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ।

২৭ মে মাসে দেশীয় রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যেসব উপকরন ও খুচরা যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদিত হয় না সেসব পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও. নং-১৭৬-আইন/২০২৫/৩০৪-মূসক) জারি করে এনবিআর।

এই শুল্ক নীতিমালাকে সাধুবাদ জানান দেশীয় ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন খাতের শিল্পোদ্যাক্তারা।

কিন্তু ২৪ জুনের আগের ওই এস.আর.ও এর সংশোধনী আরেকটি এস.আর.ও নং-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মুসক জারি করেছে এনবিআর।

সংশোধিত ওই এস.আর.ও তে ৮৪ দশমিক ১৮ শিরোনাম সংখ্যার অধীনে এইচ.এস কোড: ৮৪১৮ দশমিক ৯৯ দশমিক শূন্যের আওতায় দেশীয় রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের তালিকায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, এমন বেশ কয়েকটি নতুন যন্ত্রাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে, স্টোপার ব্লক, ডিয়োডোরেন্ট ব্লক, পিপি বটম প্লেট, ক্রিস্পার কভার, ড্রেইনেজ পাইপ কভার, কভার অফ কম্প্রেসার হাউজ, সাপোর্ট অব ক্রিস্পার কভার, কটন প্যাড ফর শেলফ, রেফ্রিজারেটর/ফ্রিজার শেলফ, পিপি বেল্ট এবং ডাম্পিং ব্লক।

এ ছাড়া শিরোনাম সংখ্যা ৮৫ দশমিক ৩৬ এর অধীনে এইচ.এস কোড- ৮৫৩৬ দশমিক ৬১ দশমিক শূন্যের অধীনে লাইট হোল্ডার যন্ত্রাংশ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ফ্রিজের পাশাপাশি দেশীয় এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রেও শিরোনাম সংখ্যা ৮৪ দশমিক ১৫ এর অধীনে এইচ.এস. কোড- ৮৪১৫ দশমিক ৯০ দশমিক ৯০ এর আওতায় দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্যান ব্লোয়ার, কানেকটিং পাইপ, এক্সিয়াল ফ্যান, ক্যাসিং ফর ইনডোর, এয়ার গাইড প্লেট, টিউব প্লেট, এয়ার ফিল্টার, আইডিইউ প্যানেল, ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ এবং ক্রস ফ্লো ফ্যান।

ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন শিল্পখাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার তালিকায় সংশোধিত এস.আর.ও তে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এসির যেসব উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি পণ্যেই এখন দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করছে। যদিও সংশোধনীর আগে জারি করা প্রথম এস.আর.ও এর শর্তাবলিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফ্রিজ ও এসি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের এই সুবিধা পাবে না।

এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের প্রশ্ন, যেসব দেশীয় ফ্রিজ ও এসি প্রতিষ্ঠান আমদানি বিকল্প উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করছে ও উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ এবং প্ল্যান্টস রয়েছে তবে কেন এবং কাদের স্বার্থে ওইসব যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলো? এই শুল্ক নীতিমালা দেশীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের জন্য কতটুকু সহায়ক? এই সিদ্ধান্তে এ খাতে খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি কি বাড়বে না? উৎপাদন শিল্পের আড়ালে কি সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ তৈরি হয়নি? এসব বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে স্থানীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের তৈরি করা সমজাতীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা বাতিল করার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা।

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিনিশড গুডসের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরিতে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই তো এত দিন ওইসব পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের উদ্যোক্তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও প্রোডাকশন প্ল্যান্টস আনুষঙ্গিক প্রায় সব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করছে।

এ খাতে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের এই বিশাল বিনিয়োগ সুযোগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত করতে যেখানে সরকারের উচিৎ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সমজাতীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পূরক শুল্কের হার আরও বাড়ানো; তার পরিবর্তে উল্টো সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। কোনো যুক্তিতে এবং কাদের স্বার্থে দেশীয় শিল্প বিকাশের পরিপন্থি, এমন এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও প্রোডাকশন প্ল্যান্টস থাকা সত্ত্বেও যেসব প্রতিষ্ঠান ওইসব পণ্য আমদানি করবে তাদের সঙ্গে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের আর কোনো পার্থক্যেই থাকবে না।

তাদের আশঙ্কা, এত দিন যেসব দেশীয় উৎপাদকরা ফ্রিজ ও এসির আনুষঙ্গিক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছে, সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করায় তাদের কাছে ওইসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের চেয়ে বরং আমদানি করাই বেশি লাভজনক হয়ে উঠবে। তাই তারা এখন আমদানি প্রতি ঝুঁকবেন। ফলে বাড়বে আমদানি ব্যয়, চাপে পড়বে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

এ ছাড়া এ খাতের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনেও আসবে না নতুন কোনো বিনিয়োগ। ফলে শুধু এ খাতের ভবিষ্যত বিনিয়োগই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও সংকুচিত হবে। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ফ্রিজ ও এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্ব সহকারে পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিল করা উচিৎ বলে অভিমত জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় শিল্প সংশ্লিষ্টদের অভিমত, দেশীয় উৎপাদনমুখী ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাতের টেকসই বিকাশের স্বার্থে এবং এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে ফ্রিজ, এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে সেসব আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে আগের মতো সন্তোষজনক হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি।

আন্তর্জাতিক

তুরস্ক আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর এজন্য সম্ভবত রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তারা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গত সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে আঙ্কারা জানায়, তারা আবারও এফ-৩৫ জেট প্রকল্পে যোগ দিতে ইচ্ছুক এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্মেলনে তুরস্ক তাদের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’ সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে যেখান থে কে বাদ পড়তে যাছে রাশিয়ান এস-৪০০ সিস্টেম।

সম্মেলন শেষে বিমানযাত্রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘স্টিল ডোম’ একটি একক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা দেবে।

যদিও ‘স্টিল ডোম’ বেশ কিছুদিন ধরেই পরিকল্পনায় রয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তুরস্কের ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর, সম্পূর্ণ একীভূত নেটওয়ার্ক, যা দেশীয় অস্ত্র ও সেন্সরগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করবে। তবে ২০১৯ সালে কেনা রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমটি এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০ একটি বিদেশি প্রযুক্তি হওয়ায় এটি স্টিল ডোমের তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে পারে।

তবে তুরস্কের নতুন ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের রুশ নির্মিত এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রামে পুনরায় যুক্ত হওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্ক এখনো এফ-৩৫ প্রকল্পে ফেরার আগ্রহ হারায়নি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এই বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা হয়েছে।

২০১৯ সালে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে তুরস্কের বহিষ্কারের পাঁচ বছর পরেও, তুরস্কের এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টুসাস) এখনও সংবেদনশীল এফ-৩৫ উৎপাদন সরঞ্জাম সংরক্ষণ করছে। বহিষ্কারের আগে, টুসাস এফ-৩৫ ফাইটারের ফিউজেলাজ বা মাঝের অংশ তৈরি করত, যার উৎপাদন ২০২২ পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২৩ সালে, এফ-৩৫ ফাইটারের মূল প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যান জার্মানির রেইনমেটাল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে জার্মানির উইজে শহরে একটি নতুন অ্যাসেম্বলি লাইন স্থাপন করছে যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি চালু হওয়ার কথা। তুরস্কের কোম্পানিগুলো আগে এফ-৩৫ এর ১,০০০-এর বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।

এদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক ২৯ জুন জানান, এস-৪০০ কেনার কারণে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা তাদের শীর্ষ কূটনীতিকদের বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সব কিছু বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক বছরের শেষ নাগাদ আবারও এফ-৩৫ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারে, আর এস-৪০০ হয়তো কোনো তৃতীয় দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হবে অথবা চিরতরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তুরস্কে পড়ে থাকবে।

তুরস্কের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার নিশ্চিত করেছেন, এস-৪০০ এখনো সক্রিয় নয় এবং একটি অজ্ঞাত স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী চাভিত চাগলার এই এস-৪০০ বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তান বা ভারতকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উল্লেখ করেন, যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সবমিলিয়ে আঙ্কারা এখন নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যেখানে এস-৪০০ এর ব্যবহার হচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিনোদন

বলিউড সিনেমার ইতিহাসে চিরন্তন এক নাম ‘শোলে’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা শুধু এক দশক নয়, পেরিয়ে এসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। ‘জয়-বীরু’, ‘ঠাকুর’, ‘গব্বর’ কিংবা ‘সুন্নি’র মত চরিত্র ও সংলাপ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

চলতি বছর সিনেমাটির মুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতালির বোলোনিয়া শহরে ‘ইল সিনেমা রিট্রোভাতা’ উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হচ্ছে ‘শোলে’র নতুন ‘আনকাট’ সংস্করণ। এই সংস্করণে থাকবে সেই আসল সমাপ্তি, যা এক সময় সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সেন্সরে কাটা সেই দৃশ্য ফিরল

মূল সংস্করণে ছিল ডাকাত গব্বর সিংয়ের মৃত্যুদৃশ্য—ঠাকুর তার কাঁটা লাগানো জুতা দিয়ে পিষে হত্যা করেন গব্বরকে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এই দৃশ্য ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর’ এবং ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত’ বলে তা বাদ দিতে বলে। তখনকার জরুরি অবস্থার সময় সেন্সর বোর্ড ছিল বেশ কঠোর। বাধ্য হয়ে পরিচালক সিপ্পি সমাপ্তি দৃশ্য নতুন করে ধারণ করেন, যেখানে গব্বরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শোলে’র মূল ৭০ মিমি প্রিন্ট ও নেগেটিভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিনেমাটির পূর্ণ সংস্করণ ফিরিয়ে আনতে তিন বছর লেগেছে। রমেশ সিপ্পির ছেলে শেহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, মুম্বাইয়ের একটি গুদামে পুরনো কৌটায় কিছু ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ পাওয়া গেছে। সেগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইতালি থেকে উদ্ধার করা রিল জুড়ে তৈরি করা হয় পূর্ণ সংস্করণ। পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে লা ইমাজিনে রিট্রোভাতা, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ম রিস্টোরেশন কেন্দ্র।

প্রথম সপ্তাহে ‘শোলে’র প্রতিক্রিয়া ভালো ছিল না। দর্শকেরা চুপচাপ বসে থাকতেন, সমালোচকেরাও বলেছিলেন সিনেমাটি ব্যর্থ। ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন একে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা’, আর ফিল্মফেয়ার–এ লেখা হয়েছিল এটি ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি ব্যর্থ ওয়েস্টার্ন রূপান্তর।’

তবে তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানো। দর্শকেরা সংলাপ মুখস্থ বলতে থাকেন, দ্বিতীয়বার সিনেমা দেখতে আসেন। এক মাস পর যখন একটি সংলাপ রেকর্ড প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই চরিত্রগুলো হয়ে ওঠে আইকনিক। গব্বর সিং হয়ে ওঠেন ভয়ংকর জনপ্রিয়।

‘শোলে’ টানা পাঁচ বছর মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে চলেছে—তিন বছর পূর্ণ দৈর্ঘ্যে, দুই বছর ম্যাটিনি শোতে। প্রায় ১৮ কোটি টিকিট বিক্রি হয়েছিল, এমনকি ২৪০তম সপ্তাহেও শো ছিল হাউসফুল। ২০১৫ সালে এটি মুক্তি পায় পাকিস্তানেও।

সিনেমার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা

‘শোলে’ কেবল একটি সিনেমা নয়—এটি হয়ে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়ের মঞ্চে, রাজনীতির বক্তৃতায় এমনকি বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেলিম-জাভেদ জুটির লেখা চিত্রনাট্য ও সংলাপ, পশ্চিমা ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একদম ভারতীয় মাটির গল্প হয়ে উঠেছে ‘শোলে’।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ও সমালোচকরা একে বলেন ‘ভারতীয় সিনেমার মিলেনিয়াম ফিল্ম।’ বিবিসি ইন্ডিয়ার এক জরিপে এটিকে ‘ফিল্ম অব দ্য মিলেনিয়াম’ ঘোষণা করা হয়, আর ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের এক ভোটে এটি হয় সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমা।

ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘শোলে হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য।’

অমিতাভ বচ্চনের কথায়, ‘এই সিনেমার শুটিং আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। তখন বুঝিনি এটি একদিন এমন কিংবদন্তি হবে।’

৫০ বছর পর এই সিনেমার আবেদন এখনো এতটাই অটুট কেন—এই প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ বলেন, ‘শোলে-তে দর্শক ন্যায়ের বিজয় দেখেছেন মাত্র তিন ঘণ্টায়। সেটা এমন কিছু, যা আমরা বাস্তবে হয়তো আজীবনেও দেখতে পাব না।’

সত্যিই, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘শোলে’ শুধু এক সিনেমা নয়—এটি একটি অধ্যায়। পঞ্চাশ বছর পর সেই অধ্যায় ফিরে এল আরও পরিপূর্ণ রূপে।

রাজনীতি

ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর ও ধাক্কা-মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে এক হোটেল কর্মচারীকে আটক করে পরে জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে শহরের টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, শহরের আর্ট গ্যালারিতে দলীয় কর্মসূচি শেষে মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে পীরগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রাকালে মসজিদ থেকে কিছু দূরে টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রমের সময় পেছন দিক থেকে একটি আন্তঃজেলা বাস এসে তাদের বহরের একটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়।

এতে গাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে যায় এবং এনসিপির এক কর্মীসহ চালক সামান্য আহত হন। ঘটনার পর এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে বাসচালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।

এ সময় ইরফান (২৮) নামে এক যুবক পরিস্থিতি থামাতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং এনসিপির একটি মাইক্রোবাসের চাবি খুলে নিয়ে যান। কিছু সময় পর আবার সেটি ফেরত দেন।

ইরফান বর্তমানে গাউছিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কর্মরত, তবে আগে বাসশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশ পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এনসিপির এক নেতার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ার আলম খান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং ইরফান নামে এক যুবককে আটক করি। পরে এনসিপির এক নেতার জিম্মায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এনসিপির ঠাকুরগাঁও জেলা মুখপাত্র মোহাম্মদ রায়হান অপু বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ইরফান মূলত ভুল বোঝাবুঝিতে জড়িয়ে পড়ে, পরে নিজেই বিষয়টি বুঝে চাবি ফিরিয়ে দেন।