বিনোদন

৫০ বছর পূর্তিতে বাদ পড়া দৃশ্য নিয়ে ফের মুক্তি পাচ্ছে ‘শোলে’

বলিউড সিনেমার ইতিহাসে চিরন্তন এক নাম ‘শোলে’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা শুধু এক দশক নয়, পেরিয়ে এসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। ‘জয়-বীরু’, ‘ঠাকুর’, ‘গব্বর’ কিংবা ‘সুন্নি’র মত চরিত্র ও সংলাপ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

চলতি বছর সিনেমাটির মুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতালির বোলোনিয়া শহরে ‘ইল সিনেমা রিট্রোভাতা’ উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হচ্ছে ‘শোলে’র নতুন ‘আনকাট’ সংস্করণ। এই সংস্করণে থাকবে সেই আসল সমাপ্তি, যা এক সময় সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সেন্সরে কাটা সেই দৃশ্য ফিরল

মূল সংস্করণে ছিল ডাকাত গব্বর সিংয়ের মৃত্যুদৃশ্য—ঠাকুর তার কাঁটা লাগানো জুতা দিয়ে পিষে হত্যা করেন গব্বরকে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এই দৃশ্য ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর’ এবং ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত’ বলে তা বাদ দিতে বলে। তখনকার জরুরি অবস্থার সময় সেন্সর বোর্ড ছিল বেশ কঠোর। বাধ্য হয়ে পরিচালক সিপ্পি সমাপ্তি দৃশ্য নতুন করে ধারণ করেন, যেখানে গব্বরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শোলে’র মূল ৭০ মিমি প্রিন্ট ও নেগেটিভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিনেমাটির পূর্ণ সংস্করণ ফিরিয়ে আনতে তিন বছর লেগেছে। রমেশ সিপ্পির ছেলে শেহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, মুম্বাইয়ের একটি গুদামে পুরনো কৌটায় কিছু ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ পাওয়া গেছে। সেগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইতালি থেকে উদ্ধার করা রিল জুড়ে তৈরি করা হয় পূর্ণ সংস্করণ। পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে লা ইমাজিনে রিট্রোভাতা, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ম রিস্টোরেশন কেন্দ্র।

প্রথম সপ্তাহে ‘শোলে’র প্রতিক্রিয়া ভালো ছিল না। দর্শকেরা চুপচাপ বসে থাকতেন, সমালোচকেরাও বলেছিলেন সিনেমাটি ব্যর্থ। ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন একে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা’, আর ফিল্মফেয়ার–এ লেখা হয়েছিল এটি ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি ব্যর্থ ওয়েস্টার্ন রূপান্তর।’

তবে তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানো। দর্শকেরা সংলাপ মুখস্থ বলতে থাকেন, দ্বিতীয়বার সিনেমা দেখতে আসেন। এক মাস পর যখন একটি সংলাপ রেকর্ড প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই চরিত্রগুলো হয়ে ওঠে আইকনিক। গব্বর সিং হয়ে ওঠেন ভয়ংকর জনপ্রিয়।

‘শোলে’ টানা পাঁচ বছর মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে চলেছে—তিন বছর পূর্ণ দৈর্ঘ্যে, দুই বছর ম্যাটিনি শোতে। প্রায় ১৮ কোটি টিকিট বিক্রি হয়েছিল, এমনকি ২৪০তম সপ্তাহেও শো ছিল হাউসফুল। ২০১৫ সালে এটি মুক্তি পায় পাকিস্তানেও।

সিনেমার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা

‘শোলে’ কেবল একটি সিনেমা নয়—এটি হয়ে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়ের মঞ্চে, রাজনীতির বক্তৃতায় এমনকি বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেলিম-জাভেদ জুটির লেখা চিত্রনাট্য ও সংলাপ, পশ্চিমা ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একদম ভারতীয় মাটির গল্প হয়ে উঠেছে ‘শোলে’।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ও সমালোচকরা একে বলেন ‘ভারতীয় সিনেমার মিলেনিয়াম ফিল্ম।’ বিবিসি ইন্ডিয়ার এক জরিপে এটিকে ‘ফিল্ম অব দ্য মিলেনিয়াম’ ঘোষণা করা হয়, আর ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের এক ভোটে এটি হয় সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমা।

ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘শোলে হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য।’

অমিতাভ বচ্চনের কথায়, ‘এই সিনেমার শুটিং আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। তখন বুঝিনি এটি একদিন এমন কিংবদন্তি হবে।’

৫০ বছর পর এই সিনেমার আবেদন এখনো এতটাই অটুট কেন—এই প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ বলেন, ‘শোলে-তে দর্শক ন্যায়ের বিজয় দেখেছেন মাত্র তিন ঘণ্টায়। সেটা এমন কিছু, যা আমরা বাস্তবে হয়তো আজীবনেও দেখতে পাব না।’

সত্যিই, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘শোলে’ শুধু এক সিনেমা নয়—এটি একটি অধ্যায়। পঞ্চাশ বছর পর সেই অধ্যায় ফিরে এল আরও পরিপূর্ণ রূপে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *