রাজনীতি

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের পথে প্রধানমন্ত্রী

প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দেবেন।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থানীয় সময় রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৯১০ ভিভিআইপি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।

নিউইয়র্ক সফরকালে ২০ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস এবং সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুত পাহরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

২০ সেপ্টেম্বর নারী নেতাদের নিয়ে জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

২১ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলেমে ল্যাসো মেন্ডেজো, কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী সাদ্রিউ এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে ‘টেকসই গৃহায়ন’ বিষয়ে একটি অনুষ্ঠান এবং ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন’ শীর্ষক সভায় অংশ নেবেন। এছাড়া জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পদ্মা সেতুর স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন তিনি।

২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে গোলটেবিল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক একটি বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এছাড়া তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন আইওএম এর মহাপরিচালক অ্যান্তেনিও ভিটোরিনো, আইসিসি প্রসিকিউটর নিক ক্লেগ ও করিম খান।

২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপরবিকেলে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবেন এবং অক্টোবরের দুই তারিখ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগ দিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের সংবর্ধনা এবং রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেন।

ওয়াশিংটন থেকে দুই অক্টোবর রওয়ানা হয়ে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দিয়ে আগামী ৪ অক্টোবর রাতে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

ব্রিটিশ রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ কয়েকশ বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে যোগ দেন।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের দেওয়া অভ্যর্থনায় যোগ দেন। রাজা চার্লস ও কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা পার্কার রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও রাজাদের সম্মানে এ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও এ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-যে ভবনটিতে রানি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং রাজমুকুটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন, সেখানেই সোমবার তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় পতাকায় ঢাকা তার কফিনের ওপর রাখা হয় রাজকীয় মুকুট। কফিনটি রাজকীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা কামানবাহী গাড়িতে টেনে গির্জায় নিয়ে আসেন। এদিন বাকিংহাম প্যালেসের আশপাশের রাস্তায় বিষণ্ন পরিবেশে স্থানীয় অধিবাসীরা সবযাত্রা দেখার জন্য সমবেত হন। অন্তিমযাত্রায় রানির কফিনটি লন্ডনের মধ্য দিয়ে এবং দ্বিতীয় পরিষেবার জন্য উইন্ডসর ক্যাসেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসে যান। সেখানে তিনি রানির মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ল্যাঙ্কাস্টার হাউজে একটি শোক বইতে স্বাক্ষর করেন। শেখ রেহানাও শোক বইতে স্বাক্ষর করেন।

১৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন এবং বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও তার সঙ্গে রয়েছেন।

এদিকে রাজা তৃতীয় চার্লসের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রিন্স উইলিয়াম, কেট মিডলটন, প্রিন্স এডওয়ার্ড, সোফি উইসাক্স, প্রিন্সেস অ্যানি, তার স্বামী ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার টিম লরেন্স ও ডিইক অ্যান্ড ডাচেস অব গ্লুসেস্টারসহ রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম সাংবাদিকদের বলেন, অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রাজা ও কুইন কনসোর্টের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তারা নতুন রাজার মা প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে কথা বলেন।

মুনা শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কেবল নতুন রাজা চার্লসের মাই ছিলেন না, তিনি তার কাছেও একজন মায়ের মতো ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নতুন রাজা ও কুইন কনসোর্টকে অভিনন্দন জানান। মুনা উল্লেখ করেন, রাজা ও কুইন কনসোর্ট উভয়েই অক্টোবরে তাদের পূর্বনির্ধারিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তার উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনার বলেন, কুইন কনসোর্ট বলেছেন যে, তার সিলেট ও সুন্দরবন সফরের পরিকল্পনা ছিল।

মুনা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, নেদারল্যান্ডসের রানি, ভারত ও নেপালের প্রেসিডেন্ট এবং বিশ্বের অন্য নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *