রাজনীতি

আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে: জামায়াত আমির

আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা পদ্মা সেতু তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে কমপক্ষে চারটা পদ্মা সেতু তৈরি করা যেতো। তাহলে বাকি তিনটা গেলো কোথায়? হিসাব একেবারেই পরিষ্কার। দেশের টাকা দিয়ে যারা বিদেশে ‘বেগমপাড়া’ গঠন করেছেন, তারাই এই টাকা চুরি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. শফিকুর রহমান।

কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়াদ্দরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেখানেই মেগা প্রকল্পের কথা হয়েছে, সেখানেই মেগা দুর্নীতি হয়েছে। স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত এই (২০২৪) সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে নিজেদের বাপ-দাদার তালুক মনে করতেন, তারা চেতনার কথা বলতেন। চেতনার কথা বলে বলে এই জাতিকে তারা লুণ্ঠন করেছেন, গণহত্যা চালিয়েছেন। তাদের সন্তানরা আকাম-কুকাম করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছেন। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে তারা বিদেশে পাচার করেছেন। শুধু তাদের গত সাড়ে ১৫ বছরের আমলে যার হিসাব বেরিয়ে এসেছে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের প্রায় পাঁচগুণ।

জামায়াত আমির বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পিওনের অ্যাকাউন্টে ছিল সাড়ে চারশ কোটি টাকা? পিওনের যদি এত টাকা হয় মালিকের কত টাকা? হ্যাঁ, মালিকের টাকাও বের হয়ে আসছে। আপনাদের একেবারেই নিকটে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র। এখান থেকে মালিকের পরিবার শুধু একটা প্রকল্প থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এভাবে যেখানেই মেগা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই মেগা ডাকাতি করা হয়েছে।’

সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার এ কে এম আলী মুহসিন, ড. আলমগীর বিশ্বাস, মাওলানা আবদুল মতিন, ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আজম মোহাম্মদ আবু বক্কর, পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল, মেহেরপুর জেলা আমির তাজউদ্দিন খান, মাগুরা জেলা আমির এবিএম বাকের, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, রাজবাড়ী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইমরান হোসাইন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র নাথ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার চাই। আমরা বৈষম্য চাই না। আমরা আমাদের গর্বের সন্তানদের কথা দিচ্ছি, তোমরা যেমন জীবন দিয়ে জাতিকে আরেকবার স্বাধীনতা এনে দিয়েছো, আমরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে তোমাদের দাবি পূরণ করবো ইনশাআল্লাহ।

এর আগে মুফতি আমীর হামজার অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে কিছুক্ষণ পরপর ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন জেলার সাংস্কৃতিক শিল্পীরা। বেলা ১১টার দিকে জামায়াতের আমির মঞ্চে ওঠেন।

আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করেছে। ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক ডাকাতি করেছেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা বোনের মেয়ে লন্ডনের এমপি বানিয়েছেন। ভাগ্যক্রমে তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এখন তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছিল তাদের ইনকাম সোর্সের জায়গা আর কলিজা ছিল অন্য দেশে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান দেশে নেই। সবার ঠিকানা বেগমপাড়ায়। তারা দেশকে যদি ভালোবাসতো তাহলে তারা দেশেই থাকতেন।

শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘শেষ করবে না কেন? তাদের সন্তানতো এদেশে লেখাপড়া করে না। তিলে তিলে শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে জাতির মেরুদণ্ডকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীরা কোটাজালে বন্দি, যা পৃথিবীর কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেট করেছিল। আমরা সরকারকে বলেছি, এই সিন্ডিকেটের হাত ভেঙে দিতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ওপর আর অর্থনৈতিক শোষণ চালানো যাবে না। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আপনারা নামুন। ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের সঙ্গে নামবে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *