জাতীয়

আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ ঘিরে উত্তেজনা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের পর এবার আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা। এ কর্মসূচি ঘিরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করায় সীমান্তে উভয় দেশ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল বুকিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আগরতলায় কোনো বাংলাদেশি যাত্রীকে হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। হোটেল থেকে তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

হয়রানি ও মারধরের অভিযোগও করেছেন দেশে আসা যাত্রীরা। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়ে তারা উলটো হয়রানির শিকার হন। দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

আখাউড়া সীমান্তের ওপারে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ও ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ব্যানার-প্ল্যাকার্ডসহ মিছিল নিয়ে মিছিলকারীরা আগরতলা-আখাউড়া সড়ক হয়ে আগরতলা ইমিগ্রেশন সীমান্তে সমাবেশ করার কথা থাকলেও তারা তা করতে পারেনি। আগরতলা রবীন্দ্র ভবনের সামনে বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করলেও সীমান্তে আসতে দেওয়া হয়নি। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের দুই কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বাঁশের বেড়া দিয়ে তারা তাদের বাধা দেয়। ত্রিপুরার হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সভায় রাজ্যের সব হোটেল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অ্যাসোসিয়েশেনের সচিব সৈকত ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এবং বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে রাজ্যের সব হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশিদের পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের কোনো ধরনের পরিষেবা দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে ভারত থেকে আসা কয়েকজন বাংলাদেশি যাত্রী যুগান্তরকে জানান, যারা আগরতলায় গেছেন তাদের শহরের ভেতরে কোনো হোটেল ভাড়া দেওয়া হয়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে গিয়ে স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলেও বাংলাদেশি পরিচয় পেলে কিছু বিক্রি করা হচ্ছে না, উলটো হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ভ্রমণরত বাংলাদেশিরা। এছাড়া আগরতলা ইমিগ্রেশনেও বাংলাদেশি যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, আগরতলা ও শিলচরে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে তিনি জামদানি শাড়ির স্টল দিয়েছিলেন। সোমবার রাতে একদল যুবক আগরতলার মেলায় তার দোকানে ঢুকে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে দোকান ভাঙচুর করে এবং ক্যাশ লুট করে। এরপর দোকান কর্মচারীদের মেলা থেকে বের করে দেয়। এরপর দোকান কর্মচারীদের নিয়ে তিনি হোটেলে চলে আসেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের হোটেল থেকেও বের দেওয়া হয়। বলা হয় হোটেলে থাকলে আমাদের মেরে ফেলবে। তোমরা চলে যাও। এরপর হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে সারা রাত পার করি।

সোমবার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় যান কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ফরিদ মিয়া। তিনি জানান, সেখানে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। বাংলাদেশি ও মুসলিম হওয়ায় হোটেল ভাড়া নেওয়ার এক ঘণ্টা পরই তাকে হোটেল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হোটেল থেকে বের করে দিলেও ফেরত দেওয়া হয়নি ভাড়ার টাকা। তিনি জানান, পরে বাধ্য হয়ে শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়ে দিনভর চেষ্টার পর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরে আসেন।

আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল আলম জানান, ভারত ফেরত যাত্রীদের অভিযোগ তাদের হোটেল ভাড়া দেওয়া হয়নি এবং ইমিগ্রেশনেও হয়রানি করা হয়েছে। এসব কারণে মঙ্গলবার যাত্রী পারাপার সীমিত ছিল। বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এএম জাবের বিন জব্বার জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে সর্তকাবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *