অর্থনীতি

আটকে আছে বৈদেশিক ঋণের ৩৬ হাজার কোটি টাকা

প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ আটকে আছে। আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেওয়ার কথা। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর অংশ হিসাবে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। ঋণদাতা সংস্থা হলো-বিশ্বব্যাংক এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোববার বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বৈদেশিক অর্থ আছে এমন প্রকল্প সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদন করে দিচ্ছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পরই বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের এখন বৈদেশিক অর্থায়ন দরকার। সেখানে প্রতিশ্রুতি আছে এমন প্রকল্প দেরি করাটা যৌক্তিক নয়।

সূত্র জানায়, মূলত চলমান সংকটের কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা নিয়মিত না হওয়ায় কাজের গতি মন্থর হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোর সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) যথাসময়ে পাঠাচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প প্রস্তাব পাওয়ার পর ৫৫ দিনের মধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করার নিয়ম। কিন্তু প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে না করায় মন্ত্রণায় ও বিভাগগুলো পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারেনি।

ইআরডি সূত্র জানায়, হায়ার এডুকেশন অ্যাক্সিলারেশন ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা; ‘অ্যাক্সিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া-বাংলাদেশ ফেইজ-১’ প্রকল্পের জন্য ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা এবং ‘অভিযোজন ও দুর্বলতা হ্রাসের জন্য স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো’ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু ‘অভিযোজন এবং দুর্বলতা হ্রাসের জন্য স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো’ প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

বিশ্বব্যাংকের বাইরে জাইকার অর্থায়ন করা তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা প্রায় ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ এখনো চুক্তি পর্যায়ে যেতে পারছে না। প্রকল্পগুলো হলো-মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (৮০ কোটি ডলার); চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (৪২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার) এবং জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প (৩ কোটি ২১ লাখ ডলার ঋণ)। ইআরডি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত নিয়ম হলো যে কোনো প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ থাকলে চুক্তির আগে সেটি একনেকে বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন হতে হয়। অনুমোদনের পরই ঋণ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে।

সূত্র আরও জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাসমান সুদহার বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ছয় মাসের এসওএফআর সুদহার ৪ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। ফলে সরকার ভাসমান সুদহারে ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সরকার নমনীয় ঋণও কাজে লাগাতে পারছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *