চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে আবার হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল ভারত।
গ্রুপ পর্বে ব্যাটে-বলে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর এবার সংগ্রহটা ভালোই পেল পাকিস্তান। কিন্তু বোলিং ও ফিল্ডিং ভালো হলো না তাদের। আভিশেক শার্মা ও শুবমান গিলের বিস্ফোরক জুটিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের আবারও অনায়াসে হারিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর যাত্রা শুরু করল ভারত।
টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলের জয় ৬ উইকেটে। দুবাইয়ে রোববার ১৭২ রানের লক্ষ্য ৭ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
এই সংস্করণে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১৫ ম্যাচের ১২টিতেই জিতল ভারত (২০০৭ বিশ্বকাপে টাই ম্যাচে পরে টাইব্রেকারে জয়সহ)। সবশেষ চার ম্যাচে ভারতের জয় সবকটিতে।
সব সংস্করণ মিলিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের লড়াইয়ে ফল হওয়া সবশেষ সাত ম্যাচের সবগুলোই জিতল ভারত।
প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৯১ রান করা পাকিস্তান মাঝে কয়েকটি উইকেট হারানোয় রানের গতিও কমে যায়। শেষ তিন ওভারে ৪২ রান নিয়ে ১৭১ রানের পুঁজি গড়তে পারে তারা।
ভারতের ফিল্ডিং হয় খুব বাজে। ক্যাচ ফেলে তারা চারটি। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর প্রথমবার কোনো ম্যাচে এত বেশি ক্যাচ হাতছাড়া করল তারা।
শূন্য রানে জীবন পেয়ে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন সাহিবজাদা ফারহান।
বোলিংয়ে পাকিস্তান লড়াই জমাতেই পারেনি কখনও। তারা ক্যাচ ফেলে দুটি। ৯ ও ৪০ রানে জীবন পেয়ে ৩৯ বলে ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন আভিশেক। ৫ ছক্কা ও ৬ চারে গড়া ইনিংসে ম্যাচ-সেরা তিনিই। ৮ চারে ২৮ বলে ৪৭ রান করেন গিল।
এই দুজনের শুরুর জুটিতে ১০৫ রান আসে স্রেফ ৫৯ বলে। এবারের এশিয়া কাপে যে কোনো উইকেটে কোনো দলের প্রথম একশ রানের জুটি এটি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডও লেখা হলো নতুন করে। ২০১২ সালে বেঙ্গালুরুতে ৭৭ রানের জুটি গড়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে ও ভারতের বর্তমান কোচ গৌতাম গাম্ভির।
গ্রুপ পর্বে এই দুই দলের লড়াইয়ে যে ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছিল তুমুল বিতর্ক, সেটির পুনরাবৃত্তি ঘটে এবারও। যথারীতি টসের সময় ও ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতীয়রা।
আগের দেখায় ১২৭ রান করে ৭ উইকেটে হারা পাকিস্তান এবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারাতে পারত। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়ার বলে থার্ড ম্যানে সাহিবজাদার ক্যাচ ফেলেন আভিশেক।
তৃতীয় ওভারে বিতর্কিত আউটে বিদায় নেন ফাখার জামান। পান্ডিয়ার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিপার সাঞ্জু স্যামসন ক্যাচ ঠিকভাবে নিয়েছেন নাকি বল তার গ্লাভসে জমা হওয়ার আগে মাটিতে পড়েছে, তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। মাঠের আম্পায়ার সিদ্ধান্ত পাঠান টিভি আম্পায়ারের কাছে।
দুই অ্যাঙ্গেল থেকে রিপ্লে দেখার পর ব্যাটসম্যানকে আউট দেন টিভি আম্পায়ার। তারপর অবশ্য যথেষ্ট সংশয় ছিল আউটটি নিয়ে। বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল ফাখারকে। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে বড় স্কিনে রিপ্লে দেখেও গজরাতে থাকেন তিনি।
টানা তিন ও ছয় ইনিংসের মধ্যে চারটিতে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর সাইম আইয়ুব এ দিন রানের দেখা পান চার মেরে। ওই ৪ রানেই আউট হতে পারতেন তিনি, কিন্তু শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ফেলেন কুলদিপ ইয়াদাভ।
জীবন পাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের জুটি এরপর জমে ওঠে। প্রথম ৬ ওভারে পাকিস্তান করে ১ উইকেটে ৫৫। এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান এটি। ২০১২ সালে আহমেদাবাদে বিনা উইকেটে ৫৪ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
পাওয়ার প্লের পর দুই প্রান্তে স্পিনারদের আক্রমণে এনেও সুবিধা করতে পারছিল না ভারত। কুলদিপের একই ওভারে একটি করে ছক্কা মারেন দুই ব্যাটসম্যান। ভারুন চক্রবর্তি ও আকসার প্যাটেলকেও ছক্কায় ওড়ান সাহিবজাদা। ফিফটি করেন তিনি ৩৪ বলে।
৪৯ বলে ৭২ রানের জুটি ভাঙেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার শিভাম দুবে। সাইমের (১৭ বলে ২১) দারুণ ক্যাচ নেন আভিশেক।
এই জুটি ভাঙার পরই মূলত কমে যায় রানের গতি। টানা ৩৯ বলে কোনো বাউন্ডারি পায়নি পাকিস্তান। চারে নেমে টিকতে পারেননি হুসাইন তালাত। পরের ওভারে সাহিবজাদাকে থামিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন দুবে।
সালমান আলি আগা ও মোহাম্মদ নাওয়াজের জুটিতে দেড়শর দুয়ারে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। ১৯ বলে ২১ রান করে দৃষ্টিকটুভাবে রান আউট হন নাওয়াজ।
ফাহিম আশরাফ প্রথম বলে ছক্কা মেরে পরের বলে জীবন পান গিল সহজ ক্যাচ ফেলে দেওয়ায়। ইনিংসের শেষ বলে ফাহিমের আরেকটি ছক্কায় ১৭১ পর্যন্ত যেতে পারে পাকিস্তান।
এক ম্যাচের বিশ্রাম কাটিয়ে ফেরা জাসপ্রিত বুমরাহ ও ভারুনের কেউ উইকেটের দেখা পাননি। স্পিনার ভারুন নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও বুমরাহ চার ওভারে দেন ৪৫ রান।
রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ছক্কায় উড়িয়ে শুরু করেন আভিশেক। আফ্রিদির পরের ওভারে আউট হতে পারতেন তিনি, কিন্তু মিড উইকেটে ক্যাচ নিতে পারেননি নাওয়াজ।
গিলের সঙ্গে জমে ওঠে আভিশেকের জুটি। পাওয়ার প্লেতে আসে বিনা উইকেটে ৬৯ রান।
পরের ওভারে আভিশেককে ফেরানোর সুযোগ আসে আরেকটি, এবার বাউন্ডারিতে ক্যাচ হাতছাড়া করে ছক্কা বানিয়ে দেন সাহিবজাদা।
দুই দফায় জীবন পেয়ে বাঁহাতি ওপেনার ফিফটি করেন স্রেফ ২৪ বলে। এই দুই দলের লড়াইয়ে টি-টোয়েন্টিতে তার চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে কেবল পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজের, ২০১২ সালে ২৩ বলে।
নবম ওভারেই জুটির রান স্পর্শ করে একশ। পরের ওভারে পানি-পানের বিরতির পর প্রথম বলে গিলকে বোল্ড করে বড় জুটি ভাঙেন ফাহিম।
সুরিয়াকুমারকে শূন্য রানে ফেরান হারিস রউফ। আবরার আহমেদকে ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় আভিশেকের দুর্দান্ত ইনিংস।
স্যামসন ১৩ রান করে ফেরার পর বাকিটা সারেন তিলাক ভার্মা ও পান্ডিয়া। আফ্রিদিকে পরপর ছক্কা ও চারে ম্যাচের ইতি টানেন তিলাক (১৯ বলে ৩০*)।
বিস্ময়করভাবে মোহাম্মদ নাওয়াজকে বোলিংয়ে আনেনি পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭১/৫ (সাহিবজাদা ৫৮, ফাখার ১৫, সাইম ২১, তালাত ১০, নাওয়াজ ২১, সালমান ১৭*, ফাহিম ২০*, পান্ডিয়া ৩-০-২৯-১, বুমরাহ ৪-০-৪৫-০, ভারুন ৪-০-২৫-০, কুলদিপ ৪-০-৩১-১, আকসার ১-০-৮-০, দুবে ৪-৩৩-২)
ভারত: ১৮.৫ ওভারে ১৭৪/৪ (আভিশেক ৭৪, গিল ৪৭, সুরিয়াকুমার ০, তিলাক ৩০*, স্যামসন ১৩, পান্ডিয়া ৭*; আফ্রিদি ৩.৫-০-৪০-০, সাইম ৩-০-৩৫-০, আবরার ৪-০-৪২-১, হারিস ৪-০-২৬-২, ফাহিম ৪-০-৩১-১
ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশেক শার্মা