জাতীয়

আরেক দফা বেড়েছে রোজার পণ্যের দাম

সপ্তাহের ব্যবধানে রোজায় ব্যবহৃত পণ্য- ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের মসলা পণ্যের দামও বাড়তি। এছাড়া প্রতি কেজি আলু কিনতে ক্রেতা সাধারণের ফের ৫ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বলছে, খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে টিসিবি জানায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলার দাম ৫.৪১ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুগ ডালের দাম বেড়েছে ১৩.৪৬ শতাংশ, প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ১.৯৬ শতাংশ, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩.৩৩ শতাংশ, রসুন ১২.৫০ শতাংশ, হলুদ ৩.১৭ শতাংশ, দারুচিনি ৩ শতাংশ, এলাচ ১.০৫ শতাংশ ও প্রতি কেজি আলু ৫.৫৬ শতাংশ দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। যা ৭ দিন আগে ৯৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ১৬০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা সপ্তাহ আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। যা ৭ দিন আগে ১৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আলু গত সপ্তাহে ৪০ টাকায় কেনা গেলেও বৃহস্পতিবার ৪৫ টাকায় কিনতে হয়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আবু হুসাইন বলেন, বাজারে দেখা যাচ্ছে প্রতি সপ্তাহেই একটু একটু করে রোজার পণ্যের দাম বাড়ছে। কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। তদারকি সংস্থাও এক প্রকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। আর এ সুযোগে অসাধু বিক্রেতারা পাল্লা দিয়ে দফায় দফায় রোজার পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। মনে হচ্ছে প্রতিবছরের মতো এবারও রোজায় বাড়তি দরে পণ্য কিনতে হবে। আর অতি মুনাফা করবে শক্তিশালী সেই সিন্ডিকেট।

একই বাজারে মুদি পণ্য বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, পাইকারি আড়তে দুই মাস আগ থেকেই রোজার পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। যে কারণে বাড়তি দরে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এখনই তদারকি না করা হলে দাম সামনে আরও বাড়বে।

রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ২৩০০ টাকা ছিল।

রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সোহেল বলেন, বাজারে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ে আর আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতার ঘুম হারাম হয়। যারা এসব বিষয়ে দেখবে তারা যেন নির্বিকার। মন্ত্রীরা শুধু কথার মাধ্যমে মিডিয়া গরম করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। সবকিছুই কথায়, কাজে কিছুই হয় না। আমাদের মতো ক্রেতাদের বাড়ে ভোগান্তি। আর এ ভোগান্তি কখনো শেষ হয় না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটু সদয় নজর দিতে হবে। একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে রোজার পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু বাজারে দৃশ্যমান নজরদারি দেখা যাচ্ছে না। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের উচিত কঠোরভাবে বাজারে তদারকি করা। কোনো অনিয়ম পেলে অসাধুদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া।

বৃহস্পতিবার বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ঘিরে তদারকি চলমান রয়েছে। শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরই নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য অধিদপ্তরও বাজারে তদারকিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ইতোমধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আবার কিছু পণ্যের দাম কেন বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সময় কোনো অনিয়ম পেলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *