দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ রোববার। জন্মলগ্ন থেকে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন তথা শত সংকট মোকাবিলা এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পথ অতিক্রম করে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে দলটি। এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের হাত ধরে উন্নয়ন-অর্জনে বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায়। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশ। এই দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো রাজধানী। এতে দলটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য পাশাপাশি এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্লাটিনামজয়ন্তী নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন অর্জনে পরিপূর্ণ আওয়ামী লীগের সাফল্য একদিনে আসেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে-পরে শত চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে গুম, খুন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নির্যাতন।
জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে আসেনি। এই দলকে নানামুখী সংকট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, গুম, খুন ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আওয়ামী লীগ কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বেরিয়ে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য নিয়েই এই দল কাজ করে চলেছে। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে, যা দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল। এই দলটি শুধু নতুন একটি দেশ উপহার দেয়নি, দলটি এখন দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই দল স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল না। তারপরও দেশের বড় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে-পড়ে সব থেকে বেশি নির্যাতন, নিপীড়ন ও জেল-জুলুম সহ্য করা দল আওয়ামী লীগ। এত নির্যাতনের পরও তৃণমূলে সব সময় শক্তিশালী ছিল এই দল। নির্যাতনে শিকার হলেও আওয়ামী লীগ কখনো রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়নি। শত নির্যাতনের মুখে এই দল টিকে ছিল এবং টিকে থাকবে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম। এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে প্লাটিনামজয়ন্তী হিসাবে পালন করা হচ্ছে। বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, সমাবেশ, সেমিনার, চিত্র প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণসহ নানা কর্মসূচিতে থাকছে ভিন্নতা। প্লাটিনামজয়ন্তী সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রধান প্রধান সড়ক ছেয়ে গেছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। ব্যানার-ফেস্টুনে স্থান পেয়েছে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প ও দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তুলে ধরা হয়েছে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গল্প। শুধু রাজধানী নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়েও প্লাটিনামজয়ন্তী সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার বিকালে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা মধ্য দিয়ে প্লাটিনামজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে থেকে ‘বর্ণাঢ্য র্যালি ও শোভাযাত্রা’ বের হয়। এতে ব্যান্ডপার্টি, ঢোল, কৃষকের সাজ, বেলুনসহ বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে অংশ নেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। ‘বর্ণাঢ্য র্যালি ও শোভাযাত্রা’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গিয়ে শেষ হয়।
টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকা দলটির হাত ধরেই উন্নয়ন-অর্জনে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ। নিজ অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, থার্ড টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিনামূল্যে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি তৈরি, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। স্কুলের পড়াশোনায় যোগ হয়েছে ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। সমুদ্র জয় থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে মহাকাশ বিজয় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। দলটির লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, কর্মসংস্থান ও বিশ্বের বুকে নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত অর্জনে অভাবনীয় সাফল্যও এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই।
দেশের সবচেয়ে পুরাতন, ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের হাত ধরেই বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন হয়েছে। ছিটমহল সমস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক সমঝোতা ও সীমান্ত মীমাংসা আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
তবে স্বাধীনতার আগে-পরে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে সব থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গুম, খুন, জেল-জুলুমসহ নানামুখী নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ জন্ম থেকেই স্বৈরাচারী শাসকদের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৬ দফা ও ১১ দফা দাবি, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান-এ সবই ছিল স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের চপেটাঘাত। আর এ কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশেও দলটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসকদের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।