সাবেক চিফ হুইপ পটুয়াখালী-২ আসনের এমপি আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি ভাঙচুর-অবমাননার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সাক্ষীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ প্রভাবশালী নেতারা।
মঙ্গলবার পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বাউফল সদর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহিদুল হক।
একটিমাত্র উপজেলা বাউফল নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-২ আসনের এমপি আ স ম ফিরোজের জন্মস্থানও বাউফল। এখান থেকে ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফিরোজ আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফিরোজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অবমাননার পাশাপাশি তার ছবি পা দিয়ে মাড়িয়ে ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগও আনা হয়েছে ফিরোজের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ প্রমাণে যে ১০ জনকে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়া বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান আলতাফ হোসেন ভুলুকেও করা হয়েছে সাক্ষী।
আ স ম ফিরোজ অবশ্য হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন মামলার বিষয়টি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেরে না ওঠা আজন্মকালের ষড়যন্ত্রকারীরাই এসব করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অজানা কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো অন্যায় করলে দল নিশ্চয়ই আমার বিরুদ্ধে বহু আগেই ব্যবস্থা নিত।’
এদিকে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জুতা পায়ে বাউফলের শহিদ বেদিতে উঠেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। জুতা পায়ে শহিদ বেদিতে উঠা এমপি ফিরোজের একটি ছবি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে অবশ্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি আদালতের বিচারক পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন। এ সংক্রান্ত আদেশ দেওয়ার জন্য ১৯ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন তিনি। বিচারকের দেওয়া এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর।
মামলার আবেদনে ১নং সাক্ষী হিসেবে নাম থাকা প্রসঙ্গে জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি জাহাঙ্গীর কবির নানক। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি তার।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ফিরোজ বলেন, আজন্মকাল ধরে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী আমি। দল এ পর্যন্ত ৯ বার আমাকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে। পালন করেছি জাতীয় সংসদের হুইপ এবং চিফ হুইপের দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য এবং পরীক্ষিত কর্মী না হলে তো তিনি আমায় এভাবে বারবার সম্মানিত করতেন না। তাছাড়া জাতির পিতার কন্যা জননেত্রীর অজানা কিছু নেই। তিনি সবই জানেন। তেমন কোনো অপরাধ করলে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে এভাবে সুযোগ দিতেন না।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ছাত্রজীবনে আমি বরিশাল বিএম কলেজের ভিপি ছিলাম। সেই সময় থেকে যারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমার সাথে পেরে ওঠেননি তারাই এখনো আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। এ মামলার বিষয়টিও সেই ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। দল আমাকে বিশ্বাস করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবই জানেন। তাই এসব ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো- যে নির্বাচনী এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে ৭ বার এমপি বানিয়েছেন তাদের অসম্মানিত করা হচ্ছে এসব মামলা আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে সত্যিটাই প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।