ইউক্রইনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জেপোরোজিয়া এবং খেরসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার ঘোষণা দেবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পশ্চিমা বিশ্বের নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ইউক্রইনের চার অঞ্চলে গণভোটের পর শুক্রবার সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার ঘোষণা দিতে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ লক্ষ্যে নথিপত্র্র সইয়ের একটি অনুষ্ঠান করবেন তিনি। ক্রেমলিনে ভাষণও দেবেন পুতিন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজধানী মস্কোর রেড স্কয়ারে এরই মধ্যে মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে।
ইউক্রেইনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে ঘোষণা দিয়ে কয়েকটি বিলবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। সন্ধ্যায় রেড স্কয়ারে আয়োজন করা হয়েছে কনসার্টের। কনসার্ট দেখার জন্য এরই মধ্যে সেখানে লাগানো হয়েছে বিশাল স্ক্রিন।
ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেপোরোজিয়া ও খেরসনে গণভোট করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া ও এর মিত্রদের দখলে থাকা ওই চার অঞ্চলে ৫ দিন ধরে চলা গণভোট শেষ হয় গত মঙ্গলবার। এরপর এ ভোটে রাশিয়ার সঙ্গে এই অঞ্চলগুলোর যুক্ত হওয়ার পক্ষে ‘বিপুল জনরায়’ এসেছে বলে বুধবার জানিয়েছেন সেখানকার মস্কোপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গণভোটের যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অঞ্চলভেদে ভোটের ৮৭ শতাংশ থেকে ৯৯ দশমিক ২ শতাংশই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বলেছে।
এখন রাশিয়া অঞ্চলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার আয়োজন করছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার বলেছেন, “নতুন সব ভূখন্ডকে রাশিয়ার অংশ করে নিতে আগামীকাল (শুক্রবার) স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় (১২:০০জিএমটি) গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের সেন্ট জর্জ হলে চুক্তি সই অনুষ্ঠান করা হবে।”
“অনুষ্ঠানে রাশিয়া ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চল থেকে রুশপন্থি দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাশিয়া-নিযুক্ত দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে চুক্তি সই করা হবে।”
এরপর ক্রাইমিয়াসহ রাশিয়ার পার্লামেন্টের দুই কক্ষই আগামী সপ্তাহে এই চুক্তিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবে। ৪ অক্টোবরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ থেকে ভাষণ দেবেন।
সেই ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জুড়ে নেওয়ার সময় যা যা করা হয়েছিল এবারও তেমন পক্রিয়াতেই ইউক্রেইনের আরও চার অঞ্চলকে রাশিয়া ফেডারেশনভুক্ত করা হচেছ।
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল বিশ্ব সম্প্রদায় মেনে নেয়নি। এবারও মেনে নেবে না। ইউক্রেইন ও পশ্চিমা দেশগুলো এবারের চার অঞ্চলের গণভোটকে অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, নিজেদের দখল হালাল করতে আইনি মোড়ক দেওয়ার জন্যই এই ভোট করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া এই অঞ্চলগুলো নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে পরলে তখন তারা বলতে পারবে যে, ইউক্রেইনকে দেওয়া পশ্চিমা দেশের অস্ত্র দিয়ে তাদের দেশে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
ইউক্রেইন বলছে, তারা তাদের ভূখণ্ডের কোনও অংশে রাশিয়ার দখলদারিত্ব মেনে নেবে না এবং শেষ রুশ সেনা প্রত্যাহার হওয়া পর্যন্ত লড়বে।
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন, কিইভের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে চাওয়া অঞ্চল ও এর জনগণকে কখনোই ছেড়ে যাবে না তারা।
ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে থাকা রুশভাষীদের নির্বিচারে হত্যা ও নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষায় এবং রাশিয়াকে ধ্বংসে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করতে এই যুদ্ধ করতে হচ্ছে বলেও ভাষ্য তার।