স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন পাকিস্তানি শাসনের মধ্য দিয়ে বাঙালির কাঙ্খিত মুক্তি অর্জন সম্ভব নয় তখন তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত করেন। হাজার বছরের পরাধীন বাঙ্গালীকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৪ এর নির্বাচন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য তিনি আমাদেরকে তৈরি করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়ে জাতির পিতা যখন দেশের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সকল অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে দেশকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। আজকে বঙ্গবন্ধু হত্যার যথোপযুক্ত জবাব যদি আমরা দিতে চাই তাহলে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে সেটি সম্ভব।
তিনি আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফজলুল হক হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনার সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মোঃ মাসুম। ফজলুল হক হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বেঈমান অকৃতজ্ঞ ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু না থাকলেও আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করে পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের সঠিক জবাব দিতে পারি।
বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে যখন তিনি শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেছিলেন তখন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৯৪ ডলার মাথাপিছু আয় থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা আমাদেরকে ২৭৭ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশে পরিণত করেছিলেন। অথচ ২১ বছরে সামরিক শাসক এবং তাদের দলের শাসনামলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র ৫২ ডলার।
মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে যেরকম আওয়ামী লীগের অর্জন নিয়ে বিতর্ক এবং ষড়যন্ত্র করা হয় ঠিক একইভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল নিয়ে বিতর্ক এবং ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীকে এসব ষড়যন্ত্র এবং গুজব প্রতিরোধে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটি শিক্ষিত ও তরুণ ছাত্রসমাজই পারে সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে শাসনভার গ্রহণ করে তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৭০০ ডলার আজ ১৫ বছরের মাথায় তা ২,৮২৪ ডলারের উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনও সম্পূর্ণ করেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হওয়া।
স্বাধীনতার মত আমাদের মহান অর্জনকে নিয়েও বিএনপি বিতর্ক সৃষ্টি করে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, জিয়াউর রহমান কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষক হয়? বাংলাদেশের মানুষ কি স্বাধীনতার প্রশ্নে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছিল? বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যা একজন অচেনা মানুষের কোন একদিনের ঘোষণাতে অর্জিত হতে পারেনা। স্বাধীনতার মত মহান অর্জন এতটা সহজলভ্য কোনভাবেই নয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ সময় ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বিরোধী বিএনপি’র প্রচারণা যথোপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।