জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে পল্লবী এলাকায় একাধিক হত্যাকাণ্ডে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পল্লবীর সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু সাহিনুদ্দীন নয়, গত ১৫ বছরে ওই এলাকায় যে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তার বেশ কয়েকটির সঙ্গেই আওয়ালের সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। তবে ওই তথ্যগুলো এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
এদিকে মাত্র একবার এমপিও হলে আউয়ালের ঘনিষ্ঠ সহকারীদের অনেকেই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকায় এখন তার সহকারীদের নিয়েই আলোচনা চলছে।
পল্লবীর সাহিনুদ্দীন (৩৩) হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে র্যাব গ্রেফতার করেছে আউয়ালকে। শনিবার ছিল ৪ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, একাধিক হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলো যাচাই বাছাই ছাড়া এখন বলা ঠিক হবে না। দ্রুত বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৪ সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত করছে। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, শুধু এই হত্যাকাণ্ড নয়, আরও কোনো হত্যাকাণ্ডে আউয়াল সম্পৃক্ত কি-না সেগুলোসহ সব ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি ওই এলাকায় জমি-জমা নিয়ে এতদিন যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। র্যাব প্রত্যেকটি বিষয়ে তদন্ত করছে, পাশাপাশি অপরাধীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সাহিনুদ্দীন নয়, গত ১৫ বছরে ওই এলাকায় জমি-জমার দখল নিয়ে বিরোধে অন্তত ৭ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৬ মে পল্লবীর ১২ নম্বর সেক্টরের ডি-ব্লকে ৩১ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে একটি গ্যারেজে স্থানীয় জয়নুদ্দিনের ছেলে সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ মে বুড়িরটেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র চঞ্চলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পরই ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের টেকেরবাড়ির সামাদ বক্সের ছেলে মমিন বক্সকে। চার দিন পর কালশী ব্রিজ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। এরপর খুন হয় পাগলা খোকন ও ডি-ব্লকের মিন্টু। গৃহায়ন প্রকল্পের মধ্যে মাছের খামারেই পাওয়া যায় পাগলা খোকনের লাশ। ২০১৪ সালে কালাপানির মুসা খুন হয়। এর আগে ডিওএইচএস সড়কে খুন হয় পাকিস্তানি মোহাম্মদ আলী। ২০০৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরামিকের পেছনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আব্বাস নামে এক যুবককে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটি যোগসূত্র রয়েছে। খুনের বদলা হিসেবে এখানে পাল্টা খুন হয়েছে আরেকজন।
এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে সাবেক সংসদ আউয়ালের কী কোনো সম্পৃক্ততা আছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিরপুর) মানস কুমার পোদ্দার বলেন, রিমান্ডে আউয়াল অনেক রকম তথ্য দিচ্ছে, অনেক কিছু স্বীকার করছে, আবার অনেক কিছু অস্বীকারও করছে। ফলে আমরা তার দেওয়া তথ্যগুলো এখন ভেরিফাই করছি। কোন কিছুই নিশ্চিত নয়। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডে আরও ৫ জন রিমান্ডে আছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া একজনকে রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে।