বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা ফায়ার ব্রিগেডের দোষ না; এটা হচ্ছে যারা সরকার চালাচ্ছে- তারা এর জন্য দায়ী।”
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দায় ‘সরকার ও এর বিভিন্ন সংস্থার ওপর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আক্ষেপ করে বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার ‘গল্প’ বললেও আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফায়ার সার্ভিসের ‘নেই’।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কী দুর্ভাগ্য, এদেশের যে এত উন্নয়ন, চতুর্দিকে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে… অথচ অগ্নি নির্বাপণের জন্য যে আধুনিক ব্যবস্থা করা দরকার, সেই ব্যবস্থাগুলো এখানে নাই। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে যে কাজগুলো ফায়ার ব্রিগেড করতে পারে সেই ইকুইপমেন্ট তাদের নাই।
“এটা ফায়ার ব্রিগেডের দোষ না। এটা হচ্ছে যারা সরকার চালাচ্ছে, যারা এর জন্য দায়ী আছে- তারা জনসাধারণের সেবার জন্য যে কাজগুলো দরকার সেটাকে তারা গুরুত্ব দেয় না।”
ফখরুল বলেন, “তাদের গুরুত্ব হচ্ছে কোনখানে তাদের কমিশন বেশি, কোনখানে তাদের টাকা উপার্জন বেশি হবে- সেগুলোতে তাদের প্রায়োরিটি। আমরা মনে করি, এটার দায় সম্পূর্ণ সরকারের। এই দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।”
বুধবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, বেশ কিছু দিন আগে সেখানে (বঙ্গবাজার মার্কেটে)… সিটি করপোরেশন এটাকে ঠিক নিরাপদ নয়- এই ধরনের ঘোষণা দিয়ে সেখানে খালি করার জন্য তাদেরকে বলেছে। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি।… কারো যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই।
“একটা কাঠের স্ট্রাকচার বলা যায়- সেটা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রেখে সরকার বলুন, সরকারের যে সমস্ত সংস্থা আছে যারা এসবের দায়িত্বে রয়েছে তারা বা সিটি করপোরেশন কেউই কিন্তু এই দায়িত্বটা পালন করেনি। আমরা মনে করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উদাসীনতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও নজরদাবির অভাবের কারণ এই ধরনের ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”
এ সময় সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে ‘মির্জা ফখরুল বলেন, “সিদ্দিক বাজারে কিছু দিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে অনেকের প্রাণ গেছে। এখানে (বঙ্গবাজার মার্কেট) আল্লাহর রহমতে কারো প্রাণ যায়নি। কিন্তু যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা ভয়ংকর, নিম্ন আয়ের মানুষগুলো অথবা সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন এবং সেটা ঈদের আগে যখন তাদের সর্বস্ব পুঁজি বিনিয়োগ করেছে।”
ডয়েচ ভেলের ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, “জার্মান মিডিয়া ডয়চে ভেলে সম্প্রতি র্যাবের ওপর একটা ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে। এটা খুব সেনসেটিভ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের বেশিরভাগ পত্রিকা কোনো নিউজ করেনি, কেউ বলেনও নাই। সেনসেটিভ হলেও এটা বাস্তবতা। ডয়চে ভেলে করেছে।
“এই ডকুমেন্টারি প্রমাণ করেছে যে, অনির্বাচিত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই কাজগুলো করছে। আপনারা দেখেছেন যে, কী ভয়ংকর। যদি এমন হয় যে, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে, শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি নির্দেশ দিয়ে এসমস্ত কাজ করা হয় তাহলে এসব সংস্থাগুলো কী ভয়ংকরভাবে জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে তার প্রমাণ।”
সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ‘মানবাধিকার বিরোধী, সংবিধান বিরোধী’ এসব কাজ করছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
জেসমিনের মৃত্যু: ‘সেই যুগ্ম সচিব বাইরেই রয়ে গেল’
নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “যুগ্ম সচিব আজিজুল হক কিন্তু বাইরে থেকে যাচ্ছেন। অথচ তার নির্দেশে র্যাব গেছে সুলতানা জেসমিনের বাসায়, উনি (আজিজুল হক) বাসা চিনিয়ে দিয়েছেন। কোনো মামলা ছাড়া এতো বড় বেআইনি কাজ সরকারের একজন যুগ্ম সচিব কীভাবে করতে পারেন- এটা আমাদের প্রশ্ন।
“আমরা সুলতানা জেসমিনকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার সাথে দায়ী র্যাব কর্মকর্তা, সরকারের যুগ্ম সচিব আজিজুল হকের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”
নরসিংদীতে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, তিনি নরসিংদীর আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন তার বাসার সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে গতকাল (বুধবার) জেলা কমিটির সভা ডাকা হয়…। জেলা সদস্যরা উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে, কার্যালয়ে তালা লাগানো চারদিক থেকে পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে। সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে কার্যালয়ের যান এবং মিটিং শুরু করেন।
“মিটিংয়ের শেষের দিকে কিছু দুস্কৃতকারী-দুর্বৃত্ত পুলিশের ছত্রছায়ায়… তারা মাঝখান দিয়ে এসে আক্রমণ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জানালা-দরজা ভেঙে পড়ে যায়। ককটেল মিটিংয়ের মধ্যেও এসে পড়ে স্বাভাবিকভাবে মিটিংও পণ্ড হয়ে যায়।”
এ ঘটনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক দল তার জেলা কার্যালয়ে সভা করবে- এটা তার সম্পূর্ণ সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার বার বার চিৎকার করে বলছেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য কোনো বাঁধা দিচ্ছি না কোথাও। নরসিংদীর ঘটনাই প্রমাণ করে তারা বাঁধা দিচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের সামনে কী করে দুস্কৃতিকারী কার্যালয়ে ঢুকলো এবং সভা পণ্ড করে দিল?”
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নরসিংদীর পুলিশ প্রশাসন তারা প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
“আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান-বিরোধী, আইনবিরোধী। আমরা বাধ্য হবো এসব ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।”
ঢাকায় বুধবার রাতে নিকুঞ্জের ৫ নম্বর সড়কে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সভাপতি আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু, সহ দফতর সম্পাদক আনোয়ারের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো উপস্থিত ছিলেন।