আন্তর্জাতিক

এরদোগান কি ইসরাইল দখলের ঘোষণা দিলেন?

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলে হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দলীয় এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এ ঘোষণা দেন। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে কথা বলার সময় ইসরাইলে হস্তক্ষেপ করার সুস্পষ্ট হুমকি দেন তিনি।

এরদোগান বলেন, আমরা যেভাবে কারাবাখে প্রবেশ করেছি, ঠিক যেভাবে আমরা লিবিয়ায় প্রবেশ করেছি, ইসরাইলের সঙ্গেও তাই করতে পারি। এমন কিছু নেই যা আমরা করতে পারি না। আমাদের কেবল শক্তিশালী হতে হবে।

এ সময় আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ফক্স নিউজসহ কয়েকটি ইসরাইলি গণমাধ্যম এরদোগানের সাম্প্রতিক এ মন্তব্যকে ইসরাইলে আগ্রাসনের হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

তবে আসলেই কী এরদোগান এমন কোনো হুমকি দিয়েছেন? এরদোগানের এই মন্তব্যকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

প্রথমত, ইসারাইলকে থামাতে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে সবাইকে একতার সবক দিয়েছেন। এরদোগান চান কূটনৈতিক উপায়ে ইসরাইলকে থামাতে। যাদের হাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। কয়েক দশক ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলা সংঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান চেয়ে আসছেন এরদোগান। মূলত, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং স্থায়ীভাবে পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

দ্বিতীয়ত, এরদোগানের এ ঘোষণাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, হস্তক্ষেপ বোঝানো একটি নিছক বাক্য ইসরাইলকে ক্ষুব্ধ করার জন্য ব্যবহার করেছেন তিনি। এরদোগান দৃশ্যত ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের প্রতি পশ্চিমাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের মুখে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তুরস্কের দৃঢ় সংকল্প তুলে ধরতে চান এবং নেতানিয়াহুর গণহত্যাকারী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তুরস্কের চারপাশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চান। প্রকৃতপক্ষে, এরদোগান একই ভাষণে বলেছিলেন যে তুরস্ককে শক্তিশালী হতে হবে যাতে ইসরাইল ফিলিস্তিনে ইতিমধ্যে যা করেছে তা আবার করার সাহস না করে। মনে রাখতে হবে, এরদোগানই এ অঞ্চলের একমাত্র নেতা যিনি ২০০৯ সালে দাভোসে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজের সঙ্গে তার বিখ্যাত ‘এক মিনিট’ সংঘর্ষের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন।

ফক্স নিউজ তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুরস্ককে দখলদার রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। তবে তুরস্ক কখনোই ‘দখলদার’ ছিল না। এরদোগানের নেতৃত্বে এটি কূটনীতির অক্লান্ত প্রবক্তা ছিল। এটি গ্রীসের মতো একসময় যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল এমন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করেছিল এবং এমনকি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে, এটি কেবল আত্মরক্ষার জন্য করে, যেমন সিরিয়া ও ইরাকে পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান, যা তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য তাত্ক্ষণিক হুমকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *