করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তারে ফের বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ায় অথবা স্বেচ্ছা-আইসোলেশনে থাকায় পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠেছে, এর মধ্যে ওমিক্রনের ঢেউ এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের প্রভাবশালী ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে রোগ গুরুতর আকার ধারণা করা বা হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কম, প্রাথমিক গবেষণাগুলোতে এমন ধারণা পাওয়া গেলেও স্পেন, ব্রিটেন, ইতালি এবং অন্যান্য স্থানগুলো স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কগুলো ক্রমেই নিজেদের হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে দেখছে।
শুক্রবার ব্রিটেন হাসপাতালগুলোতে অভিজ্ঞ কর্মীর শূন্যতা পূরণে ও রেকর্ড কোভিড-১৯ রোগীর কারণে সৃষ্ট প্রবল চাপ সামলাতে সহায়তা করতে সেখানে সামরিক সদস্যদের মোতায়েন করা শুরু করেছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর স্টিভেন পওয়েস বলেছেন, “ওমিক্রনের মানে চিকিৎসার জন্য বেশি রোগী আর তাদের চিকিৎসার জন্য কম কর্মী।”
যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলো অতি জরুরি নয় এমন অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখে শয্যা খালি ও কর্মীদের মুক্ত রাখার চেষ্টা করছে। স্পেনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক এত চাপে পড়েছে যে ২০২১ সালের শেষ দিনটিতে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আরাগনের কর্তৃপক্ষ অবসরে যাওয়া কর্মী ও নার্সদের ফের কাজে ফেরানোর অনুমোদন দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, “রোগীর বৃদ্ধি দ্রুত থেকে আরও দ্রুততর হতে থাকার অর্থ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও টিকাদান কর্মসূচীর দায়িত্ব এবং সাধারণ কার্যক্রমের কোনোটিই ঠিকমতো পালন করতে পারবে না।”
স্পেনের নার্সিং ইউনিয়ন এসএটিএসই জানিয়েছে, নার্স ও ফিজিওথেরাপিস্টদের মতো সামনের সারির কর্মীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে আন্দালুশিয়ার ৩০ শতাংশেরও বেশি কর্মী কোভিডজনিত ছুটিতে গেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে
শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের দৈনিক ডে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতাল কর্মী বিশেষভাবে নার্স ও নার্সদের সহযোগীদের মধ্যে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। দেশটির আটটি প্রধান হাসপাতালে জরিপ চালানোর পর এ খবর দিয়েছে তারা।
আমর্স্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ কর্মীর এখন কোভিড পজিটিভ এসেছে, এক সপ্তাহ আগেও এ হার ৫ শতাংশ ছিল।
উপসর্গবিহীন আক্রান্ত কর্মীরা যেন কাজে ফিরতে পারেন তার জন্য নেদারল্যান্ডসের হাসপাতালগুলো তাদের কোয়ারেন্টিনের নিয়মগুলো পরিবর্তন করার কথা গভীরভাবে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে ডে টেলিগ্রাফ। ১৯ ডিসেম্বর থেকে কঠোর লকডাউনে থাকলেও দেশটিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলছে।
গত সপ্তাহে সংগ্রহ করা তথ্যে দেখা গেছে, ইতালিতে ১২ লাখ ৮০০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্য কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও প্রশাসনিক কর্মী টিকা নেননি তাদের সাসপেন্ড করে রাখা। দেশটির মোট কর্মীদের ৪ শতাংশেরও বেশি এখনও টিকা নেননি।