আন্তর্জাতিক

কমলা-ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে যে কয়টি অঙ্গরাজ্য

প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ভোটার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি সুইং স্টেটই নির্ধারণ করে দিতে পারে যে, আগামী প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প- উভয়েই এখন এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত, যেখানে ফলাফল এখনো অনিশ্চিত।

সুইং স্টেট কি?

সুইং স্টেট বা ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হলো এমন সব অঙ্গরাজ্য যেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান, সমান সমর্থন পেয়ে থাকে। তাই এই অঙ্গরাজ্যগুলো যে কোনো প্রার্থীর জয়লাভের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবারে এ ধরনের ৭টি সুইং স্টেট বা ভাগ্য নির্ধারক অঙ্গরাজ্য হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন।

১. অ্যারিজোনা

২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১০,০০০ ভোটে অ্যারিজোনাতে জয়ী হন। এই অঙ্গরাজ্যে অভিবাসন নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।

কমলা হ্যারিসের নীতির সমালোচনা করে ট্রাম্প অভিবাসন নীতি প্রসঙ্গে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও এখানে গর্ভপাত অধিকার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ রিপাবলিকানরা এখানে গর্ভপাতের বিষয়ে প্রায় পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার চেষ্টা করছেন।

২. জর্জিয়া

২০২০ সালে বাইডেনের সামান্য ব্যবধানে জয়ের পর জর্জিয়া ট্রাম্পের জন্য একটি অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে তিনি নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগের মুখোমুখি। এই অঙ্গরাজ্যের আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী ডেমোক্রেট কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাইডেন প্রশাসন সম্পর্কে এখানে অসন্তোষ বাড়ছে, যা কমলা হ্যারিসের প্রচারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৩. মিশিগান

মিশিগানে বাইডেন ২০২০ সালে ১,৫০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তবে এ বছর এখানে ডেমোক্রেটদের প্রতি আরব-আমেরিকানদের সমর্থন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাইডেনের ইসরাইল নীতি এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। কমলা হ্যারিস তার প্রচারাভিযানে ইসরাইলের প্রতি অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছেন, যাতে এই জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করা যায়। অন্যদিকে ট্রাম্প দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধের শেষ দেখতে আগ্রহী।

৪. নেভাদা

যদিও নেভাদা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেটদের ঘাঁটি ছিল। তবে সাম্প্রতিক জরিপগুলো রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থনের বৃদ্ধি দেখাচ্ছে। এখানকার ভোটারদের মধ্যে লাতিন জনগোষ্ঠীর ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেভাদাতে মহামারীর পর আর্থিক পুনরুদ্ধার বেশ ধীরগতিতে হয়েছে, যা এখানকার উচ্চ বেকারত্ব এবং জীবনযাত্রার ব্যয়কে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় করে তুলেছে।

৫. নর্থ ক্যারোলিনা

২০২০ সালে ট্রাম্প এই অঙ্গরাজ্যে ৭৪,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন এবং এবারে এই অঙ্গরাজ্যটি আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প এখানে একটি র‍্যালিতে বলেছেন, তিনি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন, অপরাধীদের প্রবেশ বন্ধ করবেন এবং আমেরিকান ড্রিম পুনরুদ্ধার করবেন।

৬. পেনসিলভেনিয়া

১৯টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে পেনসিলভেনিয়া উভয় প্রার্থীর জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। স্ক্র্যানটন বাইডেনের জন্মস্থান হওয়ায় এই অঙ্গরাজ্যের কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তার একটি ব্যক্তিগত সংযোগ আছে। তবে অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো এখানে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ইরি কাউন্টির মতো এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা বাড়ছে, যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. উইসকনসিন

ঐতিহাসিকভাবে উইসকনসিন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অণুঘটক অঙ্গরাজ্য, যেটি গত দুই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। বাইডেন ২০২০ সালে মাত্র ২১,০০০ ভোটে এই রাজ্যে জয় পান। অবশ্য তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীরা এখানে ডেমোক্রেটদের ভোট ভাগ করতে পারে। কারণ রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন এবং গ্রীন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের অন্তর্ভুক্তি ডেমোক্রেটদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কৌশলের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। যেখানে এই সাতটি অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্র: এনডিটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *