স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে।
আত্মসমর্পণের দলিলের প্রতিটি শর্তই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী ঠিক করেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী এসব শর্তের বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি করলেও তা মানা হয়নি।
পাকিস্তান চেয়েছিল আত্মসম্পর্ণের অনুষ্ঠান গোপনে আয়োজন করতে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব জানিয়ে দেন, অনুষ্ঠান হবে প্রকাশ্যে।
জ্যাকব জানান, আত্মসম্পর্ণের দলিলটি যেন অসম্মানজনক না হয়, সেদিনে নজর রাখা হয়েছিল।
এতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর পক্ষে সই করেন কমান্ডার-ইন-চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, আর যুদ্ধরত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিলেন তখনকার বিমান বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার।
আত্মসমর্পণের দলিলে যা লেখা ছিল—
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে, পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সব সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো।
পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।
এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে, তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।