রাজশাহীর পাশাপাশি ঢাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে দেশে গত এক দিনে আরও ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ২ হাজার ৪৩৬ জনের মধ্যে।
এক দিনে মৃত্যুর ওই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষে গত ৯ মে দেশে এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল; সেদিন করোনাভাইরাসে ৫৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন হয়েছে। আর করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জন।
সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ২ হাজার ২৪২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা সাড়ে সাত লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৭ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশর ওপরে।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষের।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। শনিবার ঢাকাতেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যেখানে ৬৬৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেখানে রাজশাহী বিভাগে পাওয়া গেছে ৬৬৮ জন নতুন রোগী। খুলনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৬০৬ জনের মধ্যে।
একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫২৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই সময়ে রাজশাহী জেলায় ৩৬৮ জন, যশোর জেলায় ১৪৫ জন এবং খুলনা জেলায় ১১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১২টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৪১১টি; বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৭০১টি।
ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩৭ শতাংশ।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, ১৫ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন, ৯ জন ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা।
এছাড়া ৬ জন রাজশাহী বিভাগের, ৮ জন খুলনা বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের, ৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
তাদের ৩২ জন পুরুষ আর নারী ১৫ জন। ৪২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২ জন।
তাদের মধ্যে ২৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং ১ জনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।