টানা পঞ্চম দিনের মত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজারের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে, তবে পাঁচ দিন পর মৃত্যু নেমে এসেছে দুইশর নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রায় ৪২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১২ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৮৭ জনের।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৯২২ জনে। তাদের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৬৫ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের মধ্যে গত ১২ জুলাই দেশে প্রথমবারের মত এক দিনে ১৩ হাজারের বেশি নতুন রোগী ধরা পড়ে। সেদিন থেকে টানা পাঁচদিন হল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি থাকছে।
আর ১১ জুলাই এক দিনে রেকর্ড ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন থেকে টানা পাঁচদিন দৈনিক মৃত্যু ছিল দুইশর বেশি। শুক্রবার তা কমার খবর এল।
আগের দিন বৃহ্স্পতিবার ১২ হাজার ২৩৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল; মৃত্যু হয়েছিল ২২৬ জনের। সেই হিসাবে শুক্রবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু দুটোই কমেছে।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৮ হাজার ৫৩৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৩ জন।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪৯৪৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে রোগী শনাক্ত ২৩৩০ জন।
যে ১৮৭ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৮ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৩৯ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, আর ১৪ জুলাই মোট মৃত্যু ছাড়ায় ১৭ হাজার।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি ল্যাবে ৪১ হাজার ৯৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৭টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা আগের দিন ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩৬শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৩৩৭ জন, ফরিদপুরে ১৪৭ জন, গাজীপুরে ২৪৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ১০৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৪৭ জন, নরসিংদীতে ১৪১ জন, রাজবাড়ীতে ১৫৮ জন, শরীয়তপুরে ১০৯ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৮৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮০২ জন, কক্সবাজারে ২১৮, ফেনীতে ১৫৬ জন, নোয়াখালীতে ১৬৩ জন, চাঁদপুরে ১১৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ জন এবং কুমিল্লায় ৫২২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৭০ জন, পাবনায় ২৩০ জন, সিরাজগঞ্জে ১৪৫ জন এবং বগুড়ায় ১৮০ জন নতুন রোগী মিলেছে।
খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় ১১০ জন, যশোরে ২৩৪ জন, ঝিনাইদহে ২৩৬ জন, খুলনায় ৩৪৮ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২০৩ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।
এছাড়া অন্য বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বরিশালে ১৮৬ জন, ঝালকাঠিতে ১০৪ জন, ময়মনসিংহে ২৩২ জন, নেত্রকোনায় ১১০ জন, সিলেটে ২৮৩ জন, হবিগঞ্জে ১২০ জন এবং মৌলভীবাজারে ১১৩ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৪২ জন ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫২ জনের মধ্যে ১২ জন খুলনা এবং ১১ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৪২ জনের মধ্যে ১৭ জন কুমিল্লা জেলার।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ১৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ২২৬ জনের মধ্যে ২ জনের বয়স ছিল ১০০ বছরের বেশি। আর ১১৯ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
তাদের ১৪০ জন ছিলেন পুরুষ, ৮৬ জন ছিলেন নারী। ১৬৮ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২০ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।