চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না পারলে অসুস্থ খালেদা জিয়ার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চড়া মাশুল দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকার নয়া পল্টনে এক সমাবেশ থেকে তারা এই হুঁশিয়ারি দেন।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আপনারা (সরকার) বলেন, ‘আইনের কারণে বাইরে যেতে দিতে পারছি না’। কেন মিথ্যা কথা বলেন? এখানে অনেক আইনজীবী আছেন তারা বলছেন, ওই ৪০১ ধারাতে বলা আছে একমাত্র সরকার, সরকারই পারে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে।
“এখন দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ সরকারের, শেখ হাসিনা সরকারের। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার ক্ষতি হয়, এদেশের মানুষ কোনোদিন আপনাদের রেহাই দেবে না। দায় সব আপনাদেরকে বহন করতে হবে।”
এসময় চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীকের প্রার্থীদের হারের চিত্র দেখিয়ে ফখরুল বলেন, “এক হাজারটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। অর্ধেকের বেশি হেরে গেছে আওয়ামী লীগ। দেখেন শুরু হয়েছে পতন।”
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারি আদেশে দেড় বছর ধরে মুক্ত থাকার মধ্যে এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
তার লিভার সিরোসিস হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তাকে এখন সুচিকিৎসা দেওয়া বাংলাদেশে সম্ভবপর নয়, তাকে বিদেশ নিতে হবে।
খালেদা জিয়ার ভাই বিদেশ নেওয়ার আবেদন করলেও তাতে এখনও সাড়া দেয়নি সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে কারাগারে ফিরে নতুন করে আবেদন করতে হবে, তখন সরকার বিবেচনা করতে পারে।
আইনি জটিলতার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সেই প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কূটনীতিকরা ‘চাপ দিচ্ছে’ বলেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সোমবার ব্রিফিং করতে হয়েছিল।
“বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা, রাষ্ট্রদূতরা ইতিমধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে সরকারের উপরে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠাও চিকিৎসার জন্য।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সম্পর্কে সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “কী দুর্ভাগ্য আমাদের! একজন মন্ত্রী বলছেন, ডাক্তাররা সাহেবকে বিএনপি যা বলতে বলেছে, তারা তাই বলছেন। ধিক্কার দিই, ধিক্কার দিই আমি সেই মন্ত্রীকে।”
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা চায় দাবি করে ফখরুল বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
“মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমাদেরকে সকলকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরাবো এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করব।”
‘মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা’
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ‘মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা’ লড়ছেন।
“গতকাল (সোমবার) রাত ১২টায় ডা. জাহিদ (এজেডএম জাহিদ হোসেন) আমাকে টেলিফোন করলেন, আপনি এখনই চলে আসুন হাসপাতালে। আমি রাতেই হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি যে সমস্ত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন, প্রায় ১০ জন, তারা বসে আছেন। প্রত্যেকের মুখ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন-চিন্তিত। আমার ভয় ঢুকেছে, কী হয়েছে? তারা বললেন, আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, যেটা ভয় পাচ্ছিলাম আবার রক্তক্ষরণ হতে পারে, তা হয়েছে।
“আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের সেই চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গত তিনটা সংকট যেভাবে পার হয়েছেন, গতকাল রাতেও সেই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।”
ফখরুল বলেন, “সকালে উঠে আমি আবার ডা. জাহিদকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন, ম্যাডাম এখন আগের চেয়ে ভালো।
“এই ভালো ভালো নয়। কারণ তারা পরিষ্কার করে বলেছেন যে, তার যে অসুখ সেই অসুখের চিকিৎসা এখন আর এখানে নেই। এই চিকিৎসা করতে হলে তাকে অবশ্যই বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে সেখানে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব।”
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় এই সমাবেশ হয়। সকাল ১১টা থেকে ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের বিভিন্ন থানা থেকে নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেয়।
সমাবেশ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, শেষে হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশের শুরুতে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন।
‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে।
সমাবেশে চারটি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশাল আকৃতির ছবি সম্বলিত ব্যানারে লেখা ছিল- ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশ’।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শাহিদা রফিক, তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুল হাই, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামারুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন আবদুস সালাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, সালাহউদ্দিন সরকার, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল বক্তব্য রাখেন।