বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও খুলে দেওয়ার সুখবরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলতি অর্থবছরে আট লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যের কথা বলছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশে কর্মী পাঠানোর হিসাব তুলে ধরে এমন আশার কথা বলেন সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অন্যান্য খাতের মত বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের চেষ্টার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
সচিব বলেন, সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই আড়াই লক্ষাধিক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাসে ১ লক্ষ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
“আমাদের প্রত্যাশা, বিদেশ গমনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ অর্থবছরে সাত থেকে আট লাখ লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে।”
দীর্ঘ তিন বছর পর মালয়েশিয়া আবারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রীর নেতৃত্বে, আমাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে শ্রমবাজারটি পুনরায় উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আমরা আশা করছি।”
এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে বহু বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আবারও শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।
কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।
সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, সম্প্রতি মাননীয় মন্ত্রী গ্রিসের সঙ্গে একটি আগ্রহপত্র স্বাক্ষর করেছেন। একইভাবে আলবেনিয়া, মাল্টা ও বসনিয়ার সঙ্গেও কর্মী পাঠানোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।
নতুন শ্রমবাজার হিসেবে কম্বোডিয়া, উজবেকিস্তান, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়াসহ আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ এবং জাপান, সেনেগাল, বুরুন্ডি, সেশেলস, মালয়েশিয়ার সারওয়াকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন করা হয়। ‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা/ অভিবাসনে আনব মর্যাদা ও নৈতিকতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এদিন দেশেও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের মূল ও জাতীয় অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি থাকবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারী ও ভূ-রাজনৈতিক নানা কারণে অভিবাসনের কঠিন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “অভিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও সনদসমূহে বর্ণিত বিধানাবলির যথাযথ প্রতিপালন আবশ্যক।
“অভিবাসী শ্রমিকরা যেন কোনো রূপ শোষণ, বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেষ্ট থাকবেন- এ প্রত্যাশা করি।”
‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, “৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা ৫ মিলিয়ন নতুন বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।
“এজন্য উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ বিশ্ব চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোর্স চালু, আন্তর্জাতিক সনদায়নের মতো নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
যুবসমাজকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত অর্থবহ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।