নানা রঙ ও আকৃতির পশুতে ভরে উঠেছে রাজধানীর কুরবানি পশুর হাটগুলো। গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলে হাটগুলো কানায় কানায় ভরে উঠেছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্রেতারা বলছেন তুলনামূলক দাম বেশি, আর বিক্রেতারা বলছেন ক্রেতারা দাম কম বলছেন। এ অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে বিক্রি জমে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন শনিরআখড়া, শ্যামপুর, গাবতলী, ভাটারা, হাজারীবাগ, বসিলা, সারুলিয়া ও আমুলিয়া কুরবানি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সব হাট কুরবানির পশুতে ভরে উঠেছে। কোনো হাটে বিক্রি জমে উঠেছে, আবার কোনো হাটে ক্রেতা কম। বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ বেসরকারি অফিসও ছুটি হয়েছে। সে কারণে আজ শুক্রবার পশুর হাটগুলোর বিক্রি পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
মিরপুর প্রতিনিধি গাবতলী হাট ঘুরে জানান, সর্ববৃহৎ পশুর হাট গাবতলীতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে কুরবানির পশু। কানায় কানায় হাট ভরে উঠলেও সে তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, যেসব ক্রেতারা হাটে আসছেন দামাদামি বেশি করছেন। দাম শুনেই আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কেউ দাম বলছেন, তবে কেনার আগ্রহ কম। দামাদামি বেশি হচ্ছে। তবে তারা আশা করছেন আজ শুক্রবার থেকে তাদের বিক্রি জমে উঠবে। বিক্রি জমলে দামেও কিছুটা ছাড় দেবেন তারা। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা বিল্লাল হোসেন জানান, দুদিন আগে হাটে ১২টি গরু এনেছেন। এর মধ্যে আটটি গরু মাঝারি ও বাকি চারটি ছোট আকারের। হাটে অনেক গরু থাকলেও ক্রেতা নেই। দাম শুনেই লোকজন চলে যাচ্ছেন। রাজশাহী থেকে আগত খামারি মো. রাব্বানী বলেন, হাটে বড় সাইজের ছয়টি গরু এনেছেন। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হলেও বড় গরুর ক্রেতা কম।
মিরপুর ১০ নম্বর থেকে গাবতলী হাটে আসা গৃহিণী মরিয়ম বেগম বলেন, গতবারের মতো এবারও ছোট সাইজের গরু কেনার পরিকল্পনা নিয়ে হাটে এসেছি। বাজেট অনুযায়ী গরু পাওয়ায় তিনি একটি গরু কিনেছেন।
ভাটারা প্রতিনিধি নতুন বাজার এলাকার অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে জানান, ভাটারার নতুন বাজারে অস্থায়ী পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে কুরবানির পশু। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হলেও গত রোববার থেকে হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। কুরবানি পশুতে ভরে উঠেছে পুরো হাট। তবে বিক্রি শুরু হলেও এখনো জমেনি। শুক্র, শনি ও রোববারে জমজমাট বিক্রি হবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। হাট ঘুরে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরবানির পশু এনেছেন কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশীয় গরু। তবে হাটে কোনো ছাগল দেখা যায়নি।
হাটের ইজারাদার মো. মিলন হোসেন বলেন, গরু বেপারিদের জন্য পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুৎ সংযোগের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক গরু বেচাকেনা হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে হাট আরও জমবে। শনি ও রোববার হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় হবে। আমরা সেভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
দিয়াবাড়ি হাট সরেজমিন ঘুরে উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটটি মূলত সড়কের ওপর বসানো হয়েছে। সেখানে সড়কজুড়ে পশু রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই হাটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়লেও পশু বিক্রি কম হয়েছে। তবে সড়কের ওপর হাট বসানোর কারণে স্থানীয়রা ভারি বৃষ্টিতে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ি পশুর হাটে দেখা যায়, মেট্রোরেলের ২ নম্বর স্টেশন থেকে পশ্চিমে ১৮ নম্বর সেক্টরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির ওপর সারি সারি বেঁধে রাখা হয়েছে কুরবানি পশু।
দিয়াবাড়ি হাটে আসা উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, গরুগুলো সড়কের ওপর রাখায় ক্রেতারা সড়কে সুষ্ঠুভাবে দাঁড়াতে পারছেন না। পেছন থেকেই গাড়ির হর্ন বাজছে। একটি আতঙ্ক নিয়ে এখানে গরু দেখতে হচ্ছে। দিয়াবাড়ি গরু হাটের ইজারাদার মো. কফিল জানান, দিয়াবাড়ি ১৬ নম্বর সেক্টর বউ বাজার পর্যন্ত সড়কের জায়গা ছাড়া বাকি খালি জায়গায় হাটের সীমানা। তবে সড়কের ওপর গরু রাখার বিষয়টি কতটুকু বৈধ? প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মোহাম্মদপুর প্রতিনিধি বসিলা ও হাজারীবাগ হাট ঘুরে জানান, আনুষ্ঠানিক হাট শুরুর প্রথম দিন বসিলার হাটে বিক্রি জমজমাট ছিল। কিন্তু হাজারীবাগ হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে পশুর হাট বসেছে। হাটে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিকাশ, নগদের পাশাপাশি এটিএম বুথ বসানো হয়েছে। কোনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পশুর ডাক্তারের বুথ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের গরু বিক্রির টাকা নিরাপদে লেনদেন করতে ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের গরু নিয়ে বিক্রেতারা হাটে এসেছেন।
বিক্রেতারা বলেন, আমরা কেউ কুষ্টিয়া, যশোর, জামালপুর, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু বিক্রি করতে এ হাটে এসেছি। প্রতি বছর আমরা গরু নিয়ে এ হাটে এসে ভালো সাড়া পাই। ইতোমধ্যে কেউ কেউ একটি-দুটি গরু বিক্রি করেছি। আশা করছি, এভাবে বাজার থাকলে আমরা ঈদের দু-একদিন আগেই গরু বিক্রি শেষ করে চলে যেতে পারব।
হাজারীবাগ পশুর হাটে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, গরু রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। তবে অনেক খুঁটি ফাঁকা আছে। গরু বিক্রেতারা বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে বাজার জমে উঠলে গরু বিক্রি বাড়বে। প্রথম দিন তাই বাজারে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি।
শনিরআখড়া ও শ্যামপুর পশু হাট ঘুরে যাত্রাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, কুরবানির পশুতে ভরে উঠেছে শনিরআখড়া ও শ্যামপুর পশুর হাট। তবে বিক্রি জমেনি। বিক্রেতা ও ইজারাদারের প্রত্যাশা শুক্র, শনি ও রোববার জমজমাট বিক্রি হবে। সারুলিয়ার স্থায়ী হাট ও আমুলিয়া মডেল টাউনের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে ডেমরা প্রতিনিধি জানান, এ দুটি হাটে ছোট গরু বেশি উঠেছে। গরুতে হাট ভরে উঠলেও বিক্রি জমেনি। স্বল্প পরিসরে কিছু বিক্রি হচ্ছে।