‘এক মাসের বেশি সময় ধরে গোলাগুলি চললেও এতদিন ভয় লাগতো না। কয়েকদিন আগে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক রোহিঙ্গা যুবক মারা যাওয়ার পর এখন আতঙ্কে আর ঘুমাতে পারি না।
ঘুমেও এখন গুলির শব্দ শুনতে পাই!’
এভাবেই আতঙ্কের কথা জানালেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু পশ্চিমকূল গ্রামের বাসিন্দা মো. রফিক উদ্দিন (২৩)। শুধু রফিক নন, পার্শ্ববতী দেশ মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দে গত মাসখানেক সময় ধরে সীমান্ত এলাকার বেশির ভাগ মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।
সীমান্তের বাসিন্দা রফিক জানান, গ্রামের মসজিদে ইমামতি করেন তিনি। ঘুম তো দূরের কথা শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, রাতের বেলায় ঘুম তো আসেই না। চোখে একটু একটু ঘুম এলেই গুলির শব্দে আবার ভেঙে যায়। গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে বার বার চমকে ওঠে আমাদের ছেলেমেয়েরা।
বান্দরবানের ঘুমধুম পশ্চিমকূল গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ নুর আহম্মদ বলেন, ১৯৭১ সালেও হয়তো আমার বাপ-দাদারা এরকম গোলাগুলির শব্দ শোনেনি। আমি আমার জীবদ্দশায় এ ধরনের পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। গোলাগুলির শব্দে আশপাশ কেঁপে ওঠে।
তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। ঘুমাতে পারছি না অনেকদিন। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। কখন যে এই দুর্দশা থেকে রেহাই পাবো, ভালো করে ঘুমাতে পারবো জানি না!
নুর আহম্মদের মতো এলাকাবাসীর প্রশ্ন কখন শান্ত হবে মিয়ানমার। আবার কখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন তারা।
রফিক উদ্দিন জানালেন, এখন পুরো এলাকাজুড়েই আতঙ্ক। গত কয়েক দিনে উত্তর পাড়া, কোনার পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় অনেকগুলো গোলা এসে পড়েছে। মর্টার শেল এসে পড়াতে এক রোহিঙ্গা যুবক মারা গেছেন। বাংলাদেশি এক চাকমা যুবকের পা উড়ে গেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না রফিক।
৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ
ঘুমধুম সীমান্তের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে থাকা ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কথা ভাবছে প্রশাসন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে মিয়ানমারে গোলাগুলি চলছে। এতে সীমান্ত এলাকার মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। বিষয়টি বিবেচনা করে সীমান্ত এলাকার অন্তত ৩০০ পরিবার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ওই ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে এনে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখার পরিকল্পনা চলছে। সোমবার এসব বিদ্যালয় ও এলাকাগুলো জেলা প্রশাসক পরিদর্শন করে এখানকার সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানান ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী জানান, ঘুমধুম এলাকার মানুষকে কীভাবে নিরাপদে রাখা, তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। পরিস্থিতির বিবেচনা করে যেকোনো সময় আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা ঘুমধুম এলাকাটি আমি পরিদর্শন করেছি। লোকজনকে সরিয়ে এনে কোথায় রাখা যাবে সেটা দেখছি।
এর আগে একদিনের নোটিশে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৩৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।