রাজনীতি

জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার চায় পুলিশ বাহিনী তাদের মানবিক কাজের মাধ্যমে জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করবে। তিনি প্রতিটি থানায় ‘পরিসেবা ডেস্ক’ এবং গৃহহীন মানুষের জন্য পুলিশ আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ আহবান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ জনগণের সেবক হবে এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। মানুষ পুলিশের কাছে গেলে যে ন্যায় বিচার পাবে, সেই আত্মবিশ^াসটা যেন মানুষের মধ্যে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সারাদেশের প্রতিটি (৬৫৯) থানায় ‘সার্ভিস ডেস্ক’ উদ্বোধন করেন এবং গৃহহীন পরিবারের জন্য পুলিশের নির্মিত ৪০০টি বাড়ি হস্তান্তর করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পুলিশের এ দুটি মানবিক উদ্যোগের উদ্বোধনকালে তিনি পুলিশকে সততার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

জাতির পিতার সেই ঐতিহাসিক উক্তি ‘এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে হবে,’ উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমেই মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন করা যায় এবং এর মধ্যেই কর্মের সাফল্য নিহিত রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, যারা একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকে তাদের জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজেদেরকে অবাঞ্চিত মনে করে এবং শত নির্যাতনের মধ্যেও কোন প্রতিকার চাইতে পারেনা সেই মানুষগুলোর মধ্যে এটা আস্থা ও বিশ^াস ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তাদেরও যে নাগরিক অধিকার রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পরই থানাগুলো দুস্থ ও নির্যাতিতদের আইনি সহয়তা প্রদানের জন্য তাঁর সরকারের লিগ্যাল এইড সেল গঠন এবং এজন্য আলাদা ফান্ড প্রদানের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর উন্নয়নটা একদম তৃণমূল থেকেই শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরের লোকেরা যেন উন্নয়নের ছোঁয়াটা পায় সেই লক্ষ্য রেখেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও বক্তৃতা করেন। অতিরিক্ত আইজিপি ড.নুরুর রহমান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি মানবিক উদ্যোগ ‘সার্ভিস ডেস্ক’ এবং ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের উপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম, পীরগঞ্জ, রংপুর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভার্চুয়ালি পুলিশ সদস্য এবং উপকারভোগীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, রাজারবাগ, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এর সাথে সকল থানা, পুলিশ রেঞ্জ এবং পুলিশ লাইন সংযুক্ত ছিল।

ধর্ষণ, নির্যাতন অথবা অন্য যে কোনো অপরাধের শিকার নারীরা থানায় গিয়ে নিঃসংকোচে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।

এ জন্য দেশের প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে এই সার্ভিস ডেস্ক। যেখানে ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে।

একই সঙ্গে এসব সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে জেলা, রেঞ্জ ও পুলিশ সদরদপ্তর কঠোরভাবে মনিটরিং করবে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে এ সার্ভিস ডেস্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত এখান থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৪৭৬ জন নারী, ৩২ হাজার ২৮৬ জন শিশু, এক লাখ ৩৮ হাজার ৩২৫ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ৮১ জন প্রতিবন্ধীসহ মোট তিন লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধিদের সেবায় সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করায় নারীদের জন্য অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।

হেল্পে ডেস্কে যারা কাজ করবেন তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সময় প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রয়োজনে বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেবো।

তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশে থাকবেন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, সেই লক্ষ্যেই কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুপ্রশিক্ষিত একটা বাহিনী, যে বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে, মানুষের কল্যাণ করবে, মানুষের কাজ করবে, আমরা সেটাই চাই, সেভাবে আমরা একে গড়ে তুলতে চাই।’

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাষ্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি অনুষ্ঠানে সবাইকে পবিত্র রমযান উপলক্ষে মোবারকবাদ জানিয়ে বাংলা নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছাও জানান।

জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণের কল্যাণে কাজ শুরু করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে বলেছিলাম, কোন কুড়েঁঘর থাকবে না, আমরা একটা টিনের ঘর হলেও করে দিবো। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সেমিপাকা ঘর দিচ্ছি এবং উন্নতমানের জীবনযাপন যেন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, যার শুভ ফল সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়নটা গতিশীল হবে। মানুষের যখন থাকার জায়গা হয়, তখন সেটাই তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে মানুষের ভিতরে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়। সেটা তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়াবার, আত্মকর্মসংস্থান করবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *