জমি রেজিস্ট্রেশন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটদিনের মধ্যে নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (৯ নভেম্বর) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে জমি রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি কার্যক্রম সমন্বয় সাধনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরফলে জমির রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার আটদিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, এ সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দেশের মানুষ, সর্বসাধারণ, ইনভেস্টরদের একটা বড় রকমের রিলিফ দেবে, নতুন একটা অধ্যায় সৃষ্টি হবে এবং মামলা-মোকদ্দমা অনেক কমে যাবে।
তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে এর কার্যক্রম চলছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন (নামজারি) কীভাবে আরও কমর্ফোটলি করা যায়, মানুষের হয়রানি না হয়, সময় যাতে কম লাগে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ হবে, নামজারি এবং রেকার্ড সংশোধন অটোমেটিক হবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানার বিষয়টিও এ সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যেন জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রশন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রার অফিস করে। আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা অফিস বা সার্কেল ভূমি অফিস জমির নামজারির কাজ করে।
‘দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, এজন্য দীর্ঘসূত্রিতা ছিল। রেজিস্ট্রেশনে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল, যেকোনো জমি যে কেউ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারত। আবার মিউট্রেশনের ক্ষেত্রের ঝামেলা হত, দলিল পাওয়া যেত না, এলটি নোটিশ বোঝা যেত না, এ কারণে দীর্ঘদিন এগুলো পড়ে থাকতো। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসি ল্যান্ডের অফিসের মধ্যে ইন্টার অপারেটবল সফটওয়্যার থাকবে। বাংলাদেশের সব এসিল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অব রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসিল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেইজে ঢুকতে পারবে। ‘
তিনি বলেন, যখন কেউ জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবে, সাব-রেজিস্ট্রার আগের মতো সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে দেবে না, অনলাইনে এসিল্যান্ডের অফিস থেকে রেকর্ডস অব রাইটসের স্ট্যাটাস জানবেন। রেসপন্সিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই তথ্য জানানো হবে। তখন এসিল্যান্ডও জানবেন এ তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এলটি নোটিশ এমনভাবে লেখা ছিল যে অনেক সময় বোঝা যেত না। এখন ছোট ফরম করে দিয়েছি, সেটা পূরণ করলে সঙ্গে সঙ্গে এসিল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। জমি মিউটেশন করতে গেলে দলিল লাগে।
‘এতদিন বিধি যেটা ছিল দুটি দলিল করা হতো, যিনি দলিল করতে যান তিনি একটা পান, আরেকটা থাকে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে এখন থেকে তিনটি দলিল করতে হবে। একটা সাব-রেজিস্ট্রার, একটা এনকামমেন্ট এবং আরেকটি এলটি নোটিশের পাশাপাশি এসিল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। আর যেহেতু এসিল্যান্ড দলিল ও এলটি নোটিশ অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছেন, এ জমি তার কাছ থেকেই ভেরিফিকেশন করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সুতরাং এসিল্যান্ডের আর কিছুই লাগবে না, ওই সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সে মিউটেশন সম্পন্ন করে ফেলবেন। সর্বোচ্চ আটদিনের মধ্যে এসিল্যান্ড মিউটেশন করে দেবেন। ‘
তিনি বলেন, নামজারির জন্য আলাদা কোনো আবেদন করতে হবে না। আটদিনের মধ্যে নামজারি হয়ে যাবে। এসবের ম্যানুয়াল কপিও দেওয়া হবে। আমরা দেখছি জমির রেজিস্ট্রেশন করলেও অনেকে নামজারি করেন না।
এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পুরো দেশে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে হাতে লেখা যেসব তথ্য সেগুলো খু্ব পরিস্কার ছিল না। সাব-রেজিস্ট্রার নিজেও রেকর্ড অব রাইটস নিয়ে ক্লিয়ার থাকতেন না। যেকোনো দলিল নিয়ে রেজিস্ট্রশন করতে চাইলেই করে দিতেন, কিন্তু এখন আর সে পারবে না।
‘অনেকে রেজিস্ট্রেশন করে নামজারি করলেও রেকর্ড সংশোধন করেন না। এখন এসিল্যান্ডের দায়িত্ব থাকবে মাসিক প্রতিবেদন দেবে এডিসি (রেভিনিউ) এবং ইউএনওর কাছে কতটি নামজারি হল এবং কতটি রেকর্ড সংশোধন হল। রেকর্ড সংশোধন করাটা এসিল্যান্ডের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা করতেন না। এখন লালকালি দিয়ে এসিল্যান্ডকে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। আগে দলিল পেত না বলে অনেক সময় (নামজারি না করেও) বেঁচে যেতেন এখন আর সেটা হবে না। ‘
দেশের সব জমির রেজিস্ট্রেশন আর্কাইভ করার জন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ১৭টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি এটা খুব ভালোভাবে কাজ করছে।
পয়সা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো কাজ হয় না বলে প্রচলিত আছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন সেই স্কোপ নেই। রেকর্ড কারেকশন পর্যন্ত কোনো স্কোপ নেই।
‘আমাদের হিসাব হল, জমিকে কেন্দ্র করেই ৭৫ শতাংশ মামলা হয়। এটা হয়ে গেলে ৫০ শতাংশ মামলা কমে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রাও অনেকটা কমর্ফোট হয়ে যাবে, জমিজমা নিয়ে যে একটা টেনশন বা আনক্লিয়ার একটা সিনারিও এটা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। তহসিলদারের কোনো সম্পৃক্তা আর থাকছে না। ‘
নির্দিষ্ট সময় পর পর তহসিলদারদের রিপোর্ট দিতে হবে তার এলাকায় কোন লোক মারা গেছেন, জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যেন বাবা-মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত না হয়। উত্তরাধীকার সূত্রে জমির কে কতটুকু অংশ পাবে সেটাও এ সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও যাতে বাবা-মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।