ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান আলজারি জোসেফের রান ৮২। সেই জোসেফ যখন নিজের আসল কাজেও সফল হলেন, বল হাতে ফেরালেন তামিম ইকবালকে, বাংলাদেশের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান তখন ৬৯! টপ অর্ডারের করুণ চিত্র ফুটে উঠছে এতেই।
এরপর অবশ্য এ দিন আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তবে স্বস্তির সুযোগ তাতে খুব একটা নেই। ফলো অন এড়ানো যে এখনও বেশ দূরের পথ!
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১০৫। ফলো অন এড়াতে প্রয়োজন আরও ১০৫। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৪০৯।
প্রথম চার ব্যাটসম্যানের আত্মহত্যার পর বাংলাদেশের লড়াইয়ের আশা বেঁচে আছে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটিংয়ে।
ব্যাটিংয়ের আগে বোলিংয়েও ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। ৫ উইকেটে ২২৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় চারশ। সপ্তম উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন জশুয়া দা সিলভা ও আলজারি জোসেফ। জশুয়া করেন ৯২, জোসেফ ৮২। এর আগে এনক্রুমা বনার ফেরেন ৯০ রানে।
প্রায় দেড়শ ওভার ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রায় চোখের পলকেই। দুটিই নেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল।
অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যাকে এই টেস্টে নেওয়া, সেই সৌম্য সরকার প্রথম ওভারেই আউট হন প্রশ্নগুলি আরও উচ্চকিত করে। সোজা বল ওয়ানডের মতো শট খেলতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোনো রান না করেই।
গ্যাব্রিয়েলের পরের ওভারেই বিদায় শান্তর। প্রথম বলে দারুণ এক অফ ড্রাইভে চার মারেন শান্ত। পরের বলটি গ্যাব্রিয়েল করেন আরেকটু ওয়াইড অব দা ক্রিজ, বলও রাখেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। আবার ব্যাট চালিয়ে দেন শান্ত। এবার ক্যাচ গালিতে।
জোড়া ধাক্কার জবাব তামিম ইকবাল দিতে শুরু করেন পাল্টা আক্রমণে। রাকিম কর্নওয়ালকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ান তিনি। জোসেফের পরপর দুই ওভারে মারেন চারটি বাউন্ডারি। পরে টানা দুই বলে বাউন্ডারিতে পাঠান গ্যাব্রিয়েলকেও।
মুমিনুলও একই পথের পথিক হয়ে খেলতে থাকেন শট। কাট, আপার কাট, গ্লাইড, যেন সীমিত ওভারের ম্যাচ!
তবে রোমাঞ্চের পথে হেঁটে দুই ব্যাটসম্যান দলকে নিতে পারেননি নিরাপদ ঠিকানায়। ৫৮ রানের জুটি ভাঙে মুমিনুলের বিদায়ে। কর্নওয়ালের জোরের ওপর করা ও একটু লাফানো বলটি ছেড়েও দিতে পারতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু ব্যাট চালিয়ে আউট হয়ে যান তিনি ২১ রানে। উইকেটে পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন জশুয়া।তামিমের ওয়ানডে ঘরানার ইনিংস শেষ হয় ওয়ানডের মতো শটেই। জোসেফের লেংথ বল ফ্লিক করেন তিনি মিড উইকেটে, এই শটের জন্যই সেখানে রাখা ছিল ফিল্ডার। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৪৪ রানের ইনিংস চটকদার বটে, তবে দলের জন্য খুব কাজে দেয়নি।
ব্যাটিং বিপর্যয়ে তখন বাংলাদেশ ধুঁকছে, উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ানরা উড়ছে।
দিনের বাকি ২০ ওভারের বেশি মুশফিক ও মিঠুন আর কোনো বিপদ হতে দেননি দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে। উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকেন দুজন।
বিশেষ করে, মিঠুন উইকেট আগলে রাখেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়। একাদশে ফেরা ব্যাটসম্যানের নামের পাশে দিন শেষে রান ৬। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বল খেলেছেন ৬১টি! সমান বল খেলে মুশফিক অপরাজিত ২৭ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২২৩/৫) ১৪২.২ ওভারে ৪০৯ (বনার ৯০, জশুয়া ৯২, জোসেফ ৮২, কর্নওয়াল ৪*, ওয়ারিক্যান ২, গ্যাব্রিয়েল ৮; আবু জায়েদ ২৮-৬-৯৮-৪, মিরাজ ৩৩-৯-৭৫-১, নাঈম ২৪-৩-৭৪-০, তাইজুল ৪৬.২-৮-১০৮-৪, সৌম্য ১১-১-৪৮-১)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩৬ ওভারে ১০৫/৪ (তামিম ৪৪, সৌম্য ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ২১, মুশফিক ২৭*, মিঠুন ৬*; গ্যাব্রিয়েল ৮-২-৩১-২, কর্নওয়াল ১১-৪-১৮-১, জোসেফ ৮-১-৩৪-১, মেয়ার্স ৫-১-১২-০, ওয়ারিক্যান ৪-১-১০-০)।