রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য হাহাকার চলছে। টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে টিকার সংকট। জেলা উপজেলা পর্যায়ে টিকার তথ্যও পাচ্ছে না মানুষ।
নতুন করে টিকার জন্য নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। আগে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কিন্তু নিবন্ধিতদের অনেকে উপজেলা পর্যায়ের। জেলা পর্যায়ে ছাড়া টিকা দেওয়া হচ্ছে না। আর যানবাহন ছাড়া নানা কারণে উপজেলার মানুষ জেলায় যেতে পারছেন না। দেশের ১২ লাখ মানুষ এখনো টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাননি। আদৌ তারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি না, তা অনিশ্চিত। গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে করোনার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা দেওয়া শুরু হয়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও একই কোম্পানির নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে টিকার কোনো বিকল্প নেই। সংক্রমণ রোধে টিকাই অন্যতম হাতিয়ার।
দেশে সীমিত সংখ্যক যে টিকা আছে তার মধ্যে রাজধানীর মাত্র তিনটি কেন্দ্রে গতকাল সোমবার সকাল থেকে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্র তিনটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। ফাইজারের ১ লাখের কিছু বেশি টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে। এই টিকা অতি শীতল তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। শুধু ঢাকা শহরেই এই টিকা দেওয়া হবে। এদিকে ঢাকার চারটি কেন্দ্র এবং প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই টিকা আছে ১১ লাখ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঐসব জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ টিকা নিতে জেলা পর্যায়ে যেতে পারছেন না।
এদিকে সংক্রমণ রোধে টিকাই অন্যতম হাতিয়ার হলেও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। একমুখী হয়ে থাকার কারণে বর্তমানে টিকার এই সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশ টিকা উত্পাদন করছে, শুরুতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য প্রশাসন ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্টের বিচক্ষণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদিও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে টিকা পেতে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে গণহারে টিকা দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে মাস্কও পরতে হবে। স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের মহাসচিব ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম চালানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও ভালো। তাই দ্রুত যাতে টিকা পাওয়া যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর বঙ্গভ্যাক্সসহ যে তিন কোম্পানির টিকা দেশে উত্পাদন হতে যাচ্ছে, সংশ্লিষ্টরা যদি শর্ত পালন করে, তাহলে সবার সহযোগিতায় দ্রুত টিকা উত্পাদন করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধের অন্যতম হাতিয়ার হলো টিকা। টিকা ব্যাপক হারে দেওয়া উচিত।
আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা মোকাবিলায় টিকা হলো অন্যতম হাতিয়ার। তবে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হলো টিকা। তাই গণহারে টিকা দিতে হবে। তিনি বলেন, ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সাহসী ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। কিন্তু সাহসী ভূমিকার ঘাটতি ছিল। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমএনসিএইচ) ডা. মো. শামসুল হক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে টিকা দিলে ভালো হতো। ১২ লাখ টিকার মধ্যে আগে নিবন্ধিত কত জন সাড়া দেন সেটি দেখা হবে, যদি অনেকের সাড়া পাওয়া না যায়, তাহলে টিকার জন্য নতুন করে নিবন্ধনের আহ্বান করা হবে।