ডিজেল ও করোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করেছে সরকার। গত ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই দাম বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়। এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা সারা দেশে ধর্মঘট শুরু করেছেন ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে।
এ অবস্থায় ডিজেল ও করোসিনের দাম কেন বাড়ানো হয়েছে- সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করতে বদ্ধপরিকর। সরকার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। বিগত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে ডিজেল/কেরোসিনের মূল্য অপরিবর্তিত ছিল এবং ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকায় সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসি লোকসানের সম্মুখীন হয়। ডিজেলে চলতি বছরের জুন মাসে লিটারপ্রতি ২.৯৭ টাকা, জুলাই মাসে ৩.৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১.৫৮ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫.৬২ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ১৩.০১ টাকা বিপিসির লোকসান হয়। সে হিসাবে গত সাড়ে পাঁচ মাসে সর্বাধিক ব্যবহৃত ডিজেলের ক্ষেত্রে বিপিসির মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১৪৭.৬০ কোটি টাকা। যা সরকার কর্তৃক ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করতে হবে। তাছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রায় ৩৩ হাজার ৭৩৪.৭৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় বিপিসি লোকসানে চলে গেলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে, যা জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
ব্যাখ্যায় বলা হয়, সার্বিক প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সরকার গত ৪ নভেম্বর থেকে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে। যদিও আশেপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য এখনও কম। গত ৩ নভেম্বর ভারতের কলকাতায় ডিজেলের মূল্য ছিল ১০১.৫৩ রুপি/লিটার বা ১২৪.৩৭ টাকা। তেলের ভেজালরোধে কেরোসিনের মূল্য ডিজেলের সমান রাখা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেলে সরকার পুনরায় ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।