ঢাকার কল্যাণপুরের নতুন বাজার এলাকায় বেলতলা বস্তিতে আগুন লেগে পুড়েছে ২০০ ঘর। তবে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
রোববার রাত পৌনে ৯টায় ওই এলাকার ৯ নম্বর বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বস্তির ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট রাত ৯টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আরও ইউনিট সেখানে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।
১৪টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই বস্তিতে একশর বেশি ঘর ছিল, তার প্রায় সবই আগুনে পুড়ে গেছে।
ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদ বলেন, “আমরা স্থানীয়ভাবে জেনেছি প্রায় ১২শ ঘর এই বস্তিতে রয়েছে। পুড়ে গেছে প্রায় ২শ ঘর।”
হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
বস্তিটির পথ দুর্গম হওয়ায় আগুন নেভাবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যেতে বেশ সমস্যা হয়েছিল বলে জানান বাহিনীর মহাপরিচালক।
কীভাবে আগুন লেগেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তদন্ত না করে বলা যাবে না।
ঢাকার কল্যাণপুরের বেলতলা মাঠ সংলগ্ন ৯ নম্বর বস্তিতে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভালেও তার আগে শতাধিক ঘর পুড়ে যায় বলে স্থানীরা জানিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিঢাকার কল্যাণপুরের বেলতলা মাঠ সংলগ্ন ৯ নম্বর বস্তিতে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভালেও তার আগে শতাধিক ঘর পুড়ে যায় বলে স্থানীরা জানিয়েছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
আগুন নেভানোর পর পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে আহাজারি করছিলেন সর্বস্ব হারানো নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
তিনটি সেলাই মেশিন নিয়ে স্থানীয়ভাবে পোশাক তৈরির কাজ করেন বেবি আক্তার। তার সব কাপড় পুড়ে গেছে আগুনে।
“আগুনে আমার একটি মেশিন পুড়ে গেছে, অর্ডার করা বেশ কিছু পোশাক, নতুন কাপড়, নগদ টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
বেবি জানান, আগুন লাগার পর শিশুপুত্রকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি, আর বস্তিবাসীর সহায়তায় দুটি সেলাই বের করে আনেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করে বেড়ানো জাহাঙ্গীর আলম ২ হাজার টাকা ভাড়ায় বস্তির একটি ঘরে থাকতেন।
আগুনে তার গান-বাজনার সব যন্ত্র পুড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান বাসা থেকে বের হতে পারলেও ঘরে থাকা কিছুই বের করতে পারেনি।
কিছুদিন আগে কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা আক্তারের। তার কলেজের নতুন পোশাক, ব্যাগের সঙ্গে বই-খাতাও পুড়েছে।
“কলেজ যাওয়ার আমার স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিল,” মাকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন আসমা।
আগুন লাগার খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্টের মাঠ কর্মীরা ছুটে আসেন। প্রায় ৪০জন কর্মী আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের এবং তাদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেন।