আন্তর্জাতিক

তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ পেলেন সাহিত্যের নোবেল

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, যার দরদি ভাষার দ্ব্যর্থহীন লেখায় ফুটে উঠেছে ঔপনিবেশিকতার দুর্দশা আর শরণার্থী জীবনের বেদনার আখ্যান।

বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৮তম লেখক হিসেবে আবদুলরাজাক গুরনাহর নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি।

৭৩ বছর বয়সী গুরনাহর মোট দশটি উপন্যাস এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, যার একটি হল প্যারাডাইস অ্যান্ড ডিজারশন।

১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসের কাহিনী বিকশিত হয়েছে ২০ শতকের গোড়ার দিকে তানজানিয়ায় বেড়ে ওঠা এক বালকের গল্পকে কেন্দ্র করে।

মূলত প্যারাডাইস অ্যান্ড ডিজারশন বুকার জেতার পরই ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহর নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়াতে শুরু করে।

নোবেল জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, এত বড় একটি পুরস্কার, অসাধারণ সব লেখকদের পাশে তার নাম, এ তার বিশ্বাসই হতে চাইছিল না।

“আমি এতটাই বিস্মিত যে বিশ্বাস করার আগে নিজে কানে ওই ঘোষণা শোনা পর্যন্ত আমি সত্যি সত্যি অপেক্ষা করেছি।”

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, সত্যের প্রতি আবদুলরাজাক গুরনাহর যে নিষ্ঠা, ঘটনার অতিসরলীকরণে তার যে ঘোর আপত্তি, পাঠককে তা নাড়া দেয়।

“তার উপন্যাস গতানুগতিক ধারাবর্ণনার রীতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দৃষ্টির সামনে মেলে ধরে সাংস্কৃতি বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এক পূর্ব আফ্রিকাকে, যার সঙ্গে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের কোনো মিল নেই।

“তার চরিত্ররা নিজেদের আবিস্কার করে সংস্কৃতি থেকে সংস্কৃতি, মহাদেশ থেকে মহাদেশের মাঝে কোনো এক শূন্য রেখায়; যে জীবন তাদের ছিল, আর যে জীবন তাদের সামনে ভাঁজ খুলতে শুরু করেছে, তার মাঝে এক অবলম্বনহীন অস্তিত্বে তারা নিজেদের খুঁজে পায়; এই অনিশ্চয়তার কোনো নিদান হয় না।”

আবদুলরাজাক গুরনাহর জন্ম ১৯৪৮ সালে, তানজানিয়ার জানজিবারে, যে দেশ পর্তুগিজ, ওমান ও ব্রিটিশ শাসনে ছিল সাড়ে সাড়শ বছর। তার গল্পের অনেক চরিত্রের মত তিনি নিজেও একজন শরণার্থী হয়ে ১৯৬০ এর দশকে ইংল্যান্ডে পা রাখেন।
তার পরের জীবনের বড় একটা সময় তার কেটেছে কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে তিনি ইংরেজি আর পোস্ট কলোনিয়াল সাহিত্য পড়িয়েছেন।

১৯৮৬ সালে ওলে সোয়েনকার পর গুরনাহই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন।

এই লেখকের আশা, তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে হয়ত শরণার্থী সঙ্কট আর ঔপনিবেশিকতাবাদের দুষ্ট ক্ষত হয়ত আলোচনায় আসবে।

“এমন কিছু বিষয় থাকে, যার মধ্যে দিয়ে আমাদের প্রতিদিন যেতে হয়। বিশ্বের অনেক জায়গায় বহু মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে আঘাত পাচ্ছে, এ ধরনের বিষয়গুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি মানবিকভাবে দেখা দরকার।”

আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেন, যখন তিনি ইংল্যান্ডে আসেন, ‘আশ্রয়প্রার্থী’ বা এরকম শব্দগুলোর মানে তখন আজকের মত ছিল না। সেসব দিনে বহু মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিল, এক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছিল।

“কিন্তু ১৯৬০ এর সেই সব দিনের চেয়ে আজকের পৃথিবীতে সহিংসতা অনেক বেশি। ফলে যেসব দেশে জীবন নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তাদের ওপর চাপও অনেক বেশি। অবধারিতভাবে অনেক বেশি মানুষ এখন সেসব দেশে যাচ্ছে আশ্রয়ের আশায়।”

২০১৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে গুরনাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি নিজেকে একজন উত্তর ঔপনিবেশিক লেখক বলবেন, না বিশ্ব সাহিত্যের লেখক?

তার উত্তর ছিল: “এরকম কোনো অভিধাই আমি নিতে চাই না। অমুক লেখক বা অমুক ঘরানার লেখক- এরকম বর্ণনা আমি নিজেকে নিয়ে করতে চাই না।

“আসলে নিজের নামের বাইরে আমার পরিচয় দিতে আলাদা করে বলার মত কিছু আছে কি না, সে বিষয়েও আমি নিশ্চিত নই।”

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। গতবছর সাহিত্যে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কবি লুইস গ্লিক।

বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। পরের দুই দিনে ঘোষণা করা হয় পদার্থবিদ্যা আর রসায়নের নোবেল।

শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১১ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

এমনিতে প্রতিবছর স্টকহোমে অনুষ্ঠান করে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। সেখানে তারা বক্তৃতাও দেন।

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছরের মত এবারও পুরস্কার বিতরণের রাজকীয় সেই আয়োজন থাকছে না।

তারপরও নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের অনুপস্থিতিতেই এ বছর স্বল্প পরিসরে স্থানীয়ভাবে নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজনের আশা প্রকাশ করেছে ফাউন্ডেশন।

সে অনুষ্ঠান টেলিভিশন এবং নোবেল প্রাইজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলেও নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *