তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘ সতর্ক করে জানিয়েছে, দুই দেশের নিহতের চূড়ান্ত সংখ্যা বর্তমান থেকে দ্বিগুণ হতে পারে।
আল জাজিরা বলছে, তুরস্ক থেকে গত এক সপ্তাহে ২৯ হাজার ৬০৫ জনের নিহতের সংবাদ পাওয়া গেছে। সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭৪ জন।
গত সোমবার দুই দেশে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজার ১৭৯ জন নিহত হয়েছে। তুরস্কে নিহতদের কবর দেওয়ার মতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গণকবর দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে এর প্রমাণ মিলেছে। পরিখা খনন করে তার ভেতর মরদেহ রেখে মার্বেলের স্ল্যাব বসিয়ে মরদেহ কবর দেওয়া হচ্ছে বলে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
তুরস্কে আহতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ৮০ হাজার বলা হচ্ছিল। সিরিয়ায় আহতের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়।
এ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তুরস্ক ও সিরিয়ায় বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ। খাবারসহ জরুরি নানা পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে দুই দেশে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় ৮ লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত সংকটে রয়েছে।
তীব্র শীতে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দুই দেশের হাজার হাজার ভবন ভেঙে পড়েছে। তীব্র শীত ও তুষারপাতের কারণে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে করতে হচ্ছে। যেসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি সেসব এলাকায় এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ। তাদের জীবিত উদ্ধার করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তারপরও কিছু কিছু এলাকা থেকে জীবিত নারী-শিশু-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বশেষ হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে উদ্ধারকারীরা এক শিশুকে উদ্ধার করেছে। ভূমিকম্পের ১৫০ ঘণ্টার পর মেয়ে শিশুটি উদ্ধার হয়।
এদিকে, ন্যুজ হয়ে পড়া তুরস্কে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তাকে ইস্তাম্বুলের ভাদেত্তিন প্রাসাদে স্বাগত জানান এরদোয়ান।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালে দোহা ত্যাগ করেন থানি। দুই নেতার সাক্ষাতের একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে টুইটারে। সরকারি প্রতিনিধি দল নিয়ে তুরস্ক সফর করছেন আমির আল থানি।
দেশের দুর্গত পরিস্থিতিতে তুরস্কে খাবারের জন্য লুটপাট হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় লুটপাটের পাশাপাশি জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় দুটি প্রদেশ থেকে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান তুরস্কে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন লুটপাটকারীদের কঠোরভাবে দমনের পক্ষে বলে জানিয়েছেন তিনি।