ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে পরীমনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বোট ক্লাবের ববিষ্কৃত সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ। তিনি দাবি করেছিলেন, সেদিন পরীমনি জোর করে দামি মদ নিতে গেলে বাধা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে এই অভিনেত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে পরীমনি বলেছেন, তাকে জোর করে মদ খাওয়ানো হয়েছে।
সোমবার নাসির উদ্দিন গ্রেফতার হওয়ার পর রাতে বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমনি। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন এ চিত্রনায়িকা। সাংবাদিকরা নাসির উদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, এখন তো তার কিছু তো বলতে হবে তাই বলেছে, এটা কি কোনো কথা। এটা কি সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাকে হিট করা হয়েছে। চার দিন ধরে তার লোকজন দিয়ে আমাকে সরি বলানো হচ্ছে। কেন বলানো হচ্ছে। আমি চার দিন ধরে বুঝে গেছি।
আপনি মদের বোতল নিতে চেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন,
ভাই আমাকে তো মদ জোর করে দেওয়া হয়েছিল। আমার মুখে ব্যাথা পেয়েছি। থানায় দেখিয়েছি।
‘আমি সুবিচার পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। আমি পুরোটা চালিয়ে যেতে চাই। আমি এখন পারব। আমি ভরসা পাচ্ছি।’
ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে কোথায় হাত দেওয়া হয়েছিল কিভাবে হাত দেওয়া হয়েছিল আর কি ডিটেইল বলব। এছাড়া কোনো ডিটেইল বলার নেই আমার।
অমিকে কিভাবে চেনেন এমন প্রশ্নে চিত্রনায়িকা বলেন, জিমির কলেজ থেকে ফ্রেন্ড। আমি তাকে এভাবে চিনি।
‘অমি ভাইয়া কি করে কোন পেশায় কাজ করে বিস্তারিত জানি না। আমি জানি সে একজন ব্যবসায়ী। সিঙ্গাপুর কি একটা ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।’
আইনের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আর ভরসা হারানো অবস্থায় নেই। আমার আইনের ওপর আস্থা রয়েছে। আসলে প্রথমে আমার মামলা নেওয়া হয়নি। এখন তো আমি সাহস পাচ্ছি। আমার তো ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
দর্শকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি তো ওনাদের জন্য কাজ করছি। ওনার আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে কয়েক ঘণ্টায় টের পেয়েছি। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এভাবে আমার পাশে থাইকেন।
‘আমি আসলে যাকে মা ডেকেছি, তিনি মনে হয় দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এখন আর আমি এতিম না। আমি এখন পারব। ’
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের আগে নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘তারা তো নিতে পারে না, তারা তো মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদের বাধা দিয়েছি, এটা নেওয়া যাবে না। এটা বিক্রিযোগ্য না। এরপরই সে (পরীমনি) উত্তেজিত হয়ে যায়। তারপর সে আমাকে গালাগালি শুরু করে। আমার স্টাফরা তাকে থামানোর চেষ্টা করে’।
‘তার সঙ্গে যে ছেলেগুলো ছিল, সে আমাকে চড় থাপ্পড় দেয়, ও (পরীমণি) গ্লাস মারলে আমার ঘাড়ে লাগে। এই অবস্থায় আমার সিকিউরিটিদের আমি নির্দেশ দেই, সিকিউরিটিরা তাকে নিয়ে যায়’ যোগ করেন নাসির। ওই সময় পরীমণি মাতাল ছিলেন বলে দাবি করেন নাসির।
এদিকে সোমবার পরীমণির করা মামলায় প্রধান আসামি নাসিরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। উত্তরার একটি বহুতল ভবন থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে তুহিন সিদ্দিকী অমি নাসির উদ্দিনের বন্ধু। গ্রেফতারদের মধ্যে অপর তিনজন কম বয়সী নারী। পুলিশ জানিয়েছে ফূর্তি করার জন্য তাদের ব্যবহার করতেন নাসির ইউ মাহমুদ।
এর আগে পরীমণিকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি কারও নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। সেখানে এই ঘটনার বিচার চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এর পরের দিন রোববার তিনি বনানীর বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে ঢাকা বোট ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন।
এদিকে ঢাকা বোট ক্লাবের আলোচিত ঘটনায় নির্বাহী সদস্যের পদ থেকে নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।