সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)-এর ২৮তম আসর। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের ১৯৮টি দেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের রাজা চার্লসসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। কপ-২৮ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা পরিবেশের দূষণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন।
কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল জাবের। সম্মেলনে কার্বন নির্গমনবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরিবেশে কার্বন নির্গমনের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী জ্বালানি তেল। তাই সম্মেলন সফল করতে আল জাবের কতটুকু সৎভাবে কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এর আগে আল জাবেরের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে গ্যাস ও অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনার নথি ফাঁস হওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিবিসি। এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে কপ-২৮ এর এক মুখপাত্র।
কপ-২৮ সম্মেলনে মোটা দাগে চারটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো জ্বালানির ব্যবহার স্থানান্তর (জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার)। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে ৬০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় কাজ করা।
এছাড়া সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি, জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, নাকি জলবায়ুর ওপর এসব শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। সম্মেলনে সেই বিভাজন আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ লক্ষ্যে সম্মেলন চলাকালীন একটি চুক্তি করতে চায় এই তিন দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে একটি চূড়ান্ত তহবিল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে এর খসড়া তৈরি হয়েছে। সম্মেলন চলাকালীন সেই খসড়া অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হবে।
কপ-২৮ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল স্টকটেক নিয়েই মূল আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গ্লোবাল স্টকটেকে মূলত সম্মেলনের সদস্য দেশগুলো নিজেদের ক্ষেত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কী কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে প্যারিস চুক্তির সামগ্রিক বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হয়েছে সেটিও মূল্যায়ন করা হবে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কপ-২৮ সম্মেলনে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনকে ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কাজ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাতিল করারও সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বন্ধ করতেও উদ্বুদ্ধ করা হবে।
কপ-২৮ সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজের (জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অপরিবর্তনীয় ক্ষতি) বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সংক্রান্ত তহবিলের অগ্রগতি বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। কারণ এ ধরনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য উন্নত দেশগুলো নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে তহবিল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি চুক্তি হয়েছিল গত বছরের কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলনে। সে সময় দুই বছরের মধ্যে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।