উত্তর আয়ারল্যান্ডের বালিমিনা শহর টানা দ্বিতীয় দিনেও রীতিমত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, গাড়ি ও বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাটি শুরু হয় সোমবার, এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে ঘিরে হওয়া একটি বিক্ষোভ থেকে।
পুলিশ জানায়, এতে মঙ্গলবার রাতেও ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। এ নিয়ে দুই দিনে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা পেট্রল বোমা, ব্লকেড ভেঙে ফেলা ইট-পাথর ও ধাতব কাঠামো ছুঁড়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। পুলিশ জল কামান ও অপ্রাণঘাতী রাবার বুলেট দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ও উত্তেজনার সূচনা
এই সহিংসতার সূত্রপাত হয় সোমবার শহরটির ১৪ বছর বয়সি দুই কিশোর আদালতে হাজির হওয়ার পর। তাদের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। পরে শুনানিতে রোমানিয়ান ভাষায় অনুবাদক ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যদিও দুজনই আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তাদেরকে ২ জুলাই পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হয়েছে।
বর্ণবাদী ঘৃণা-অপরাধের আশঙ্কা
এদিকে সোমবার রাতের হামলায় চারটি ঘরবাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পুলিশ বর্ণবাদ-প্রসূত ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছে।
এক রোমানিয়ান নারী বলেন, তিনি নিজের বাড়ির জানালায় ব্রিটিশ পতাকা লাগিয়ে রেখেছেন, যাতে হামলার লক্ষ্যবস্তু না হন।
বেলফাস্ট টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা গেছে, একটি বাড়ির দরজায় ব্রিটিশ ও ফিলিপিনো পতাকার নিচে লেখা, ‘Filipino lives here’ অর্থাৎ ‘ফিলিপিনোরা এখানেই বসবাস করে’।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে সোমবার গ্রেফতারকৃত একজনও রয়েছে।
দাঙ্গা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
পুলিশ প্রধান জন বাউচার বলেন, ‘বালিমিনায় যেসব মূর্খতাপূর্ণ সহিংসতা ঘটেছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। ঘৃণা-প্রসূত আচরণ ও জনতার শাসন সমাজের বন্ধন ছিন্ন করে দেয়—এই আচরণ বন্ধ হতে হবে’।
একটি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, আরেকটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তা অসুস্থ হন ও বমি করেন। এদিন কয়েকটি গাড়িও আগুনে পুড়ে যায়। এর মধ্যে একটি গাড়ি উল্টে আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে।
কেবল বালিমিনাই নয়, বেলফাস্ট, নিউটাউনঅ্যাবি ও ক্যারিকফারগাস শহরেও পুলিশের ওপর বোতল, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
এ নিয়ে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী হিলারি বেন বলেছেন, ‘বালিমিনায় আবারও যে বেসামাল সহিংসতার দৃশ্য আমরা দেখলাম, তা উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’।
প্রেক্ষাপট
উত্তর আয়ারল্যান্ডে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনার সময় পুলিশ আক্রমণের শিকার হয়, যদিও ১৯৯৮ সালের শান্তিচুক্তির পর তিন দশকের সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে। তবুও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে স্থিতিশীলতা এখনো ভঙ্গুর।