কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নদ ও নদী তীরবর্তী বালুকাময় চরাঞ্চলে মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় চীনা ধানক্ষেত। অনুকূল আবহাওয়ায় অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর নদ ও গঙ্গাধর নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের অনেক জমিতে বন্যা পরবর্তী পলির পুরু স্তর জমায় সেখানে পরীক্ষামূলক সেচ নির্ভর বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। ফলাফল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু ওইসব নদ ও নদী তীরের কিছু এলাকায় পলি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ মাটিতে এখনো সাধারণ ধান চাষ কঠিন। তবে তা চিনা ধান চাষের উপযোগী।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবারে নারায়নপুর ইউনিয়নের উত্তর ঢাকডহর, চৌদ্দঘুরির চর, নুনখাওয়া ইউনিয়নের চরকাপনা, কালীগঞ্জের কুমেদপুর, বেরুবাড়ীর চর বেরুবাড়ী, বল্লভেরখাসের মাদারগঞ্জ, কচাকাটার তরিরহাট, কেদারের বিষ্ণুপুর, টেপারকুটি, কচারডারার এমন ১৬ হেক্টর জমিতে বিলুপ্তপ্রায় চীনা ধানের বীজ ছিটিয়েছেন কৃষক। অনুকূল আবহাওয়ায় অল্প খরচ ও কম পরিশ্রমে ভালো হয়েছে ফলন। কয়েকদিন পরে শীষ খড়ের রং ধারণ করলে ফসল কেটে ঘরে তুলবেন তারা।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই চিনা ধান না চিনলেও এক সময় চরাঞ্চলীয় এ জমিগুলোতে এর ব্যাপক চাষাবাদ হত। তখন চীনা সাধারণ চালের বিকল্প হিসেবে মানুষ রান্না করে খেত। ছোট আকারের ধান হওয়ায় বাজারে আতব চালের মত এর চাহিদা। তাই ধনী শ্রেণির মানুষের শখের পায়েস রান্নায় চীনা চালের কদর বেড়েছে। তাছাড়া শিশু খাদ্যে অন্যতম উপাদান এটি। ফলে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। অনেক সময় এ ফসল অগ্রিম বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে বাজারজাত করার কোন ঝুঁকি নেই কৃষকদের। শহর থেকে পাইকাররা গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মণ প্রতি চীনা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে কিনে নিয়ে যায়।
তরিরহাটের কৃষক আবু বক্কর জানান, এবার তিনি চার বিঘা জমিতে চীনা ধানের চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি চার থেকে পাঁচ মণ চীনা ধান পাবেন তিনি। এতে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত তার বিঘা প্রতি খরচ পড়বে মাত্র ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ চীনা ধান বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা দরে। বাজারমূল্য স্থিতিশীল অথবা এর চেয়ে বেড়ে গেলে তার মোটামুটি লাভ হবে।
নারায়ণ পুর ইউনিয়নে ঢাকডহর চরের কৃষক মোতালেব জানান, এবার চীনা ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগাম বন্যা না হলে ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এবার এ ফসলে তিনগুণ লাভের প্রত্যাশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, এবার উপজেলায় চীনার ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ১দশমিক ২ মেট্রিকটন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ফসল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আমরা চরাঞ্চলে চীনা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।