গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। রোববার দুপুরে গুলশানে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
রেজা কিবরিয়া বলেন, আমাকে সরানোর জন্য সে (নূর) এত অস্থির হয়ে গেল যে, ভোট ছাড়া সে সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিল। আমাদের যে সংবিধান আছে সেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে এই কাজটা করা সম্ভব। আহ্বায়ক বা সভাপতি সরাতে ৮১ জনের ভোট প্রয়োজন হয়। এছাড়া ভোটের আগেও তারা কিছু কাজ করেছে। তারা মিথ্যা স্বাক্ষর নিয়েছে। যারা সই করেননি তাদের সই ওখানে রয়েছে। সেজন্য আমরা ভুয়া স্বাক্ষর ও অনিয়মের মধ্যে ভোট গ্রহণের বিষয়ে মামলা করব। নুরুল হক, রাশেদ খান ও শাকিল-উজ জামানের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হবে। রেজা কিবরিয়া বলেন, তাকে সরানোর জন্য যে ভোট হয়েছে তাতে ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন সই করেছেন। বাকিরা সইও করেননি। আর আহ্বায়ককে অপসারণে কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ জনের ভোট দরকার। এটা করা হয়নি। তারপর আগের রাতে ভোট করা হয়েছে।
রেজা কিবরিয়া রোববার রাতেই পূর্বকর্মসূচি অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তিন সপ্তাহ পরে দেশে ফিরে আসবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি দেশে ফেরার পর বড় মিটিং করব। বিভিন্ন জেলা থেকে আমাকে ফোন করছে তারা আমাদের সঙ্গে আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, দলের নেতৃত্ব আমার কাছেই আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, একটা লোকের জন্য আজকে দলের এই অবস্থা। আমি মনে করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দলে অনেক ভালো ভালো লোক আছেন এবং তারা দলটাকে বাঁচাতে পারবে।
রেজা কিবরিয়া বলেন, এখন সবাই জানে যে মোসাদের একজন এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের দুবাইতে মিটিং হয়েছে। দুবাই ও শারজাহর মাঝখানে একটি কফিশপে তাদের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া দুবাইতে যে গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে গেছে সেই চালক আমাকে এই বিষয়ে বলেছে। বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতও বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। ১৮ জুন আমার বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সামনে এ কথা স্বীকার করেছে নূর। আমাদের প্রবাসী অধিকার পরিষদ থেকে অনেক টাকা আসে। সেই টাকা কোথায় যায়, কে নেয় তার কোনো টাকার হিসাব সে দিতে চায় না। সেই মিটিংয়ের পর নূর খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল।
রেজা কিবরিয়া বলেন, সে জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দেখা করেছে। সে মনে হয় ওদের মতো হতে চায়। মন্ত্রী হবে, কিছু টাকা-পয়সা বানাবে। এতেই সে সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশের যুব সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মাটি করে, বিক্রি করে সে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। আমার পাশে বসে আছেন সিনিয়র নেতাকে (আমিন আহমেদ আফসারী) সে বলেছে, সরকারের এই নির্বাচনে গেলে কেমন হয়। সরকার দুই কোটি টাকা দেবে নির্বাচনের জন্য। ওকে এক কোটি টাকা দেবে।
বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র নিয়ে নূরের অভিযোগের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, বিএনপি একটা ঠুনকো দল নয় যে, আমার কথায় ভেঙে যাবে। আমি মনে করি বিএনপি ভাঙলে একটা দল উপকৃত হবে, সেই দলটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো সুবিধা করে দিতে চাই না।
নূরকে বিশ্বাসঘাতক বলবেন কিনা জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘অফকোর্স সে বিশ্বাসঘাতক। সে একটা প্রতারক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন আহমেদ আফসারী, আবদুল মালেক ফরাজী, সহকারী সদস্য সচিব শেখ খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা জিসান মহসিন ও শাহাবুদ্দিন শুভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নুরুল হক নূর বলেন, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সদস্যের সঙ্গে আমার কোনো বৈঠক হয়নি, কোনো অর্থ পাইনি। এসব উনার (রেজা কিবরিয়া) মনগড়া কথা। পুরানা পল্টনে জামান টাওয়ারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নূর বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়কের কার্যক্রমে আমাদের অনাস্থা ছিল। সেটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অপসারণ করেছি। ১০ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সেই কাউন্সিলে গণঅধিকার পরিষদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।
তিনি বলেন, শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচজন সদস্য এর বিরোধিতা করেছেন এবং দুজন সদস্য ভোটদানে বিরত থেকেছেন।
তিনি বলেন, দলের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সম্মেলন পর্যন্ত আর কোনো কথা বলব না। এসব নিয়ে জবাব দিতে গেলে ইমেজ নষ্ট হয়।