খেলাধুলা

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার এইটের খুব কাছে বাংলাদেশ

ব্যাটিংয়ে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। তার হাফ সেঞ্চুরি, তানজিদ হাসান তামিম ও জাকের আলীর ব্যাটের রানে বাংলাদেশ পায় ভালো সংগ্রহ।

কিন্তু একটা সময় অবধি বেশ ভালোভাবেই লড়াইয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। তবে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রিশাদ হোসেন। শেষ অবধি জয় পেয়েছে তার দলও।
বৃহস্পতিবার আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে তারা। পরে ওই রান তাড়া করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানের বেশি করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। এই জয়ে সুপার এইটের খুব কাছে চলে গেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে দুই জয় পাওয়ার পর শেষটিতে নেপালকে হারাতে হবে তাদের।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে তিন রান নেয় বাংলাদেশ। পরের ওভারেই নেদারল্যান্ডস বোলিংয়ে নিয়ে আসে আরিয়ান দত্তকে। আগের ম্যাচের একাদশে একটি বদল এনে তাকে ঢুকিয়েছিল ডাচরা। তাদের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে স্রেফ দুই বল দরকার হয় আরিয়ানের।

যদিও তাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দায়ই বেশি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি, ৩ বলে করেন ১ রান। শান্তর বিদায়ের ওভারে আসে স্রেফ ২ রান। পরের ওভারে গিয়ে হাত খোলেন তানজিদ হাসান তামিম। একটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান তিনি।

কিন্তু পরের ওভারে আবার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার আরিয়ানের বলে সুইপ করেন লিটন। কিন্তু অনেকটুকু দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন এঙ্গেলব্রেখট। এরপর দারুণ জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও তানজিদ হাসান তামিম।

তারা দুজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক। এই ম্যাচের আগে অনেক কথা হয়েছিল সাকিব আল হাসানের অফ ফর্ম নিয়ে, রানে ফেরেন তিনি। তাদের ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি ভাঙে পল ভ্যান মেকেরিনের বলে তানজিদ ফিরলে। বাতাসের বিপক্ষে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন বাস ডি লিডির হাতে। ২৬ বলে পাঁচটি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তানজিদ।

উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারিও কম আসতে থাকে। এর মধ্যে ১৫ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে যান তাওহীদ হৃদয়। টিম প্রিঙ্গেলের বলে বোল্ড হন আগের দুই ম্যাচে দারুণ করা এই ব্যাটার।

উইকেটে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। তবে ১৭তম ওভারে গিয়ে ১৬ রান তোলেন টিম প্রিঙ্গেলের বলে। যদিও ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফন মেকেরিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দেন তিনি। ২১ বলে সাজঘরে ফেরত যান ২৫ রান করে।

৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০ ও বিশ্বকাপে ১৭ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন সাকিব। শেষ অবধি উইকেটে থেকে দলকে ভালো সংগ্রহও এনে দেন তিনি। জাকেরের সঙ্গে মিলে শেষ দুই ওভারে আনেন ২৬ রান। ৯ চারে ৪৬ বলে ৬৪ রান করেন সাকিব। ৭ বলে ৩ চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন জাকের।

রান তাড়ায় নামা নেদারল্যান্ডসের সামনে মোস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে আসে বাংলাদেশ। তাদের অবশ্য প্রথম উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তার বলে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পয়েন্টে মাইকেল লেভিটের ক্যাচ নেন তাওহীদ হৃদয়। ১৬ বলে ১৮ রান করে ফিরে যান লেভিট।

পরের ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দেন ম্যাক্স ও ডাউড। ফলো থ্রুতে থাকতেই ১৬ বলে ১২ রান করা ব্যাটারের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তানজিম। দুই ওভারে দুই উইকেট হারানোর পর ডাচদের হয়ে প্রতি আক্রমণ শুরু করেন বিক্রমজিত সিং। সাকিবকে টানা দুই বলে ছক্কা হাঁকান তিনি, বাউন্ডারি আসে আরও।

রিশাদ-সাকিবকে দিয়ে যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন শান্ত বোলিংয়ে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে এত বছর পর তিনিই বল হাতে এনে দেন স্বস্তি। তার বলে এগিয়ে এসে খেলতে যান, বল টার্ন করে বাইরে চলে যাচ্ছিল। ধরে দারুণভাবে স্টাম্পিং করেন লিটন।

বিক্রমজিতকে ফিরিয়েও অবশ্য স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছিল না। এবার স্কট এডওয়ার্ডস সঙ্গী হন এঙ্গেলব্রেখটের। তাদের দুজনের জুটিতে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। তার ১৫তম ওভারেই মূলত বদলে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

চতুর্থ বলে রিশাদ ফেরান এঙ্গেলব্রেখটকে। তার বলে তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো তানজিমের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ৩৩ রান করা ডাচ ব্যাটার। ওই ওভারের শেষ বলে স্টাম্পিং হন বাস ডি লিডি।

হুট করে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নেদারল্যান্ডসের জন্য শেষ ভরসা ছিলেন অধিনায়ক এডওয়ার্ডস। সুইপ করতে গেলে তার ব্যাটের আগায় লেগে শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো জাকেরের হাতে ক্যাচ যায়। তিন চারে ২৩ বলে ২৫ রান করে আউট হন এডওয়ার্ডস। ওই ওভারে স্রেফ এক রান দেন মোস্তাফিজ।

নিজের পরের ওভারে এসে আরও এক উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ৩ বলে ২ রান করা ভ্যান ভিকের ক্যাচ নিজেই নিয়ে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। যদিও শেষ অবধি সেটি করতে পারেননি। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে নিজের স্পেল শেষ করেন রিশাদ।

১৯তম ওভারে এসে আরও একবার দারুণ বোলিং করেন মোস্তাফিজ। দেন স্রেফ ৩ রান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট পান তিনি। শেষ ওভারে তাসকিন ৭ রান দিয়ে তুলে নেন এক উইকেট। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে দুই উইকেট পান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *