জাতীয়

প্রকৃতিকে ভাবলেই কমবে মানসিক চাপ

সুস্থতার জন্য তেমন কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না।

আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ যেন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সময়ের অভাবে প্রকৃতিতে বেরিয়ে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব না হলেও, আশার খবর হচ্ছে প্রকৃতির কোলেই যেতে পারেন শুধুমাত্র কল্পনার মাধ্যমে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতি নিয়ে কল্পনা করলেও মানুষের শরীর ও মনে প্রশান্তি নেমে আসে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল সাইকোলজি’তে।

প্রকৃতির কল্পনায় আসে প্রশান্তি

ফিনল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ টার্কু’র এই গবেষণার বরাত দিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের একটি প্রারম্ভিক কোর্সে অংশগ্রহণকারী ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে দুটি পরিবেশ কল্পনা করতে বলা হয়।

একটি প্রাকৃতিক এবং আরেকটি শহুরে।

গবেষকরা দেখতে পান যখন অংশগ্রহণকারীরা প্রাকৃতিক পরিবেশ কল্পনা করছিলেন তখন তাদের হৃদস্পন্দনের গতি ধীর হচ্ছিল, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম সক্রিয় হচ্ছিল। আর তারা নিজেদের আরও শান্ত ও স্বস্তিকর অনুভব করছিলেন।

অন্যদিকে, শহুরে দৃশ্য কল্পনা করার সময় তারা বেশি মানসিক ক্লান্তি ও চাপের অনুভূতি জানিয়েছিলেন।

বিজ্ঞান কী বলছে ?

এই গবেষণার পেছনে রয়েছে দুটি মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। একটি হল ‘স্ট্রেস রিডাকশন থিওরি (এসআরটি)’- যার ব্যাখ্যায় বলা হয়, মানব মস্তিষ্ক প্রকৃতির প্রতি একটি স্বাভাবিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। কারণ আমরা জৈবিকভাবে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েই বিবর্তিত হয়েছি।

অন্যটি হল ‘অ্যাটেনশন রিস্টোরেইশন থিওরি (এআরটি)’- যেখানে বলা হয়, শহুরে পরিবেশ মনোযোগকে ক্লান্ত করে ফেলে। আর প্রকৃতির পরিবেশ মনকে পুনরায় উজ্জীবিত করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৩০ সেকেন্ড প্রকৃতির কল্পনায় থাকলেও শরীরে ও মনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, কেবল গাছ, ফুল, পাখি— এই ধরনের প্রকৃতি সম্পর্কিত শব্দ দেখলেও একই রকম শান্তি অনুভব করা যায়।

কল্পনার প্রকৃতিতে কী থাকতে পারে?

গবেষণায় বলা হয়েছে, এই কল্পনার প্রকৃতি শুধু সবুজ গাছগাছালির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি হতে পারে ফুলের বাগান, ছোট পোকামাকড়, ঝরনা কিংবা পাহাড়ি পথ। প্রকৃতির প্রতি কারও সংযোগ যত গভীর, এই কল্পনার প্রভাব তত বেশি হয়।

দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে ব্যবহার করবেন?

কোনো কাজে বিরতির সময় ৩০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে হবে- একটা নদীর পাড়ে বসে আছেন, চারপাশে সবুজ গাছ, পাখির ডাক, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ।

মোবাইল ফোনের ওয়ালপেপারে রাখতে হবে প্রকৃতির ছবি, যেমন- ফুল, পাহাড়, বন, কিংবা সমুদ্র।

প্রকৃতি সম্পর্কিত শব্দ (যেমন- নদী, জলপ্রপাত, বন) দিয়ে নিজের জন্য একটি ‘শান্ত তালিকা’ তৈরি করা যায় যা চোখে দেখলেই মনে শান্তি আসে।

যাদের উদ্বেগ বা ‘ইনসোমনিয়া’ বা নিদ্রাহীনতার রোগ আছে, তারা প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক মিনিট প্রকৃতির কল্পনা চর্চা করতে পারেন।

গবেষণা থেকে শেখার বিষয়

টার্কু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা বলে দেয়, শান্তির জন্য প্রকৃতির কোল ছুঁতে হলে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে না। মনের ভেতরেই গড়া যায় সেই আশ্রয়।

কল্পনাও হয়ে উঠতে পারে মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *