প্রবাসীদের টাকা পাঠানো সহজ করতে ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জের সুবিধা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা যাতে আরও সহজে এবং বৈধভাবে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন, সেই সুবিধা সৃষ্টি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’সহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন দেশে আমাদের যারা কর্মরত শ্রমিক, তাদের অর্থ প্রেরণে যাতে সুবিধা হয়, সেই সুবিধাটা সৃষ্টি করে দিতে হবে।
“কারণ আমি জানি, অনেক জায়গায় তারা কাজ করে, কিন্তু সেখানে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকের সুবিধা তারা পায় না যে ব্যাংকের মাধ্যমে তারা টাকা পাঠাবে। তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির উপর।”
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের বেশি আসে প্রবাসী আয় থেকে। আর রপ্তানির পর এই রেমিটেন্সই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস।
তবে মহামারীর ধাক্কার পর ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে অনেক দেশই এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, ফলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণেও টান পড়েছে সাম্প্রতি সময়ে।
জুনে শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫.১২ শতাংশ কম।
রেমিটেন্স কমায় আমদানির বাড়তি মূল্য পরিশোধের চাপে দেশে ডলারের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত প্রধান এ মুদ্রার দাম এ কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এ অবস্থায় রেমিটেন্স বাড়াতে বৈধপথে দেশে টাকা পাঠানোর ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এর উপর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, বিদেশে এবং আমাদের বিরোধী দলেরও কিছু এজেন্ট আছে, তারা নানাভাবে মানুষকে উসকায়। যেখানে যেখানে আমাদের কর্মীরা কাজ করে, তাদের উসকায় যেন ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠায়।
“তাতে তাদের লাভ হয়।এই যে আমাদের শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থ, এই অর্থটা আসলে তারাই পকেটস্থ করে এবং তাদের কিছু টাকা দেশে পাঠায়।”
ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেটা নিরাপদ থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হয়তো ১/২ পয়সা বা ২/১ টাকা কম-বেশি থাকতে পারে, কিন্তু টাকাটা নিরাপদে তার ব্যাংকে জমা হয়, সেই ব্যাংক থেকেই তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে পারবে। বাকি টাকা তার ব্যাংকে জমা থাকবে।”
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “তাদের অর্থ প্রেরণের সুবিধার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক… বিভিন্ন দেশে যেখানে আমাদের শ্রমঘন দেশ, সেখানে বিভিন্ন শাখা অথবা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং ব্যাংকের সাথেও আলোচনা করতে হবে।
সেসব দেশে মানি এক্সচেঞ্জ খোলার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকটা কূটনৈতিক মিশনে আমাদের যে দূতাবাস আছে, তাদের একটা নির্দেশ দেওয়া… এটা আমরা আগে একবার করেছিলাম, কিন্তু এটা আরো ভালোভাবে করতে হবে।
“অন্তত একজন অফিসার নিয়োগ করে দেবেন সেখানে, আমাদের যারা শ্রমিক কল্যাণের জন্য কর্মরত, তারা, অর্থাৎ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করবেন। সেখান থেকে যেসব এলাকায় আমাদের শ্রমিকরা কাজ করে, তাদের জন্য একজন এজেন্ট নিয়োগ করে দিতে হবে।”
সরকার প্রধান বলেন, “যারা তাদের অর্থটা যথাযথভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা আমাদের অন্য শিডিউলড ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরণ করতে পারেন, তাদের টাকা প্রেরণের যে দুঃশ্চিন্তাটা, সেটা থাকবে না।”
মহামারীর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আশার শঙ্কা তৈরি হলেও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশকে ততটা ভুগতে হয়নি বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
প্রবাসীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তাদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করার কথাও তিনি বলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।