আন্তর্জাতিক

ফ্রান্সের ইসলামবিদ্বেষী নতুন আইনে যা রয়েছে

ফ্রান্সে মুসলিমবিরোধী নতুন আইনে পরোক্ষভাবে মুসলিম নারীদের ধর্মীয় পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ঘরোয়া ইসলামি শিক্ষায় কড়াকড়ি আনা হয়েছে।

বলা হয়েছে, শিশুদের বয়স তিন বছর হলেই বাধ্যতামূলক স্কুল পাঠাতে হবে। কোনোভাবেই ঘরোয়া শিক্ষা দেয়া যাবে না।

মূলত পারিবারিক পরিমণ্ডলে ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা বন্ধ করতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা, সভা-সমিতি ও ইসলামি কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সেগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

ম্যাক্রোর সরকারের সদ্য অনুমোদিত বিতর্কিত আইনটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলো।

আইনটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে বলে এর সমালোচনা করছেন ইসলামি পন্ডিত ও বিশ্লেষকরা। খবর এএফপি, বিবিসি ও ফ্রান্স ২৪।

বুধবার খসড়া আইনটির অনুমোদন দিয়েছে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মন্ত্রিসভা। সামনে কয়েক মাসে পার্লামেন্টের অধিবেশনে আইনটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করবেন ফ্রান্সের আইনপ্রণেতারা।

এরপর এটি চূড়ান্তভাবে পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফরাসি সরকারের বক্তব্য, ‘র‌্যাডিক্যাল ইসলাম’ তথা কট্টরপন্থী ইসলাম মোকাবেলার লক্ষ্যে আইনটি করা হয়েছে।

‘অ্যান্টি-সেপারেটিজম’ বিল শীর্ষক আইনটির পক্ষে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর বক্তব্য, ফ্রান্সের ‘ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ’র সুরক্ষায় ও ফরাসি সমাজ থেকে ‘কট্টর ইসলাম পন্থী’দের উৎখাত করতে আইনটি আবশ্যক।
তবে আইনটি মুসলিমদের টার্গেট তথা লক্ষ্যবস্তু বানাতে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফ্রান্স ও এর বাইরের বহু পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক।

তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার পর এটাকে এখন ‘রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার রক্ষার আইন’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

বিতর্কের মুখে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্স বলেছেন, এটি সুরক্ষার আইন। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে এ আইন নয়। চরমপন্থা থেকে মুসলিমদের এটি মুক্তি দেবে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, মসজিদ, সমিতি, সরকারি অফিস এবং স্কুলগুলোতে নজরদারি বাড়াতে আইনটি আনছে ফ্রান্স। তবে ৫০টি ধারার এ আইনে ‘ইসলাম’ বা ‘মুসলিম’ কোনো শব্দই উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া প্রত্যেক মসজিদকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হতে হবে, যাতে সহজে সেগুলোকে শনাক্ত করা যায়। মসজিদে বিদেশি ফান্ড নিষিদ্ধ হবে না। তবে সেটি ১০ হাজার ইউরোর বেশি হলে ঘোষণার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সরকারি অফিসসহ মার্কেট, সুইমিংপুল ও পরিবহন সেক্টরে ধর্মীয় পোশাক নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে নারীদের হিজাব পরার ওপর আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ হবে।

ম্যাক্রোঁর সরকার আরও বলছে, ঘৃণাসূচক বক্তব্য রোধে কঠোর ভুমিকা পালন করবে এই আইন। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অন্য ধর্মের কারও বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে পারবেন না মুসলিমরা।

ফরাসি সরকারের মতে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যায় এইসব ঘৃণাসূচক বক্তব্যই ভুমিকা রেখেছে। এজন্য দায়ী করা হয় প্যারিসের প্যানটিন জামে মসজিদের ফেসবুক পেজকে। মসজিদটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

যেসব স্কুল ইসলামিক মতবাদের প্রচার করে সে সবকেও এই আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও মুসলিম সঙ্গঠনগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করবে এই আইন। কোনও মেয়ের ভার্জিনিটি পরীক্ষা করলে চিকিৎসকদের জরিমানা করা হবে।

বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে বা বাইরে কাজের সময় ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ হবে পরিবহন কর্মী এবং সুইমিং পুল সুপার মার্কেট কর্মীদের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *