যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে বইমেলায় বোমা হামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগ থানায় জিডি করে।
তবে এসব হুমকি-আতঙ্কের প্রভাব পড়েনি মেলায়। বইপ্রেমী দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন আগের মতোই। মেলা ছিল জমজমাট। এদিকে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিন হওয়ায় পূর্বের মতো শিশু প্রহরের জন্য মেলার প্রবেশপথ উন্মুক্ত করা হয় বেলা ১১ টায়। নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডগ স্কোয়াড় দিয়ে তল্লাশি করা হয়। দর্শনার্থীদের প্রবেশ পথে কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে দায়িত্বপালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। ব্যাগ নিয়ে আগতদের চেক করে মেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। এতে বিরক্ত হননি কেউ। তারা জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। কারণ বইমেলাকে টার্গেট করে বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে জমজমাট শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের চরিত্রের সঙ্গে সময় কাটায় শিশুরা। বিকেল গড়াতেই দর্শনার্থীরা আসা শুরু করেছে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বিপরীতে স্থাপিত মঞ্চে শিশুরা চমৎকারভাবে আবৃত্তি করছে। সেই সুন্দর দৃশ্য অভিভাবকরা ভিডিও করছেন আর সন্তানের প্রতিভার প্রতিফলন পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকে বাবা মায়ের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত। বাবা-মায়েরাও তাদের সন্তানদের একটি সুন্দর স্মৃতি উপহার দেওয়া চেষ্টা করছেন। এরপাশেই একপ্রান্তে একদল আর্টিস্ট ছবি আঁকায় ব্যস্ত ছিলেন।
মেলারে শেষ সময় চলে আসায় ভিড় বাড়ছে। কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে, আবার কেউবা প্রিয়জনের হাত ধরে। তারা এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন।
বিক্রেতারা জানান, মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী আসছে, বিক্রিও বাড়ছে। শিশু-কিশোর-তরুণদের মতো প্রবীনদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
মেলায় আসা ষাটোর্দ্ধ ইমদাদুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষদিক থেকেই প্রতিবছর তিনি মেলায় আসেন। অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, সারা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকি কখন ফেব্রুয়ারি আসবে। আক্ষেপের সুরে আরও বলেন, মেলায় সেই আগের জৌলুস নেই। মানহীন লেখকের ভিড়ে ভালো বই পাওয়া দায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় আজ পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়াচ টাওয়ারগুলো থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকায় সেটি মনিটরিংও জোরদার করা হচ্ছে।
মেলায় দায়িত্ব পালনকারী একজন সহাকারী পুলিশ সুপার বলেন, দর্শনার্থীদের আতঙ্কের কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাই সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সবাই নির্বিঘ্নে বইমেলায় আসতে পারেন।
অপরদিকে এসব আতঙ্কের প্রভাব মেলায় পড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রকাশনীগুলো। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আছাদুজ্জামান বলেন, হুমকির বিষয়ে আমরা সেভাবে জানি না। আমাদের বিক্রি অন্য দিনের চেয়ে ভালো হচ্ছে।
পাঞ্জেরি প্রকাশনীর তাছলিমুর রহমান অন্তু বলেন, ছুটির দিন হিসেবে বিক্রি বেড়েছে। সময় গড়ালে আরও বাড়বে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আজকে যে উপচে পড়া ভিড়, মনে হয় না মানুষ আতঙ্কিত। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। ব্যাপক তল্লাশি করে সবাইকে মেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।