আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের মুখে একের পর এক অঞ্চল দখলে নিতে উঠেপড়ে লাগা তালেবান গোষ্ঠী এবার সহিংসতার মধ্যেই তিনমাসের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব রেখেছে। তবে এর পেছনে তারা জুড়ে দিয়েছে ৭ হাজার বন্দি তালেবান যোদ্ধকে মুক্তি দেওয়ার শর্ত।
বিবিসি জানায়, আফগান সরকারের এক আলোচক নাদের নাদেরি তালেবানের এই প্রস্তাবকে ‘মস্তবড় দাবি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে সরকার এই দাবির প্রেক্ষিতে কী করবে তা এখনও জানায়নি।
নাদেরি জানান, তালেবান নেতারা জাতিসংঘের কালো তালিকা থেকেও তাদের নাম বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
বিবিসি’র এক সংবাদদাতা বলছেন, গতবছর আফগান সরকার পাঁচ হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগই রণক্ষেত্রে ফিরে গিয়ে দেশে সহিংস পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে বলেই ধারণা করা হয়।
মার্কিন ও নেটো বাহিনীর সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করার পর থেকে আফগানিস্তানে তালেবান সংঘাত বেড়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে তালেবান গোষ্ঠী আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করলেও আফগান বাহিনীর ওপর হামলা বন্ধ করতে রাজি হয়নি। আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের আলোচনায় অগ্রগতি থমকে আছে।
ওদিকে, তালেবান বন্ধ করছে না হামলাও। তবে বৃহস্পতিবার তালেবান বাদঘিস প্রদেশের কালা-ই-নাউয়ে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে বলে প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের বরাতে এক খবরে জানিয়েছে রয়টার্স।
খবরে বলা হয়েছে, আরও কোনও হামলা হওয়া ঠেকাতে বৃহস্পতিবার পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘অনির্দিষ্টকালের অস্ত্রবিরতি’ চুক্তি করেছে তালেবান। আদিবাসী নেতাদের মধ্যস্থতায় তালেবানের সঙ্গে এই চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশটির গভর্নর হুসামুদ্দিন শামস।
তিনি বলেন, “১০ আদিবাসী নেতা অস্ত্রবিরতির দায়িত্ব নিয়েছেন। সুতরাং তারা প্রথমে তালেবানের সঙ্গে কথা বলেন এবং তারপর স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই উভয়পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছেছে।” চুক্তির আওতায় তালেবান বাদঘিসের রাজধানী কালা-ই-নাউয়ের উপকণ্ঠে সরে যেতে রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে তালেবানের মুখপাত্র কোনও অস্ত্রবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, নিরীহ মানুষ হতাহতের ঘটনা এড়াতে তারা কালা-ই-নাউ শহর ছেড়ে গেছেন।
বাদঘিসের প্রাদেশিক কাউন্সিলের মুখপাত্র আব্দুল আজিজ বেক বলেছেন, “আফগানিস্তানে একমাত্র কালা-ই-নাউ শহরেই তালেবান অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে।” তবে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কর্মকর্তাদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তালেবান যোদ্ধারা বাদঘিসের সব জেলার দখল হাতের মুঠোয় নেওয়ার পর সেখানে তাদের অস্ত্রবিরতির এ খবর এল।
এর কয়েকদিন আগে তালেবান আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে। যদিও তাদের দাবি নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা যায়নি। আর আফগান সরকার এ দাবি প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তবে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে তালেবান যোদ্ধাদেরকে নানা জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পারাপার এলাকা দখলে নিতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া, অন্যান্য কিছু সূত্রের আনুমানিক হিসাবমতে, আফগানিস্তানের ৪শ’ জেলার এক তৃতীয়াংশের বেশি এখন তালেবানের হাতে।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানের স্পিন বলদাক সীমান্তে ওয়েশ-চামান সীমান্ত ক্রসিং দখলে নেওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে তালেবান বাহিনী।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সীমান্তের ‘পাকিস্তান-আফগানিস্তান ফ্রেন্ডশিপ গেইটের’ সামনে যোদ্ধারা সাদা কাপড়ে কালো অক্ষরে লেখা পতাকা ওড়াচ্ছে। এই ক্রসিংয়ের এক পাশে আফগানিস্তানের ওয়েশ শহর অন্যপাশে পাকিস্তানের চামান শহর অবস্থিত।
স্পিন বলদাক সীমান্তে ওয়েশ-চামান সীমান্ত ক্রসিং দখল নিয়েও বৃহস্পতিবার পরষ্পরবিরোধী খবর এসেছে। আফগান সরকার এই এলাকা পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করেছে। ওদিকে, তালেবানের দাবি, এ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ এখনও তাদের হাতেই আছে।
এর আগে আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং তালেবানের দখলে নেওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।তবে আফগান সরকার সে সময়ও ক্রসিংটি তাদের দখলে থাকারই দাবি করে।
এরও আগে ৭ জুলাই আফগানিস্তানের বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নাউয়ে তালেবান যোদ্ধারা ঢুকে পড়ে হামলা চালানোর পর তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করে আফগান বাহিনীকে শহরটি পুনর্দখল করতে হয়েছিল। এভাবে গোটা দেশজুড়েই আফগান বাহিনীকে তালেবানের অগ্রযাত্রা রুখতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।